শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > সরকার দায়িত্ব নিতেই তদবিরের জ্বালায় অতিষ্ঠ সচিবালয়

সরকার দায়িত্ব নিতেই তদবিরের জ্বালায় অতিষ্ঠ সচিবালয়

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তদবিরবাজ বেড়েছে সচিবালয়ে। নতুন সরকার দায়িত্ব নিতেই নব উদ্যোমে শুরু তাদের উৎপাত। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন নবনিযুক্ত মন্ত্রী-এমপিদের এলাকার লোকজন। ক্ষমতাসীন দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা প্রতিদিন গাড়ির বহর নিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশ করছে। পিছিয়ে নেই জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরাও। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দেখেও না দেখার ভান করছেন বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা গেছে প্রশাসনের প্রানকেন্দ্র সচিবালয়ে।

ভূমি মন্ত্রণালয়

জলমহাল ইজারার নবায়ন করতেই হবে। সে কারণে সচিবালয়ে ঢুকছেন হবিগঞ্জের এক মৎস্যজীবী। প্রশ্ন ছিল গেটপাস কোথায় পেলেন? সাফ জবাব- কিতা কন? স্যারেরাই তো পাস লেইখ্যা গেটে পাঠায়। স্যাররা বেশ ভালা মানুষ। তবে ভাই! পত্রিকায় নাম লেইখেন না। পত্রিকায় নাম আইলে জলমহাল ইজারার নবায়নের রেট বাইড়া যাইব। না পাওয়ার সম্ভাবনাও আছে।’এভাবেই ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিদিন জলমহাল, চা বাগানের জন্য জমি, হাউজিং কোম্পানির দখলে থাকা জমি ব্যবহারের ছাড়পত্র, বিভাগীয় শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অকৃষি খাস জমি বন্দোবস্তের নবায়ন, নতুন করে অকৃষি খাস জমি বন্দোবস্ত, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলি, পদায়ন, অর্পিত সম্পত্তির তালিকার গেজেট থেকে নাম বাদ দেয়ার আবেদনসহ নানা বিষয়ে তদবিরকারীরা সচিবালয়ে প্রবেশ করছেন।

খাদ্য বিভাগ

এ বিভাগে বিভিন্ন শূন্য পদে জনবল নিয়োগ হচ্ছে। চাকরি প্রত্যাশীদের পক্ষ হয়ে প্রতিদিন অর্ধশত দর্শনার্থী খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য সচিবালয়ে প্রবেশ করছেন। সংসদ সদস্য, উপজেলা ও ইউপি চেয়ারম্যান, ক্রীড়াবিদ, ছাত্রলীগ নেতারা খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে চাকরির তদবির করছেন। খাদ্য অধিদফতরের কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিকরা সচিবালয়ে হরদম প্রবেশ করছেন। বিশেষ করে বাচ্চু, অনীল চন্দ্র দাস এবং সুকুমার ঘোষ এ তিন ঠিকাদার যুগ্ম সচিব আতিয়ার রহমানের দেয়া পাসে সচিবালয়ে প্রতিদিন ঢুকছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ বিভাগ

ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে চলতি অর্থবছরের বাজেটের ৮০ ভাগ টিআর ও কাবিখার বরাদ্দ এরই মধ্যে সংসদ সদস্য, সংরক্ষিত আসনের মহিলা সংসদ সদস্য, পৌরসভার চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের অনুকূলে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ভরা মৌসুমে এ ধরনের বরাদ্দ দেয়ার উদাহরণ অতীতে ছিল না। নভেম্বর-ডিসেম্বরের আগে বরাদ্দের চাল দিয়ে কোনো কাজই শুরু করা যাবে না জেনেও ত্রাণ বিভাগ কাবিখার বরাদ্দ দিয়েছে কেন তা সংশ্লিষ্টরা বলতে পারছেন না। ত্রাণ বিভাগে পরিমল, মুনির, অকিল, নওশের, মালেক, মফিজ, নড়াইলের আজীজ, যশোরের জহুর এবং ঢাকা জেলা ত্রাণ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দালালির কাজে সচিবালয়ে প্রবেশ করছেন। এছাড়াও সংসদ সদস্য এবং সংরক্ষিত আসনের মহিলা সংসদ সদস্যদের প্রতিনিয়ত মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

