সোমবার , ১১ই নভেম্বর, ২০২৪ , ২৬শে কার্তিক, ১৪৩১ , ৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > সহসাই ফিরতে পারছেন না সালাহ উদ্দিন

সহসাই ফিরতে পারছেন না সালাহ উদ্দিন

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: নিখোঁজ হওয়ার দুই মাস দুই দিন পর মঙ্গলবার (১২ মে) খোঁজ মিললেও ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলং থেকে সহসাই ফিরতে পারছেন না বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ। নানা আইনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই ফিরতে হবে তাকে।

তবে, সালাহ উদ্দিনকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তার পরিবারের পক্ষ থেকে চলছে জোর প্রচেষ্টা। ভিসা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত হলেই স্ত্রী হাসিনা আহমেদসহ পরিবার কয়েকজন সদস্য ও ব্যক্তিগত আইনজীবী শিলংয়ের উদ্দেশে রওনা দেবেন।

সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, আইনজ্ঞ, আন্তর্জাতিক আইন বিশ্লেষক ও সালাহ উদ্দিন আহমেদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

আইনজ্ঞরা বলছেন, অনুপ্রবেশের দায়ে এ মুহূর্তে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলং পুলিশের হাতে আটক বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ সে দেশের আইনে একজন অপরাধী। তাকে গ্রেফতারও দেখানো হয়েছে।

সে হিসেবে সালাহ উদ্দিন আহমেদকে আগে ভারতের আইনে সাজাপ্রাপ্ত হতে হবে, তারপর বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। এ ক্ষেত্রে দুই দেশের সরকারকেই এ প্রক্রিয়া পুরোপুরি শরিক হতে হবে।

আর যদি সালাহ উদ্দিন সাজাপ্রাপ্ত না হন, তাহলে পলাতক আসামি হিসেবে তাকে ফিরিয়ে আনতে উভয় দেশের সরকারকে আলাপ-আলোচনায় বসতে হবে। ফলে খুব শিগগিরই দেশে ফিরতে পারছেন না বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব।

এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বুধবার সন্ধ্যায় বাংলানিউজকে বলেন, ইন্ডিয়ান পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। সেখানে তিনি অপরাধ (অবৈধ অনুপ্রবেশ) করেছেন। অপরাধের কারণে তার সাজা হতে পারে। তারাই সাজা দেবেন। তারা যদি এটি করেন তাহলে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তিতে যেতে হবে আমাদের।

এ ক্ষেত্রে ২০১৩ সালের ২৩ অক্টোবর উভয় দেশের সঙ্গে অনুসমর্থন দলিল স্বাক্ষর ও বন্দি বিনিময় চুক্তি শর্ত পূরণ করতে হবে বাংলাদেশকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ- ভারত বন্দি বিনিময় চুক্তির বিধান অনুযায়ী আইনানুগ কর্তৃপক্ষের অনুরোধে এক দেশ অপর দেশের নিকট দণ্ডপ্রাপ্ত বা বিচারাধীন ব্যক্তিকে অভিযুক্ত অপরাধের সাজার মেয়াদ ন্যূনতম এক বছর হলে বহিঃসমর্পণ করতে পারবে।

তবে, চুক্তিতে বর্ণিত বিধানাবলী সাপেক্ষে রাজনৈতিক চরিত্রের অপরাধের ক্ষেত্রে কোন বহিঃসমর্পণের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করার সুযোগ থাকবে। কোনো দণ্ডপ্রাপ্ত বা অভিযুক্তকে স্বল্প সময়ের জন্য সাময়িকভাবেও বহিঃসমর্পণ করা যাবে। একই ব্যক্তির বিষয়ে একাধিক দেশ হতে বহিঃসমর্পণের অনুরোধ থাকলে সে ক্ষেত্রে কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে অনুরোধপ্রাপ্ত দেশ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে।

এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, যদি ওনারা (ভারত) সালাহ উদ্দিন আহমেদকে সাজা না দেন, তাহলে উনি (সালাহ উদ্দিন) পলাতক আসামি হিসেবে গণ্য হবেন। উনার নামে বাংলাদেশেও মামলা রয়েছে। সেক্ষেত্রে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সূত্রমতে, গত দুই বছর ধরে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ‘নজিরবিহীন সহিংস আন্দোলনের’ সময় বেশ কয়েকবার দলের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন সালাহ উদ্দিন আহমেদ। এ কারণে তার বিরুদ্ধে প্রায় দেড় ডজন মামলা রয়েছে বাংলাদেশে। এ মামলাগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটির চার্জশিট হয়েছে, কয়েকটি মামলায় তিনি জামিনে আছেন। তবে, কোনো মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়নি।

সালাহউদ্দিন আহমদের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন মেজবা বুধবার সন্ধ্যায় বাংলানিউজকে বলেন, আনুমানিক ১৮ মামলার আসামি সালাহউদ্দিন। এর মধ্যে ৯টি মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। ১০টি মামলায় তিনি জামিনে আছেন। তার বিরুদ্ধে কোনো ওয়ারেন্ট নেই। তবে, তদন্তনাধীন মামলার ক্ষেত্রে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারে।

সালাহ উদ্দিনকে বিদেশ থেকে ফেরানোর বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বাংলানিউজকে বলেন, কেউ যদি মামলার মাধ্যমে বন্দি হন তাহলে তাকে বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় আনতে হবে। আর যদি কোনো অপরাধ না করে আটক হন তাহলে কূটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনতে হবে।

সাধারণত বিদেশ থেকে কাউকে ফিরিয়ে আনতে হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে। পরে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যাবতীয় কূটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যক্তিকে ফিরিয়ে আনে- বলেন মনজিল মোরসেদ।

এদিকে সালাহ উদ্দিনের খোঁজ পাওয়ার পর তাকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তার পরিবার।

সূত্র জানায়, বুধবার সারাদিনই পরিবারের সদস্য আত্মীয়-স্বজন এবং বিএনপি নেতারা ইন্ডিয়ান হাইকমিশনে দৌড়াদৌড়ি করেছেন ভিসার জন্য। কিন্তু সব প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় বুধবার রাত ১১টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভারতীয় ভিসা হাতে পাননি সালাহ উদ্দিন আহমেদের পরিবার।

এ প্রসঙ্গে বুধবার (১৩ মে) বিকেলে সালাহ উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ভিসার জন্য আমাদের লোকজন এখনো ইন্ডিয়ান হাইকমিশনে গিয়ে বসে আছে। ভিসা পেলেই আমরা শিলংয়ের উদ্দেশে রওনা দেব। যাওয়ার আগে আপনাদের সবাইকে জানিয়ে যাব। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম