বিনোদন ডেস্ক ॥ সালমা হায়েক, বিশ্ব জুড়ে খ্যতিমান অভিনেত্রী। ছিপছিপে দেহবল্লরীর মেক্সিকান অভিনেত্রীর প্রাণোচ্ছল উপমহাদেশীয় দর্শকরা কী যেন একটা ঘরোয়া বিষয় খুঁজে পান। তাই সালমা হায়েকের সমাদরটা পশ্চিমাদের পাশাপাশি এ উপমহাদেশীয় চলচ্চিত্রপ্রেমিদের মাঝে কম নয় মোটেও।
সালমা হায়েক ১৯৬৬ সালের সেপ্টেম্বরের ২ তারিখে পৃথিবীতে আসেন। অস্কার বিজয়ী এই অভিনেত্রীর আজ জন্মদিন।
৪৭ বছরে পা রাখলেও সালমা হায়েক ধরে রেখেছেন তার তারুণ্য ও লাবণ্য। বিশ্বের লাখো তরুণের কাছে এখনও তিনি মোহনীয় কামনীয় অপরূপা।
মেক্সিকোর ওয়েল বুম টাউনে জন্ম নেওয়া সালমার পাঁচ বছর বয়সে প্রথম নায়িকা হওয়ার স্বাদ জেগেছিল। ‘৭১-এর দিকের কথা, স্থানীয় একটি সিনেমা হলে ‘উইলি ওঙ্কা অ্যান্ড দ্য চকোলেট ফ্যাক্টরি’ ছবিটি না দেখলে হয়তো সালমা হায়েক থেকে যেতেন আর দশজন মেক্সিকান সুন্দরীর তালিকায়। ‘উইলি ওঙ্কা অ্যান্ড দ্য চকোলেট ফ্যাক্টরি’ দেখার পরই ‘নায়িকাই হব’ ভাবনাটি চেপে বসে তাঁর মাথায়।
ছোট্ট সালমার স্বপ্ন আর সাধ বাস্তবে রূপ নেয় অনেক দিন পর। ১৯৮৯ সালে মেক্সিকান টিভি চ্যানেলে সোপ ওপেরা ‘তেরেসা’য় কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে দেশজুড়ে তারকাখ্যাতি পেয়েছিলেন সালমা। তেরেসায় পাওয়া তারকাখ্যাতি তাঁকে টেনে নিয়ে যায় হলিউডে। কিংবা বলতে পারেন ১৯৯১-এর দিকে ‘তেরেসা’ এবং মেক্সিকো দুটো ছাড়ারই সাহস জুগিয়েছিল সালমা হায়েককে। অবশ্য তাঁর মেক্সিকো ছেড়ে দেওয়াকে ভালো চোখে দেখেননি ভক্তরা। গুজব রটেছিল মেক্সিকোর প্রেসিডেন্টের সঙ্গে গোপন সম্পর্ক ছিল সালমার!
২৪ বছর বয়সে লস অ্যাঞ্জেলেসে ‘স্ট্রিট জাসটিস, দ্য সিনবাদ শো, নার্সেস, ড্রিম অন’-এর মতো সিরিজে কাজ করেন সালমা হায়েক। বুঝতে পারেন লাতিন আমেরিকার অভিনয়শিল্পীদের হলিউডে বেশ ঘাম ঝরাতে হবে। তার ওপর আবার ইংরেজিতে দুর্বলতা!
১৯৯২ সালে একটি টিভি টক-শোতে সালমা তাঁর হতাশার কথা তুলে ধরেন। তাঁর কপাল ভালোই বলতে পারেন। তা না হলে ওই টক-শোটি বিখ্যাত পরিচালক রবার্ট রডরিগুয়েজ আর তাঁর প্রডিউসার বউ এলিজাবেথ এভলিন কেন দেখবেন? টিভির পর্দায় সালমাকে দেখে মনে ধরেছিল রবার্ট রডরিগুয়েজের। পরে রডরিগুয়েজের ‘ডেসপেরাডো’তে অভিনয়ের মাধ্যমে হলিউডের মানচিত্র ভালোই চিনেছিলেন সালমা।
ভালো পারফরম্যান্সের পুরস্কার হিসেবে ‘৯৬-তে রডরিগুয়েজের আরেকটি ছবি ‘ফ্রম ডাস্ক টিল ডাউন’-এ অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। এরপর আর পেছন ফিরতে হয়নি তাঁকে। একে একে উপহার দেন ‘ফুলস রাশ ইন’, ‘ওয়াইল্ড ওয়াইল্ড ওয়েস্ট’, ‘৫৪’, ‘ফ্যাকাল্টি’ ‘ডগমা’, ‘টাইম কোড’, ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন মেক্সিকো’র মতো ছবি।
২০০০-এর আগেই সালমা হায়েক ভ্যানতানারোসা নামে একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান খুলে বসেন। এতেও বাজিমাত! তাঁর নির্মিত ‘এল কর্নেল ন তাইনি কুইন লি এসক্রাইব’ মেক্সিকো থেকে অস্কারে জমা দেওয়ার জন্য মনোনীত হয়। ২০০২ সালে তাঁরই প্রতিষ্ঠান থেকে নির্মিত ‘ফ্রিদা’ বক্স অফিস মাত করে। নাম ভূমিকায় অভিনয় করে তিনি প্রথম মেক্সিকান অভিনেত্রী হিসেবে একাডেমী অ্যাওয়ার্ডে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর মনোনয়ন পেয়ে যান।
পরিচালক হিসেবেও কম যাননি সালমা। ২০০৩ সালে ‘দ্য মেলাডোনাডো মিরাক্যাল’ পরিচালনা করে ডে টাইম অ্যামি অ্যাওয়ার্ডে অনবদ্য পরিচালকের বিভাগে মনোনীত হন। সব তো হলো, গানটা বোধ হয় বাদ পড়ল! নাহ্, সে পথও মাড়ালেন ২০০১ সালে একটি তাইওয়ান ম্যাগাজিনের করা জরিপে বিশ্বে ১০০ আবেদনময়ী নারীর তালিকায় অষ্টম হওয়া এই তারকা। ‘
