রবিবার , ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > শীর্ষ খবর > সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে আ.লীগ-বিএনপি, তৎপর ইসি: রাজনীতিতে নির্বাচনী উত্তাপ

সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে আ.লীগ-বিএনপি, তৎপর ইসি: রাজনীতিতে নির্বাচনী উত্তাপ

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরব হয়ে উঠছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। রাজনীতিতে দেখা দিচ্ছে নির্বাচনী উত্তাপ। নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে ইতোমধ্যেই মাঠে নেমে গেছে রাজনৈতিক দলগুলো। যদিও এসব কর্মসূচিকে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি বলতে নারাজ দলের নেতারা। কিন্তু মাঠে নিজেদের অবস্থান দৃশ্যমান করতে সর্বশক্তি প্রয়োগের সিদ্ধান্তই নিয়েছে দলগুলো। কর্মসূচি ঘিরে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের উত্তেজনাও চলছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠছে নির্বাচন কমিশনও (ইসি)। রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ খুঁজছে এই সাংবিধানিক সংস্থা।

এর আগে গত ২৮ অক্টোবর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে নির্বাচনী রাজনীতির কর্মসূচির বিষয়টি সামনে চলে আসে। সে বহরে কে বা কারা হামলা করলে রাজনীতিতে এক ধরনের উত্তেজনা দেখা দেয়। তবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন খুবই সহনশীলতার সঙ্গে সে পরিস্থিতি সামাল দেয়। বিএনপির নেতাকর্মীরা অবশ্য খালেদা জিয়ার ওই সফরকে নির্বাচনী কর্মসূচি বলতে নারাজ; কিন্তু মূলত সেই সফরের পরই রাজনীতিতে নির্বাচনী উত্তাপ পরিলক্ষিত হতে থাকে। সর্বশেষ সে উত্তাপ আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে প্রায় দুই বছর পর গত রোববার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি সমাবেশকে কেন্দ্র করে। ওই সমাবেশ খালেদা জিয়া মূলত নির্বাচনী বক্তব্য দেন।

বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়াকে সরকারের উদার রাজনীতির অংশ হিসেবেই দেখছে বিভিন্ন মহল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের সে উদারতা এবং সমাবেশে খালেদা জিয়ার ভাষণকে ঘিওে সেদিন থেকেই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে এক ধরনের আস্থা দেখা দিয়েছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি গত এক মাসে যে রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছে, তা ইতিবাচক। এর মধ্য দিয়ে সবাই যে নির্বাচনের দিকেই হাঁটছে তার আভাস মেলে।

দুই বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যে নির্বাচনী পথে হাঁটছে-তা দলের শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে উঠে আসছে। গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ‘সামনে নির্বাচন, দল গোছান’ বলে নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় নেতাকর্মীদের। সেদিন গণভবনে একটি জেলার নেতারা সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী আগামী বছরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বিবেচনায় রেখে দলীয় কার্যক্রমকে ‘সুসংগঠিত’ করার নির্দেশনা দেন। এর আগে বিভিন্ন সময় তিনি এবার নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ও সব দলের অংশগ্রহণে হবে এবং বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে বলে সতর্ক করে দেন এবং দলকে সেভাবেই প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন। একইভাবে গত সপ্তাহে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদসহ শীর্ষ নেতারা ‘যেকোনো পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে যাবে’ বলে মন্তব্য করেছেন। তারা বলেছেন, কোনো ষড়যন্ত্র করেও বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখা যাবে না।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি শীর্ষ নেতারাও রাজনীতিতে নির্বাচনী উত্তাপ টের পাচ্ছেন বলে মত দিয়েছেন। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘নির্বাচনের বেশি দেরি নেই। আমরা অনেক আগে থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। এবার নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। সেভাবে প্রস্তুতি নিতে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং নির্বাচনী উত্তাপ তো ছড়াবেই।’ ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সব সময় চায় সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন হোক। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছিল। যেহেতু জামায়াত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। তাই বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। এর জন্য আওয়ামী লীগ দায়ী নয়, বিএনপি রাজনৈতিকভাবে দায়ী। আশা করছি, এবার বিএনপি সে ভুল করবে না।’

একইভাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে বেশি দেরি নেই। সুতরাং বিএনপির মতো বড় দলের তো প্রস্তুতি থাকবেই এবং আছে। বিএনপির জনপ্রিয়তা যে অনেক বেড়েছে এর প্রমাণ দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কক্সবাজার সফর ও সবশেষ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ। তবে অনুমতিনির্ভর সমাবেশের জন্য বিএনপি আর অপেক্ষা করবে না। আমরা এত সহজে সরকারকে ছেড়ে দেব না। আমরা জনগণের কাছে যাব। জনমত সৃষ্টির জন্য আমাদের দলের চেয়ারপারসন দেশের বিভিন্ন এলাকায় সমাবেশ করবেন।’

