আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥
কেন্দ্রীয় সরকার জম্মু ও কাশ্মীরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হামেশাই যে ১৪৪ ধারার প্রয়োগ করছে তা প্রকৃতই ‘ক্ষমতার অপব্যবহারের’ সমান। বর্তমানে চলা বিক্ষোভ দমনে মোদি সরকারের ১৪৪ ধারার প্রয়োগ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে এমন কথা বলেছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।
কাশ্মীরে নিষেধাজ্ঞা জারি নিয়ে করা একটি মামলায় শুক্রবার এই রায় দেন সুপ্রিম কোর্ট। যেকোনো গণতান্ত্রিক অধিকারের বৈধ অভিব্যক্তি বা অভিযোগের বিরোধিতা মানুষের প্রতিক্রিয়া জানানোর অধিকারের লঙ্ঘন ঠেকাতে জারি নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি পর্যালোচনা করতে জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ এই আদালত।
মামলা দায়ের করেন কাশ্মীর টাইমসের সম্পাদক অনুরাধা ভাসিন এবং কংগ্রেস সাংসদ গুলাম নবি আজাদ। সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে মামলার শুনানিতে বলেন, ‘তথ্য আদানপ্রদানের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ইন্টারনেট এবং এটি মত প্রকাশের স্বাধীনতারই একটি অংশ। সুতরাং এ বিষয়ে দ্রুত পর্যালোচনা করতে হবে।’
এক সপ্তাহের মধ্যে কাশ্মীরের সব বিধিনিষেধ পুনর্বিবেচনা করার কথা বলছে সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবার উল্লিখিত মামলার রায়ে বলা হয়, ‘লাগাতার ১৪৪ ধারা জারি করে রাখা প্রকৃতই ক্ষমতার অপব্যবহার ছাড়া আর কিছু নয়। কোনো গণতান্ত্রিক অধিকারের বৈধ মতামত বা অভিযোগ রোধের হাতিয়ার হিসেবে ১৪৪ ধারাকে ব্যবহার করা যাবে না।’
সুপ্রিম কোর্টের ওই আরও বলা হয়, ‘সংবিধান সবসময় মানুষের বিভিন্ন ধরনের দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশকে স্বাগত জানিয়েছে। কিন্তু সহিংসতা বা জননিরাপত্তার ক্ষেত্রে আশঙ্কা এড়াতে কোনোভাবেই দিনের পর দিন ১৪৪ ধারা জারি রাখাকে মেনে নেয়া যায় না।’ আদালত এটা চলতে পারে না বলেও জানানো হয়।
বিচারপতি এন ভি রমনা, আর সুভাষ রেড্ডি এবং বি আর গাওয়াইয়ের সমন্বয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের একটি বেঞ্চ ইন্টারনেট পরিষেবাকে বাকস্বাধীনতা এবং বাকস্বাধীনতার অংশ হিসেবে উল্লেখ করে অনির্দিষ্টকালের জন্য জম্মু ও কাশ্মীরের ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে রাখা নিয়েও সরকারের সমালোচনা করেছে।
যেভাবে বারবার সরকার ১৪৪ ধারা প্রয়োগ করেছে তা নিয়ে তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রশাসনকে ১৪৪ ধারা এবং অন্যান্য বিধিনিষেধের ব্যবহার সংক্রান্ত সমস্ত আদেশের তালিকা প্রকাশ করার নির্দেশও দেয় দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। ডিভিশন বেঞ্চ এও বলে যে, ‘মতপার্থক্যকে দমন করার অস্ত্র হিসেবে এটাকে ব্যবহার করা যায় না।’
আগস্টে জম্মু ও কাশ্মীরের ‘বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা’ বাতিল করে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে দিখণ্ডিত করা হয়। তখন থেকেই উপত্যকায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেয়া হয়। নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় যেকোনো বড় জমায়েত। সরকারের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়, এমন পদক্ষেপ নেয়ার কারণে সেখানে কোনো প্রাণহানি হয়নি।