ডেসপেরাডো’, ‘ফ্রিদা’, ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন মেক্সিকো’ তিনটি ছবিতে গানে গলাও দিয়েছেন হায়েক।
এত ব্যস্ততার মধ্যে সালমা হায়েক বেশ একা অনুভব করছিলেন। কয়েকজনের সঙ্গে প্রণয়ে জড়ানোর ঘটনা ঘটলেও মনে ধরেনি কাউকে। তবে ২০০৭-এ ফরাসি ব্যবসায়ী অঁরি পিনাল্টের সঙ্গে পরিচয়েই মন দিয়ে দেন। ২০০৯-এর দিকে এসে বিয়েটাও সেরে ফেলেন। এরপর তাঁর কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে মেয়ে ভ্যালেনতিনা পালোমা পিনাল্ট।
জীবনের প্রথম ক্যামেরার সামনে নগ্ন হতে গিয়ে অনেকণ কেঁদেছিলেন সালমা হায়েক। প্রথমে বুঝতে পারেননি তাকে কী করতে হবে। নগ্ন দৃশ্যে অভিনয় করতে হবে, এটা আগে থেকেই জানতেন। কিন্তু দৃশ্যটা কীভাবে ধারণ করা হবে সে সম্পর্কে মোটেও অবগত ছিলেন না। ভেবেছেন, আর দশটা দৃশ্যের মতোই এই দৃশ্যের শুটিং সেভাবে হবে না। কিন্তু সেটে গিয়ে লোকসম্মুখে নিজের পোশাক খুলতে কিছুটা অস্বস্তিবোধ করছিলেন। কিন্তু দেয়া কথা অনুযায়ী কাজ তো করতেই হবে।
সেদিনে স্মৃতি সম্প্রতি আউড়েছেন এভাবে-‘কষ্ট করে পোশাক খুলে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছি বটে কিন্তু চোখের সামনে ভাসছিল আমার বাবা-মায়েক মুখ। এই দৃশ্যটি যখন তারা দেখবেন তখন কি ভাববেন আমাকে, কিন্তু আদৌ কি তাদের পে দেখা সম্ভব হবে।’
চোখের পানি আর আটকে রাখতে পারলেন না। কখন যে কীভাবে দৃশ্যটি টেক করা হলো সেটা আর মনে নেই। কিংবা মনে করতেও চাননি তখন। সহশিল্পী অ্যান্টোনিও ব্যান্ডারাসের সঙ্গে ‘ডেসপারাডো’ ছবিতে বিছানার দৃশ্যে অভিনয় করেই কিন্তু সালমা নিজের অস্তিত্বের জানান দিয়েছিলেন সে সময়। ভাগ্যের শিকাও ছিঁড়েছিল তখন। সুপার-ডুপার হিট ব্যবসা করে ছবিটি। অবশ্য নতুন সালমাকে দেখতেই ভক্ত-দর্শকের আগ্রহ ছিল বেশি।
এরপর হরহামেশাই বিছানার দৃশ্যে দেখা গেছে তাকে। দৃশ্যের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পোশাক খুলতেও পরে আর আপত্তি করেননি। সময়ের স্রোতে ভেসে নিজেকে নিয়ে অনেক দূর এগিয়ে গেছেন।
এখন আর হুটহাট করে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। অবশ্য নিজেকে শৃঙ্খলিত করতেই এমন সিদ্ধান্ত। যে কারণে দীর্ঘদিন তাকে দেখা যায়নি কোনো ছবিতে। টুকটাক হলিউডি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে নিজের অস্তিত্ব জানান দিতেন। এবার আর ঘরে বসে থাকা নয়। সিদ্ধান্ত বদলে নিলেন। আবারো ফিরে যাবেন হলিউডের বুকে। তবে অস্তিত্ব বিলীন করে নয়।
২০১০ সালে মুক্তি পাওয়া ‘গ্রোন আপস’ ছবির দ্বিতীয় কিস্তি ‘গ্রোন আপস টু’ মুক্তি পেয়েছে সম্প্রতি। ‘ফিফটি ফার্স্ট ডেট’, ‘কিক’সহ বহু জনপ্রিয় ছবির অভিনেতা অ্যাডাম স্যান্ডলারের সঙ্গে এতে অভিনয় করেছেন তিনি। অ্যাডাম স্যান্ডলারের স্ত্রী এবং সন্তানের মায়ের ভূমিকায় দেখা গেছে তাকে।
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালো লাগে জনপ্রিয় হলিউড অভিনেত্রী সালমা হায়েকের। পরিবারের জন্য অনেক ছবির প্রস্তাব না করে দিয়েছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে সালমা হায়েক বলেছেন, , ‘আমি অনেক কাজের প্রস্তাব প্রত্যাখান করে দিয়েছি। কিন্তু এর জন্য আমার কোনো অনুশোচনা নেই। পরিবারের সঙ্গে থাকতে এবং পারিবারিক জীবন উপভোগ করতে ভালোবাসি আমি।’