বুধবার , ১৩ই নভেম্বর, ২০২৪ , ২৮শে কার্তিক, ১৪৩১ , ১০ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > সাঈদীর রায় নাশকতায় প্রস্তুত শিবিরের ‘সুইসাইড স্কোয়াড’

সাঈদীর রায় নাশকতায় প্রস্তুত শিবিরের ‘সুইসাইড স্কোয়াড’

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়কে কেন্দ্র করে বড় ধরনের নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা করছে শিবিরের দুর্র্ধষ ক্যাডাররা। ইতোমধ্যে নাশকতার জন্য সংগঠিত হতে শুরু করেছে জামিনে মুক্ত হওয়া সহস্রাধিক শিবির সদস্য। এবার পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা এবং সরকারে স্থাপনায় আঘাত হানতে তারা সংগঠনের ‘সুইসাইড স্কোয়াড’কে ব্যবহার করবে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য পেয়ে নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ-র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, গত সপ্তাহে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্তা-ব্যক্তিরা পুলিশ ও র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের কর্মকাণ্ড নিয়ে একটি বিশেষ বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জেলা পুলিশ সুপারদের কাছে কঠোর দিক-নিদের্শনাও দেয়া হয়েছে। তালিকাভুক্ত শিবির ক্যাডারদের ধরতে শুরু হচ্ছে বিশেষ অভিযান।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় যে কোনো সময় ঘোষণা হতে পারে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সাঈদীর আপিলের শুনানিও শেষ হয়ে গেছে। তাই এ রায়কে কেন্দ্র করে জামায়াত-শিবির আগের চেয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠার চেষ্টা করছে। সোমবার হঠাৎ করেই তারা দেশের কয়েকটি স্থানে মিছিল বের করে বিক্ষোভ চালায় এবং পুলিশের ওপর হামলাও করে। রায় বানচাল করতে জামায়াত-শিবির আরো নানা কৌশল নিয়েছে বলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর তথ্য।

জানা গেছে, শিবিরের দুর্র্ধষ ক্যাডারদের নিয়ে গঠিত ‘সুইসাইড স্কোয়াড’কে প্রস্তুত করেছে জামায়াত। হাইকমান্ড নির্দেশ দিলেই তারা নাশকতার চেষ্টা চালাবে। গত বছরের ২৮ ফেরুয়ারি সাঈদীর বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় দেন মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই দিনই ঢাকাসহ সারাদেশে তাণ্ডবলীলা চালায় জামায়াত-শিবির। থানা ও পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে পুলিশ সদস্যদের হত্যা, রেল লাইন উৎপাটন ও সরকারের গুরুত্বপুর্ণ স্থাপনাগুলোতে ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালানো হয়।

আবার সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে বলে প্রচার চালিয়েও সাধারণ মানুষের আড়ালে বেপরোয়া হয়ে উঠে জামায়াত-শিবির। সেই আলোকে আপিল বিভাগে সাঈদীর রায় তাদের বিপক্ষে গেলেই পুনরায় নাশকতা চালাতে পারে বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আশঙ্কা করা হয়েছে। গোয়েন্দাদের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে এক সপ্তাহ আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্তা-ব্যক্তিদের নিয়ে বিশেষ বৈঠক করেছেন। দেশের বিভিন্ন কারাগার থেকে মুক্ত হওয়া শিবির ক্যাডারদের ব্যাপারে বিশদ আলোচনা হয় ওই বৈঠকে। শিবির ক্যাডার গ্রেপ্তার ও নাশকতা প্রতিরোধসহ বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে- সারাদেশের থানা, পুলিশ ফাঁড়ি ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে নজরদারী বৃদ্ধি, মুক্ত হওয়া ক্যাডারদের তালিকা দ্রুত সম্পন্ন করা, রায়ের আগের দিন থেকে শুরু করে অন্তত ১৫ দিন কঠোর নিরাপত্তা বলবৎ রাখা, ‘সুইসাড স্কোয়াড’কে চিহ্নিত করা, পুলিশের উপর হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা ইত্যাদি।