নতুন সরকারের দায়িত্ব নিতেই এ মন্ত্রণালয়ে বেড়েছে ব্যক্তিগত অস্ত্রের লাইসেন্সের তদবির। পোস্টিং, বদলি, নিয়োগ, মিশনের তালিকায় নাম লেখানো, র্যাবে পোস্টিং, বিভিন্ন বিভাগ ও জেলার গুরুতর অপরাধের মামলার চার্জশিট থেকে নাম বাদ দেয়াসহ নানা তদবির নিয়ে আসছেন দালালরা। মাদকের মামলা থেকে বাঁচার তদবির এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি বলে জানান কর্মকর্তারা।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় দুর্নীতির হাট। হেন কোনো অপকর্ম নেই, যা এখানে হয় না। টাকার বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধার সনদ পাওয়া যায় এখানে। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার বিষয়ে অভিযোগ করা হলে টাকা নিয়ে তাদের বৈধতা দেয়া হচ্ছে। আবার টাকা দেয়া বন্ধ হলেও ফের চিঠি দিয়ে বলা হচ্ছে সে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নয়। গত কয়েক বছরে এ মন্ত্রণালয়ে মুক্তিযোদ্ধা সনদ দেয়ার নামে শত কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান।

স্থানীয় সরকার বিভাগ

বিআরডিবির বিভিন্ন পদে জনবল নিয়োগের তদবির সবচেয়ে বেশি। প্রকৌশলীদের বদলি, নলকূপ পাওয়ার তদবির, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদসহ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দের ছাড়করণের তদবির সবচেয়ে বেশি। এছাড়া প্রকল্পের জনবল রাজস্ব খাতে স্থানান্তর, ইউপি সচিবদের বেতন রাজস্ব খাত থেকে প্রদান, গ্রাম পুলিশ ও দফাদারদের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর মর্যাদা প্রদান, জেলা ও উপজেলা পরিষদের মেরামতের অর্থ ছাড়করণের তদবির এ মুহূর্তের জন্য বেশি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়

তদবিরকারীর সবচেয়ে ভিড় এ মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয়ের আওতায় হাতে নেয়া উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন, বকেয়া বিল অনুমোদন, নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, বিভাগীয় মামলা প্রত্যাহার, প্রকল্পের জনবল রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের তদবির সবচেয়ে বেশি। বিভিন্ন হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ, জেলা সদর ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অনুকূলে বরাদ্দের প্রথম কিস্তি এখনই ছাড় করতে মরিয়া হয়ে কাজ করছেন একশ্রেণীর ঠিকাদার। তারা শাখা পর্যায়ে বসে বসে তদবির করেন। ডাক্তারদের পদোন্নতির তদবিরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অতিষ্ঠ।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়

রাজউকের বিভিন্ন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ নেয়া, প্লটের আকার পরিবর্তন (বড়-ছোট) করা, বহুতল ভবনের প্লান অনুমোদন, বিভিন্ন আবাসন কোম্পানির অনুমোদন, বৃহৎ হাউজিং কোম্পানিগুলোর হাতে নেয়া প্রকল্পগুলোর ভূমি উন্নয়নের ছাড়পত্র সংগ্রহ করা, নিয়োগ, বদলিসহ নানা তদবিরে দালালরা আসেন এ মন্ত্রণালয়ে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষসহ ঢাকার বাইরের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের উন্নয়ন কাজের বকেয়া বিল অনুমোদন, প্লট বরাদ্দ পাওয়ার তদবিরে আসছেন অনেকে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি হাউজিং এস্টেটের প্লট বরাদ্দ, ঠিকাদারের বিল পরিশোধ, পূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীদের বদলি, ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশন, বিভাগীয় মামলা প্রত্যাহারের তদবির সবচেয়ে বেশি বলে জানা গেছে।