রাজনৈতিক সূত্রমতে, বিএনপির সমাবেশের পর থেকেই মূলত প্রকাশ্যে আসে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সংসদের বাইরে বিরোধী দল বিএনপির নির্বাচনী রাজনীতির নানা কর্মসূচি। বিএনপির সমাবেশের পর নিজেদের অবস্থান জানান দিতে পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ। এ সময় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে এবং প্রথম বর্ষপূতিকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াতের সহিংস রাজনীতি তুলে ধরতে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঠে নামাতে পারে দলটি। আয়োজন করতে পারে প্রতিবাদ সমাবেশেরও। অনুরূপভাবে আরো কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। এবার কক্সবাজারের আদলে সড়কপথে সিলেট বা রাজশাহী যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে খালেদা জিয়ার। এ সময় জনসংযোগ ও পথসভা করবেন তিনি। এজন্য স্থানীয় নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নিতেও বলা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ দলীয় সূত্রগুলো বলছে, বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে বাধা না দিয়ে বরং সহায়তা করার পক্ষে দলের নীতিনির্ধারকরা। সভা-সমাবেশের সুযোগ তৈরি করে দিয়েই দলটির লাগাম টেনে ধরতে চান তারা। তাদের মতে, মাঠে নামার সুযোগ দিচ্ছে না, সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হয় না বলে বিএনপির যে অভিযোগ, সেগুলোর ভিত্তিহীন প্রমাণ করতে ও ‘ষড়যন্ত্রের রাজনীতি’ বন্ধ করতেই এই কৌশল। ক্ষমতাসীনরা মনে করছেন, নির্বাচনকেন্দ্রিক নানা দাবি নিয়ে মাঠে থাকলে আবারও সংঘর্ষে জড়াতে পারে দলটি। সে ক্ষেত্রে এখনকার মতো ভবিষ্যতেও তাদের কোণঠাসা করে রাখা যাবে। তা ছাড়া সভা-সমাবেশসহ নানা দিক নিয়ে ব্যস্ত রাখা গেলে নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করতে পারবে না দলটি। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচনী মাঠে বিএনপির অবস্থান সম্পর্কে অবহিত হওয়া যাবে এবং সে অনুযায়ী সরকারি দলও নির্বাচনী কৌশল নিতে পারবে।

একইভাবে দীর্ঘদিন রাজনীতির মাঠে না থাকা বিএনপি নানা সভা-সমাবেশের মধ্য দিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে চাইছে। বিশেষ করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশের মধ্য দিয়ে বেশ চাঙা এখন দলটি। যদিও বক্তৃতা-বিবৃতিতে নানা নির্বাচনী দাবি তুলে ধরছে দলটি। কিন্তু সেসব পূরণে দলের কঠোর কোনো কর্মসূচিতে যাওয়ার ইচ্ছে নেই বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে। দলীয় নেতারা জানান, এর মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের সহানুভূতি নিতে চান তারা। সরকারের বিএনপিবিরোধী ভাবমূর্তি স্পষ্ট করতে চান। এতে নির্বাচনী মাঠে সুবিধা পাওয়া যাবে বলে দলের নেতাদের ধারণা।

আওয়ামী লীগ সূত্রমতে, নির্বাচনী রাজনীতির অংশ হিসেবে রাজধানীতে বড় সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে ইউনেসকোর স্বীকৃতি দেওয়া উপলক্ষে আগামী ১৮ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নাগরিক সমাবেশ হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখা ও দলীয় শক্তি জানান দেওয়ার লক্ষ্যে ১৮ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে ব্যাপক লোক সমাগমের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেবেন।

অন্যদিকে কঠোর কর্মসূচিতে না গিয়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়েই নির্বাচনকেন্দ্রিক দাবি আদায় করতে চায় বিএনপি। এ কারণে খুব শিগগিরই ঢাকার বাইরে খালেদা জিয়ার আরো কয়েকটি সমাবেশ কর্মসূচি গ্রহণের চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। জানা গেছে, জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন আমলে নিয়ে আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণায় নামতে পারেন খালেদা জিয়া। রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে সড়কপথে সফর করে সারা দেশের নেতাকর্মীদের চাঙা করাই এর মূল লক্ষ্য।

কয়েক দিন ধরেই বেশ সক্রিয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসি চাইছে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী সেনা মোতায়েন করতে, কিন্তু ম্যাজেস্ট্রেসি ক্ষমতা না দিতে। একইভাবে ইভিএম ব্যবহার না করতে। তবে এ নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মুখোমুখি অবস্থানে থাকায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না সংস্থাটি।

এ ব্যাপারে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন বলেন, সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া যাবে না। তবে সেনাবাহিনীর সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট রাখা যেতে পারে। সাবেক এ নির্বাচন কমিশনার আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে মত দিয়েছেন। একইভাবে এই সাবেক নির্বাচন কমিশনার এমনও বলেন, অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে সব দল নির্বাচনের দিকেই যাচ্ছে। সরকার বলছে বিএনপির দাবি মানবে না। আর বিএনপিও বলছে মানতে হবে। এগুলো রাজনৈতিক কথা। বিএনপিকে সমাবেশ করতে দেওয়া এবং খালেদার বক্তব্যে এটি বোঝা যাচ্ছে যে, তারা নির্বাচনে যাবে। এখন সবারই উচিত হবে এধারা অব্যাহত রাখা। প্রতিদিনের সংবাদ