বৈঠকে উপস্থিত থাকা পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলামেইলকে বলেন, ‘এবার শিবিরের বিরুদ্ধে সরকার আরো হার্ডলাইনে। শিবির নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালানোর চেষ্টা করছে। তাদের একটি সুইসাডাল স্কোয়াড আছে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি।’

জামিনে মুক্ত সহস্রাধিক ক্যাডার:
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গত এক বছরে সারাদেশে গ্রেপ্তার হওয়া প্রায় সহস্রাধিক শিবির ক্যাডার জামিনে বের হয়ে গেছে। তারা এখন সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড জোরালো করার চেষ্টা চালাচ্ছে। পাশাপাশি তারা কারাগারে আটক জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মুক্ত করার কৌশল খুঁজছে। ইতিমধ্যে মুক্ত হওয়া ক্যাডারদের তালিকাও করেছে গোয়েন্দারা।

তালিকাভুক্তদের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছেন- সাইফুল্লাহ খালেদ, জিয়াউর রহমান, মাহমুদুল হাসান, রায়হান আহমেদ, রাসেল মাহমুদ, আলামিন, সাদেক আল হোসেন, মহিউদ্দিন, মামুনুর রহমান, সুজাউদ্দিন, সাইফুর রহমান, কেএম কামাল উদ্দিন, মামুন, আবদুল্লাহ আল আজীম, শামসুজ্জামান, ফারুক হোসেন, খলিলুর রহমান, আসাদুজ্জামান মামুন, জাকিরুল হক, মো. শফিউল্লাহ, ইসমাইল নাজিম, মনিরুল ইসলাম মোহাব্বত আলী, আবুল কাশেম, জালাল উদ্দিন, হাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান, নাইমুল ইসলাম, শাখাওয়াত হোসেন প্রমুখ।

মেস-মাদরাসায় নজরদারীর নির্দেশ:
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদরাসা ও মেসগুলো নজরদারীর আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। ঢাকার প্রতিটি ওয়ার্ড, সাতক্ষীরা, জয়পুরহাট, রাজশাহী, কক্সবাজার, চট্রগ্রাম, টেকনাফ, খুলনা, যশোর, কুমিল্লা, সিলেটসহ আরো কয়েকটি এলাকায় শিবির ক্যাডারদের আনাগোনা সবচেয়ে বেশি। তার পাশাপাশি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের তৎপরতা আছে এখনো। ওইসব এলাকায় মেস ও মাদরাসার সংখ্যাও বেশি।

গোয়েন্দাদের তথ্যানুযায়ী- রাজশাহীর বিনোদপুর, মেহেরচী কাটাখালী, বুধপাড়া, নামো ভদ্রা, মহিষবাথান, হেতেমখাঁ, শিরোইল, শান্তিবাগ, নওদাপাড়া, তালাইমারি, বিলসিমলা, ছোট বনগ্রাম ও বিসিক বাসাবাড়ি ভাড়া করে শিবির সদস্যরা বসবাস করছে।

কিছুদিন আগে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারদের কাছে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। নির্দেশনা পেয়ে তারা থানার ওসিদের নির্দেশ দিয়েছেন মেস ও মাদরাসাগুলোতে নজরদারী বাড়াতে। প্রয়োজনে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালাতে।

জামায়াত-শিবিরের নাশকতার ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কেউ বানচাল করতে পারবে না। জামায়াত-শিবির নাশকতা চালানোর চেষ্টা করছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। তাদের ধরতে পুলিশ-র‌্যাবকে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সুসাইডাল স্কোয়াডকে নিমিষেই দমন করা হবে। যারা কারাগার থেকে বের হয়ে গেছেন তাদের তালিকা করে ধরার চেষ্টা চলছে।’ বাংলামেইল২৪ডটকম