রবিবার , ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ, বিটিআরসি নয়

সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ, বিটিআরসি নয়

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত্ব মোবাইল অপারেটর টেলিটক থ্রিজি সেবা চালু করার পর এখন গ্রাহক সংখ্যা বাড়ছে। যদিও অন্য অপারেটরদের তুলনায় গ্রাহক সংখ্যা থেকে পিছিয়ে আছে টেলিটক। একমাত্র রাষ্ট্রয়াত্ব অপারেটর টেলিটক প্রথম থ্রিজি সেবা চালু করলেও সাফল্য তুলনামূলকভাবে কম। ২০১৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৩৮ লাখ গ্রাহক টেলিটকের (বিটিআরসির তথ্য মতে)। কোন পথে এগুচ্ছে টেলিটক, গ্রাহক বৃদ্ধিতে কি উদ্যোগ? এমন সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. ফয়জুর রহমান চৌধুরী।

টেলিটক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘টেলিটক পিছিয়ে থাকার বিভিন্ন কারণ আছে। প্রাইভেট কোম্পানিগুলোর টাকা আছে তারা প্রচারণায় খরচ করতে পারে। টাকা খরচের ক্ষেত্রে তাদের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু টেলিটককে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে হয়। তবে টেলিটকেরও বিশেষ সুবিধা আছে, সবচেয়ে কম কল রেট এবং ইন্টারনেট সুবিধা ভালো। তাছাড়া টাওয়ার স্থাপনে জায়গা কেনা লাগে না। চাইলেই দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ডাকঘরগুলোতেও টাওয়ার স্থাপনা করতে পারবো। তাই আমরা চেষ্টা করছি নেটওয়ার্ক সম্প্রসার করতে। আসলে টেলিটকের টাকা নেই। চেষ্টা করছি ঋণ নিয়ে হলেও প্রত্যেকটি ইউনিয়নের হেড কোয়ার্টার কভারেজের আওতায় আনতে।’

এবছর ১৬ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্পসহ ৪ হাজার ২৯৬ কোটি টাকার ৬টি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অধীনে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এর বাস্তবায়ন করবে। গত বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য কক্ষপথের স্লট ভাড়া নিতে রুশ প্রতিষ্ঠান ইন্টারস্পুটনিকের সঙ্গে চুক্তিও করেছে বিটিআরসি।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রসঙ্গে মো. ফয়জুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সময়ের লক্ষ্যমাত্রা সঠিক রাখতে চেষ্টা করছি। আশা করছি আমরা সঠিক সময়েই কাজ শেষ করতে পারবো। ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর উৎক্ষেপণ হবে বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটালাইট।’

নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসি কাছে এক সময় বিভিন্ন টেলিকম অপারেটরদের ট্যারিফ ও সেবা অনুমোদনের ক্ষমতা থাকলেও এখন তা মন্ত্রণালয়ের হাতে। এতে বিটিআরসির ক্ষমতা খর্ব হয়েছে কি না এ প্রসঙ্গে সচিব বলেন, ‘বিটিআরসি সরকারের স্বাধীন সংস্থা। তাকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে এবং মতামতের সুযোগ দেয়া হয়েছে। এখানে সরকার হচ্ছে মন্ত্রণালয়। আমরা মন্ত্রণালয় থেকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে ক্ষমতা দিয়েছি। সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ হলেও বিটিআরসি জনগণের কাছে দায়বদ্ধ নয়। তাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।’

গত বছর আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন সংস্থা (আইটিইউ) কাউন্সিল সদস্য পদ লাভ করে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে ‘আইটিইউ সেল’ গঠন করার ঘোষাণা দেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। আইটিইউ সেল প্রসঙ্গে সচিব বলেন, ‘আইটিইউ সেল করা হয়েছে। সব কিছুতেই আইটিইউর সহযোগিতা লাগে। আমার আইটিউর সদস্য হওয়ার ফলে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে আরো বেশি ভূমিকা নিতে পারবো।’

গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের দাম না কমায় জনমনে ক্ষোভ। অন্যদিকে বিটিআরসির তথ্য মতে, অক্টোবরের তুলনায় নভেম্বরে মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগের সংখ্যা ১০ লাখ ৭৬ হাজার কমেছে। এ প্রসঙ্গে সচিব ফয়জুর রহমান বলেন, ‘আমাদের মূল টার্গেট হলো দেশের মানুষের কাছে ইন্টারনেট পৌঁছানো। জনগণের সম্পৃক্ততা ছাড়া সরকারের ২০২১ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। সরাসরি সরকার গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট সংযোগ দেয় না। বিভিন্ন স্তরে ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে ইন্টারনেট পৌঁছায়। সরকার ব্যান্ডউইথের দাম কমিয়ে দিয়েছে। কিছু কিছু অভিযোগ পাচ্ছি, গ্রাহক পর্যায়ে দাম কমছে না। জনমত সৃষ্টি করে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের দাম কমানো দরকার। এক্ষেত্রে আমরা খুব উদার। ইন্টারনেটের গ্রাহক কমার বিষয়টি নিয়ে আমার বিটিসিএলের মিটিংয়ে আলোচনা করবো কেন এমন হলো।’

ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ঢাকা থেকে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ কেনে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিতে খরচ বেশি। বিটিসিএলের জেলা অফিস থেকে ঢাকার মতো কম দামে ইন্টারনেট পেলে ভোক্তা পর্যায়ে দাম কমানো সম্ভব বলে জানান ব্যবসায়ীরা। জবাবে ফয়জুর রহমান বলেন, ‘আমি পদাধিকার বলে বিটিসিএলের চেয়ারম্যান। সারাদেশে বিটিসিএল থেকে ইন্টারনেট সংযোগ পেতে ব্যবসায়ীরা প্রস্তাব দিলে আমারা বিবেচনা করবো। আমারা ব্যবস্থা করবো যে জেলাগুলোতে বিটিসিএলের একচেঞ্জে এই সুবিধা আছে সেখান থেকে ঢাকার মতো একই দামে ইন্টারনেট কেনার সুযোগ করে দিতে।’

এদিকে সারাদেশে থ্রিজি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং মোবাইল অপারেটরদের সেবার মান প্রসঙ্গে ফয়জুর চৌধুরী বলেন, ‘থ্রিজি নিয়ে আমাদের টার্গেট পূরণ হয়েছে। এখন আমরা ফোরজির চিন্তা করছি।’
নঃৎপ-ভধুলঁৎমোবাইল অপারেটরদের নিয়ে নানা অভিযোগ প্রসঙ্গে সচিব বলেন, ‘কোন অপারেটর পাঁচ কোটি গ্রাহকের কাছ থেকে ৫ টাকা করে নেয় কত টাকা হবে। এক্ষেত্রে মানুষের সচেতন হতে হবে। আমাদের কাছ থেকে অনুমতি না নিয়ে কোনো প্যাকেজ চালু করা হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা সব সময়ই চাই কোয়ালিটি সার্ভিস চালু করতে।’

গত বছরের জুন মাসে লোকসান থেকে বাঁচতে বিটিসিএল, টেলিটক এবং সাবমেরিন কেবল কোম্পানিকে (বিএসসিসিএল) একত্রীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। যদিও এ নিয়ে আর কোনো উদ্যোগ দেয়া যায়নি। এ নিয়ে সচিব বলেন, ‘এ বিষয়ে মাঝে মধ্যে আলোচনা হয়। পক্ষ-বিপক্ষ আছে এ নিয়ে। সার্ভিস ভালো করতে হলে একীভূত করার দরকার আছে কি? আমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে এসেছি বেশিদিন হয়নি, আরো পর্যবেক্ষণ করতে হবে।’

মোবাইল ফোন অপারেটর সিটিসেল বকেয়া টাকা পরিশোধ করতে না পারায় একধিকবার নোটিশ দিয়েছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। সর্বশেষ গত ৪ ডিসেম্বর বকেয়া টাকা পরিশোধ না করলে লাইসেন্স বাতিল করার নোটিশ দেয় বিটিআরসি। এই অপারেটরের কাছে ২৫২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা পাওনা আছে। এ প্রসঙ্গে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের বর্তমান সচিব বলেন, ‘এ বিষয়ে বিটিআরসির সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রস্তাব পেলে আমারা চিন্তা করবো।’

প্রতিনিয়ত ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বকেয়া বাড়ছে বিটিআরসির। টাকা আদায়ের উদ্যোগ প্রসঙ্গে সচিব বলেন, ‘টাকা আদায়ের চেষ্টা অব্যহত আছে। লাইসেন্স বাতিলও করা হয়েছে অনেকের। টাকা আদায়ে প্রয়োজনে সার্টিফিকেট মামলা করবো আমার। সার্টিফিকেট মামলা করলে টাকা অনাদায়ে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে টাকা আদায়ের সুযোগ আছে।’ বাংলামেইল২৪ডটকম