শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > সাধু আন্তনীর তীর্থোৎসবে হাজারো ভক্তের ঢল

সাধু আন্তনীর তীর্থোৎসবে হাজারো ভক্তের ঢল

শেয়ার করুন

আজগর পাঠান
কালীগঞ্জ ব্যুরো ॥
গাজীপুর: ‘জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে আয়রে ছুটে আয়, মহান সাধু আন্তনী এলেন পানজোরায়’ এই গানের সুর, তাল ও ছন্দে আনন্দ মুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে কালীগঞ্জ উপজেলার পানজোরায় অনুষ্ঠিত হলো ঐতিহ্যবাহী মহান সাধু আন্তনীর তীর্থোৎসব।

গত শুক্রবার প্রায় ৮০ হাজার ভক্তের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয় মহান সাধু আন্তনীর তীর্থোৎসব। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ও বিদেশ থেকে খ্রিষ্ট ধর্মসহ অন্যান্য ধর্মের যারা সাধু আন্তনীর ভক্ত তারা এই পূণ্য ভূমিতে উপস্থিত হয়েছিলেন, সাধু আন্তনীর মধ্যস্থতায় ঈশ্বরের কাছে কৃপা যাচনা করতে। আবার অনেকে এসেছিলেন মনের বাসনা পূর্ণ হওয়াতে মানত পূরণ করতে সাধু আন্তনী এবং ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিতে।

পর্বীয় মহা খ্রিষ্টযোগে উপস্থিত ছিলেন ঢাকার আর্চবিশপ কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও সিএসসি, সহকারী বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস গমেজ, অবসরপ্রাপ্ত বিশপ থিয়োটনিয়াস গমেজ সিএসসি, কানাডা হতে আগত বিশপ খ্রিষ্টান, প্রায় ১০০ জন ফাদার, উল্লেখ্য সংখ্যক ব্রাদার-সিস্টারসহ প্রায় ৮০ হাজার খ্রিষ্টভক্ত।

নাগরী ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ও সাধু আন্তনীর তীর্থোৎসবের আহ্বায়ক ফাদার জয়ন্ত এস গমেজ বলেন, সাধু আন্তনীর পর্ব উপলক্ষে বিদেশ থেকেও প্রবাসী বাঙালিরা পানজোরায় এসেছেন। অন্যান্য ধর্মের আন্তনী ভক্তরাও এসেছেন আন্তনীর মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ নিতে।

তিনি আরো বলেন, বিগত ৯দিনে নভেনায় গড়ে পাঁচ হাজার আন্তনী ভক্ত উপস্থিত ছিলেন। প্রতিদিন দেড়শ খ্রিষ্টভক্ত পাপ স্বীকার করেছেন নভেনা চলাকালীন সময়। নভেনা ও পর্ব উপলক্ষে এক লক্ষ ২০ হাজার খ্রিষ্ট প্রসাদ বিতরণ করা হয়েছে। পাদুয়ার সাধু আন্তনীর তীর্থোৎসবের সময় মানুষ বিভিন্ন মানত করা ছাড়াও দেশে ও জাতির কল্যাণে প্রার্থনা করে থাকেন।

উপদেশ বাণীতে ঢাকার আর্চবিশপ কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও সিএসসি বলেন, সাধু আন্তনী ছিলেন জ্ঞানী, প্রজ্ঞাবান মানুষ। তিনি সাধারণ ভাষায় কথা বলতেন। তার কথায় জ্ঞান, গর্বের প্রকাশ ঘটত না। তিনি কার কী প্রয়োজন, শ্রোতাদের সেই অনুসারে কথা বলতেন, শিক্ষা দিতেন। তিনি বলেন, ‘মন্ডলীতে যাঁরা দীক্ষিত, তাঁরা প্রেরিত। আমরা যাঁরা খ্রিষ্ট বিশ্বাসী, যীশুকে গুরুরুপে গ্রহণ করেছি- আমাদের নিকট মন্ডলীর আহ্বান আমরা যেন প্রেরণ কর্মী হই। যীশু যা শিখিয়েছেন, তা যেন অন্যদের শিখাই।

ফাদার জয়ন্ত জানান, চট্টগ্রাম থেকে একজন মুসলিম আন্তনী ভক্ত বিগত আট বছর ধরে বিনামূল্যে একটি বাস ভাড়া করে চট্টগ্রাম থেকে খ্রিষ্টভক্তদের সাধু আন্তনীদের তীর্থে নিয়ে আসেন। তিনি মহান সাধু আন্তনীর মধ্যস্থতায় মানত করেন এবং তার মানত পূরণ হয়। এরপর থেকে তিনি হয়ে যান সাধু আন্তনীর একনিষ্ঠ ভক্ত। এছাড়াও ভক্তরা এখানে আসেন হারানো জিনিস ফিরে পেতে, চাকরির জন্য প্রার্থনা, নিঃসন্তান দম্পতির সন্তান চেয়ে প্রার্থনা, অসুস্থতায় নিরাময়, পরিবারে জন্য শান্তি, পরীক্ষায় ভাল ফলাফল, বিদেশ গমনসহ আরো অনেক প্রার্থনা ভক্তরা তীর্থোৎসবের সময় সাধু আন্তনীর মধ্যস্থতায় নিবেদন করেন।

আন্তনী ভক্তরা মানত হিসেবে নগদ টাকা, মোমবাতি, কবুতর, বিস্কুট, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি এনেছিলেন। অনেকে বাড়ি থেকে পানি নিয়ে আসেন। পানি আশীর্বাদ করে বাড়িতে নিয়ে যান। এই পানি পান করে অনেক অসুস্থ ব্যক্তি নিরাময়ও লাভ করে থাকেন। পানজোরা তীর্থোৎসবে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা মেহের আফরোজ চুমকী এমপি, ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট পংকজ গিলবার্ট কস্তা, সেক্রেটারি ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া, ঢাকা ক্রেডিটের ব্যবস্থাপনা পরিষদের অন্যান্য সদস্যগণ, প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিষদের সদস্যগণ। বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও, ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ, হাউজিং সোসাইটির চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরীফিকেশন, ঢাকা ক্রেডিটের নারী নেতৃবৃন্দ, নাগরী, তুমুলিয়া, মঠবাড়ি, ভাসানিয়া, দড়িপাড়া ও রাঙ্গামাটিয়া খ্রিস্টান ক্রেডিটের নেতৃবৃন্দগণ।

অনুষ্ঠানে প্রশাসনিক ব্যবস্থা ছিলো চোখে পড়ার মতো। সুষ্ঠ আইনি ব্যবস্থাপনায় কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সুশৃঙ্খল পরিবেশের মধ্য দিয়ে উৎসবটি পালিত হয়। তীর্থোৎসবের আহ্বায়ক ফাদার জয়ন্ত এস গমেজ তীর্থোৎসবে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করেছেন, প্রশাসন ও গণমাধ্যমকর্মীসহ সকলকেই ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন।

এ উৎসবে শুধু কাথলিক নয়; প্রটেস্টান, হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধসহ সকল ধর্মের ও মন্ডলীর আন্তনী ভক্তরা এসেছিলেন সাধু আন্তনীর আশীর্বাদ নিতে। চোখজুড়ানো আতিথেয়তা ছিলো নাগরীবাসীর। ভক্তদের মাঝে তারা খাবার বিতরণ করেছেন এতে করে দুরদুরান্তের আন্তনী ভক্তরা নাগরীবাসির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।