স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ তিনি যতণ ছিলেন, ততণ তার কথা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনেছেন ওরা। পুরো হল রুম নিশ্চুপ। বিশ্বসেরা হার্টহিটার বলে যাচ্ছেন তার অভিজ্ঞতার কথা। ভক্তরা শুনে যাচ্ছেন শিষ্যের মতো।
শুনবেন নাই বা কেন। গুরুটা হলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। আর শ্রোতারা হলো তার চেয়ে ১০ বছরের ছোট ুদে ক্রিকেটার। চট্টগ্রাম এমএআজিজ স্টেডিয়ামে গতকাল সাবেক অধিনায়ককে কাছে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে গেলেন বয়সভিত্তিক খেলোয়াড়রা। পরিবেশটা হয়ে উঠেছিল আনন্দঘন।
অনুষ্ঠানে যারা এসেছিলেন কতই বা হবে বয়স তাদের। ১৪, ১৬ কিংবা ১৮। টিভি পর্দায় যারা সাকিবের খেলা দেখেছেন তারা এখন ব্যাট হাতে তার সামনে। কেউবা বলেই ফেললেন, ‘আপনার মতো ক্রিকেটার হলে মায়ের আপত্তি নেই।’
গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপো করে সাকিবের আসার খবরে ততণে সবাই জড়ো হয়েছেন জিমনেসিয়ামের ভেতরে। মাথায় ক্যাপ, হাতে ব্যাট নিয়ে সোজা বাড়ি থেকে চলে এসেছেন সাকিব ভক্তরা। বিকাল ৪টায় তার উপস্থিতিতে সবাই জোরে করতালি বাজালেন। এরপর ব্যাট উঁচিয়ে, কেউবা দাঁড়িয়ে তাকে সম্মান দেখান। মুগ্ধ হয়ে সাকিব তখন দৃশ্যগুলো দেখছিলেন। কথা প্রসঙ্গে সাকিব তরুণ ক্রিকেটারদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘যাই কিছু করো না কেন আত্মবিশ্বাসটা ধরে রাখবে। মনে রাখবে তোমাকে পারতেই হবে। তুমি পারবে।’
তিনি বলেন, ‘কোন কিছুতেই হতাশ হলে চলবে না। সামনে এগিয়ে যেতে হবে। কঠোর শ্রম দিয়ে কাজ করলে যে কোন অসাধ্যকে সাধ্য করা যায়। এই যেমন খেলার মাঠের কথাই ধরো না। অনেক কঠিন ম্যাচ কতো সহজে হাতের কবজায় নিয়ে আসা যায়।’
ক্রিকেট প্রসঙ্গে সাকিব বলেন, ‘অনুশীলন করতে হবে। অনুশীলন বাড়াতে হবে। কঠোর প্র্যাকটিসে থাকতে হবে। তাহলে ফর্মে থাকবে। একদিনে ক্রিকেটার হওয়া যায় না। তার জন্য অধ্যবসায় লাগে। চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়।’
খেলার মাঠের অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করে বিশ্বসেরা এই রাউন্ডার বলেন, ‘ধৈর্য হারাইনি কখনও। ভাল খেলাটা দিয়ে গেছি। কখনও সফলতা পেয়েছি। কখনও পাইনি। তবে না পেলে সেখান থেকে শিা নিয়ে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সাফল্য পেয়েছি।’
এই বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘মনে রাখবে যাই কিছু করো দায়িত্ব থেকে করবে। ভাল ব্যাট করতে চাইলে জেদ থাকা দরকার। পরিশ্রমের বিকল্প নেই।’
সাকিবের পরামর্শ শুনে আত্মবিশ্বাসটা যেন দ্বিগুণ হয়ে গেলো চট্টগ্রামের কিশোর আর তরুণ ক্রিকেটের পরিচিত মুখ মিনহাজুর রহমান, দিহান আল মাজিদ খান, আফরাফুল করিম রিফাত, শামসুল আরেফীন, অমিত কর প্রান্ত, মিনহাজ উদ্দিন, সৗরভ, আলফাতুর রহমান, হাসান মুরাদ মুন্না, আবু নাসের ফয়সাল, বোরহান উদ্দিন, ওবায়দুল হক, আল আমিন, আবদুল মোহাইমেন, আরমান খান, ইলিয়াছ, তারেক কামাল, মো. ইমরান, জামিল হাসান, আবিদ চৌধুরীসহ বিভিন্ন দলের অন্তত ১০০ জন খেলোয়াড়।
অনূর্ধ্ব-১৬ দলের ক্রিকেটার আবদুল মোহাইমেন বলেন, ‘সাকিব আল হাসান জিনিয়াস। তার ব্যাট চালানো আমাকে দারুণ টানে। তিনি এসেছেন তাই সব কাজ ফেলে দিয়ে চলে এসেছি।’
একই দলের অপর ক্রিকেটার মেহেদী হাসান পিয়াল বলেন, ‘সাকিব ব্যাটের পাশাপাশি স্পিনটাও ভাল করেন। তার কথা শুনে ক্রিকেটার হওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছি। তিনি বলেছেন অধ্যবসায় চালিয়ে যেতে। চেষ্টা করছি। হয়তো তার মতো হতে পারবো না। কিন্তু তার খেলাটা থেকে এখনও শেখার চেষ্টা করছি।’
পেস বোলার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘সাকিব ভাই পেস বোলিং করেন না। কিন্তু অনুষ্ঠান শেষে তিনি জানালেন কিভাবে পেস বোলাররা ব্যাটসম্যানদের বোকা বানাতে পারে।’ বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক সাকিবকে ভবিষ্যৎ ক্রিকেটারদের মাঝে নিয়ে আসতে পেরে দারুণ খুশি জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তারা।
জানতে চাইলে বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটের আহ্বায়ক আলী আব্বাস বলেন, ‘সাকিব আন্তর্জাতিক মানের একজন ক্রিকেটার। তাকে নিয়ে আসার কারণটা হলো সবাইকে উৎসাহ দেয়া। আগামীতে বড় পরিসরে তাকে নিয়ে আসার চিন্তা ভাবনা রয়েছে। তরুণ ক্রিকেটাররা তার কাছ থেকে অনেক টিপস নিয়েছে।’