বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
সরকারের একেকবার একেক ধরনের কথা পুরো পরিস্থিতিকে আরও ভঙ্গুর ও জটিল করে তুলেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।
তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতি প্রতিদিন ভয়ানক হয়ে উঠছে। সরকারের সীমিত টেস্টের লুকোচুরি করা ফলাফলেও শনাক্তের ৯৮তম দিনে এসে গতকাল আক্রান্তের সংখ্যায় করোনার আতুরঘর চীনকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। মুখে ‘লকডাউন’ কাগজে-কলমে ‘সাধারণ ছুটি’ আবার কখনও কখনও কথিত ‘রেড জোন’ ‘ইয়োলো জোন’ ‘গ্রিন জোন’ এভাবে সরকারের একেকবার একেক ধরনের কথা পুরো পরিস্থিতিকে আরও ভঙ্গুর ও জটিল করে তুলেছে।
রোববার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, অপ্রিয় বাস্তবতা হলো, সরকার নিজেও পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারছে না, পরিস্থিতি মোকাবিলার ব্যাপারে কারো পরামর্শ কিংবা সহায়তাও নিচ্ছে না। কেউ সুপরামর্শ দিলে বা সহযোগিতা করতে চাইলে তাদের কটাক্ষ করা মজ্জাগত হয়ে গেছে ক্ষমতাসীন মন্ত্রী-নেতাদের। দেশের মানুষের জীবন নিয়ে সরকারের এ ধরনের হেয়ালিপূর্ণ আচরণ মেনে নেয়া যায় না। ঢাকায় কোনো হাসপাতালেই আইসিইউ বেড খালি নেই, কোনো কোনো বেসরকারি হাসপাতালে করোনার ওয়ার্ড খুললেও আইসিইউ বেড ও চিকিৎসার জন্য গলাকাটা দাম নিচ্ছে।
তিনি বলেন, তিন মাসে করোনা উপসর্গ নিয়ে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হয়েছে- যাদের মধ্যে সিংহভাগ মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসা পাননি। বেঁচে থাকাবস্থায় নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে পারেননি তারা করোনা আক্রান্ত কি না। করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করে প্রথম থেকেই বিএনপির দাবি ছিল, দেশে মেডিকেল ইমার্জেন্সি ঘোষণা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী তার দলের মন্ত্রী, এমপি, মেয়র, নেতা ও ভিআইপিদের চিকিৎসার দায়িত্ব নিচ্ছেন। তাদের জন্য দ্রুততার সাথে সিএমএইচ, এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, হেলিকপ্টার, আইসিইউ, ভেন্টিলেটরসহ সব সুবিধা নিশ্চিত করছেন। কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষগুলো চিকিৎসা না পেয়ে রাস্তাতেই মারা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী তাদের খবর নিচ্ছেন না। বর্তমানে দেশে চিকিৎসা বৈষম্য ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।
রিজভী বলেন, সরকারের অবহেলার কারণে বাংলাদেশে করোনা শনাক্তকরণও সঠিকভাবে হচ্ছে না। করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষার কিটও ত্রুটিপূর্ণ।
তিনি বলেন, প্রতিদিন মৃত্যুর বিভীষিকা হানা দিচ্ছে সর্বত্রই। পরিচিত মানুষের মৃত্যুর খবর শুনে ঘুমাতে যাচ্ছি আবার ঘুম থেকে উঠেও শুনছি অসংখ্য দুঃসংবাদ। কিন্তু সরকারের হিংসা-বিদ্বেষ ও নির্মমতা থেমে নেই। করোনা ভয়ের পাশাপাশি গ্রেফতার, গুম আর মিথ্যা মামলার আতঙ্কে দিন কাটছে দেশবাসীর। সামান্য সমালোচনা করলেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার খড়গ নেমে আসে। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা ভুলে গেছে যে, যেকোনো অন্যায়েরই মাশুল দিতে হয়।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশ করোনাভাইরাস মোকাবিলার খাতে অধিক পরিমাণ অর্থ ব্যয় করার স্বার্থে এবং করোনাত্তোর অর্থনৈতিক মন্দাকে সামনে রেখে সরকারি খরচ হ্রাস করছে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের সরকার হাঁটছে উল্টো দিকে।