শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > জাতীয় > সরকারের শরিকরা অন্ধকারে

সরকারের শরিকরা অন্ধকারে

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নির্বাচন নিয়ে অন্ধকারে খোদ সরকারের শরিক দলগুলো। আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিলেও অন্য শরিক দলগুলো দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগছে। নির্বাচন কখন হবে, কোন পদ্ধতিতে হবে- এরও কোন বার্তা নেই তাদের কাছে। নির্বাচন বিষয়ে এ পর্যন্ত শরিক দলগুলোর সঙ্গে কোন আলোচনাও করেনি আওয়ামী লীগ।

নির্বাচন হলেও ওই নির্বাচনে জোটগতভাবে অংশ নেয়া হবে কিনা- এ নিয়ে কোন আলোচনা নেই ক্ষমতাসীন জোটে। সর্বশেষ নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে পরিকল্পনার কথা বলেছেন এ নিয়েও দ্বিমত রয়েছে সরকারের শরিক দলগুলোর মধ্যে। নেতারা জানিয়েছেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হলেও নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা উচিত। আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে সমাধান বের করা দরকার। এদিকে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়েও পিছিয়ে আছে মহাজোটের শরিক দলগুলো। দোটানায় থাকায় স্থানীয়ভাবে নির্বাচনী কাজ শুরু করতে পারেনি দলগুলো।

শরিক দলের নেতারা জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত নির্বাচন বা নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোন আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি। এমন কোন উদ্যোগও নেই। এমন অবস্থায় জোটেই নির্বাচন নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা রয়েছে। গতকাল সরকারের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেছেন, নির্বাচন হবে কিনা এ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। সংসদের আগামী অধিবেশনে সংবিধান সংশোধন হবে কিনা, দেশ কোন দিকে যাবে তা-ও আমরা জানি না। বিএনপি নির্বাচনে না গেলে জাতীয় পার্টিও নির্বাচনে যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। জাতীয় পার্টির অন্য নেতারাও নির্বাচন নিয়ে একই রকম প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী তার যে অবস্থানের কথা জানিয়েছেন, তাতে বিরোধী দলের নির্বাচনে অংশ নেয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রতিও আমাদের আস্থা নেই। এ অবস্থায় নির্বাচন হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন নিয়ে যে অবস্থানের কথা জানিয়েছেন, সে রকম নির্বাচন হলে অন্যদলগুলো নির্বাচনে যাবে না। সব দল নির্বাচনে অংশ না নিলে জাতীয় পার্টিও যাবে না।

সরকারের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মল্লিক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যই শেষ কথা নয়। জাতীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জায়গা হলো সংসদ। সংসদের আসন্ন অধিবেশনে নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে আস্থাহীনতায় পড়েছে। এমন অবস্থায় সংসদ বহাল রেখে মন্ত্রিসভা রেখে নির্বাচন আয়োজন করলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। তিনি বলেন, তাই এখন পরিস্থিতি অনেকটা টালমাটাল। এ অবস্থায় আলোচনার দরকার আছে। সংসদে আলোচনা হতে পারে।

দলীয় অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের দলীয় অবস্থান হলো আমরা সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন চাই। একই সঙ্গে নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা দরকার বলে মনে করি। নির্বাচন প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে নির্বাচন নিয়ে জোটের কোন আলোচনা হয়নি। নির্বাচন পদ্ধতি নিয়েও কোন আলোচনা নেই। তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হলেও নির্বাচনকালে নির্বাচন কমিশন কতটা ক্ষমতা পাবে। কোন কোন মন্ত্রণালয় তাদের অধীনে থাকবে তা ঠিক করতে হলেও আলোচনার প্রয়োজন। তা না হলে নির্বাচন আয়োজন কঠিন ও দুরূহ হবে।

অপর শরিক জাসদের সাধারণ সম্পাদক শরিক নূরুল আম্বিয়া এ বিষয়ে বলেন, কোন সংসদ সদস্য এমপি পদে থেকে নির্বাচন করার সুযোগ নেই। এছাড়া, সংবিধানে সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর পূরণ করারও বিধান আছে। এমন অবস্থায় সংবিধান অনুযায়ী সংসদ রেখে নির্বাচন করলে এমপিরা তাদের পদে থাকবেন। মেয়াদ পূরণ হওয়ার পর নির্বাচন হলে নির্বাচনকালে কারা দায়িত্ব পালন করবেন এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট কোন বক্তব্য নেই। আর সংসদ ভাঙা বা না ভাঙার এখতিয়ার সংসদ নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর হাতে। বিষয়টি এখন জটিল আকার ধারণ করেছে। এ জন্য আলোচনা প্রয়োজন। জোটগত নির্বাচনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোন আলোচনা নেই বলে জানান শরিক দলের এই নেতা।

গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক নূরুর রহমান সেলিম নির্বাচন বিষয়ে বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হলে আর বিরোধী দল নির্বাচনে গেলে এক ধরনের নির্বাচন হবে। আর বিরোধী দল না গেলে অন্য ধরনের নির্বাচন হবে। এক্ষেত্রে নির্বাচন কিভাবে হয় এটিই দেখার বিষয়। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। নির্বাচন নিয়েও কোন আলোচনা করেনি। নির্বাচন কিভাবে হবে, কিভাবে আসন বণ্টন হবে এ বিষয়েও কোন আলোচনা নেই।

উল্লেখ্য, সোমবার সচিব বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। নির্বাচনকালীন সময়ে মন্ত্রিসভা বহাল থাকবে তবে গুরুত্বপূর্ণ কোন সিদ্ধান্ত নেবে না। সংসদ থাকবে তবে অধিবেশন বসবে না। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে বিরোধী দল তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের মাধ্যমে সমঝোতার আর কোন সুযোগ নেই। দুই দলের পাল্টাপাল্টি এ অবস্থানের বিষয়ে বিশিষ্টজনরা বলছেন, এ অবস্থান দেশকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যাবে।