বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিরোধী দলীয় বিক্ষোভকারীদের সহিংসতা এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীগুলোরও অতিমাত্রায় শক্তি প্রয়োগ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
বুধবার এ বিষয়ে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এইচআরডব্লিউ এই আহ্বান জানায়।
বিবৃতিতে বলা হয়, বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলীয় জোটের কর্মীরা গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশজুড়ে বড় ধরনের এবং প্রায়ই সহিংস বিক্ষোভ করে আসছে। একইসঙ্গে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীও অত্যাধিক বল প্রয়োগ করেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা উল্লেখ করে সংস্থাটি জানায়, বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থা অধিকার এর ধারণা শুধুমাত্র গত নভেম্বরেই বিভিন্ন সংঘর্ষে কমপক্ষে চার হাজার মানুষ আহত হয়েছে এবং কমপক্ষে ৫ জনের মৃত্যুর জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা দায়ি।
এ বিষয়ে এইচআরডব্লিউ এর এশিয়া বিষয়ক প্রধান ব্রাড অ্যাডামস বলেন, ‘বর্তমানে নির্বাচনী আবেগ বিস্ফোরক অবস্থায় রয়েছে। বিরোধী দলের বিক্ষোভকারীদের ওপর বে আইনীভাবে বল প্রয়োগের দীর্ঘ ইতিহাস থেকে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর বের হয়ে আসা প্রয়োজন। বরং পেশাদার এবং নির্দলীয় একটি উপায়ে তাদের সাড়া দিতে হবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনে রাখা উচিৎ তারা যখন বিরোধী দলে ছিল তখন তাদের সমর্থকরাও একই রকম ব্যবহারের শিকার হয়েছে। তাই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীগুলো যেন আইনের মধ্যে থেকে তাদের ভূমিকা রাখে তা নিশ্চিত করতে হবে।’
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, কর্মী সমর্থকদের সৃষ্ট সহিংসতা এড়াতে রাজনৈতিক দল এবং এর নেতাদেরই ভূমিকা রাখা উচিৎ। একইসঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীকেও আইন প্রয়োগে আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করেই বিক্ষোভে সাড়া দেয়া উচিৎ। শুধুমাত্র অতি প্রয়োজনীয় মুহূর্তেই তাদের শক্তি প্রয়োগ করা উচিৎ।
গত কিছুদিনের বিক্ষোভ চলাকালে অধিকাংশ হতাহতের জন্য বিক্ষোভকারীদের দায়ি করে এক রিপোর্টে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে বোমার আঘাতে কমপক্ষে চার শিশু আহত হয়েছে। একইসঙ্গে বেশ কিছু নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও হতাহত হয়েছে। এরমধ্যে বেশ কিছু পুলিশ সদস্য এবং একজন বিজিবি সদস্য নিহত হয়েছে। রিপোর্টে শাহবাগে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা হামলায় হতাহতের ঘটনা ও এর জন্য সরকার ও বিরোধী দলের পরস্পরকে দোষারোপের বিষয়টিও উঠে এসেছে।
বুধবার গাইবান্ধা জেলায় রেল লাইনে নাশকতার দরুণ সৃষ্ট দুর্ঘটনায় তিন জন নিহত ও ৪০ জন আহত হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এর জন্য জামায়াতে ইসলামীকে দায়ি করেছে। ইতোমধ্যেই দলটির দুই সমর্থককে আটক করা হয়েছে। যদিও বিরোধী দল এখনো এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
ব্রাড অ্যাডামস বলেন, ‘বিরোধী দলের নেতাদেরও সহিংসতা উসকে দেয়া উচিৎ নয়। তাদের বিক্ষোভ কিভাবে শান্তিপূর্ণ হবে তার সমস্ত দায়-দায়িত্ব তাদের নিতে হবে। যখন তাদের কর্মীরা অপরাধ করবে তখন বিরোধী নেতাদের উচিৎ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাহায্য করা যাতে দায়িদের আটক করা যেতে পারে।’
দেশজুড়ে অনেক ঘটনায় বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর কথা সংস্থাটির কাছে স্বীকার করে পুলিশ ও বিজিবি জানিয়েছে, তারা সাধারণ মানুষ যারা মারা গেছে কিংবা আহত হয়েছে তাদের ওপর কোনো আক্রমণ করেনি। তবে কয়েকজন স্বাধীন সাংবাদিকের বরাত দিয়ে জানানো হয় যে, বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ারগ্যাস ও তাজা গুলি ব্যবহার করছে।
তবে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ (সরকার) বিক্ষোভকারীদের বিভিন্ন সহিংসতা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বে আইনী ভাবে বল প্রয়োগের বিষয়টি নিরপেক্ষ ও পুঙ্খানুপৃঙ্খভাবে তদন্ত করবে বলে জানিয়েছে। একই সঙ্গে যারা আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে বলেও জানানো হয়েছে। কিন্তু এর আগেও বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনীর বে আইনী হত্যার সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলেও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।