শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > সরকারকে বিশ্বব্যাংকের অ্যাকশন প্ল্যান

সরকারকে বিশ্বব্যাংকের অ্যাকশন প্ল্যান

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ শিল্পায়ন ও বিনিয়োগ বাড়াতে সরকারের কাছে একটি অ্যাকশন প্ল্যান হস্তান্তর করেছে বিশ্বব্যাংক। এতে ৫ দফা প্রস্তাবনা এবং ৫টি কৌশলগত পরিকল্পনা রয়েছে। সম্প্রতি বিনিয়োগ বোর্ডের সঙ্গে বৈঠক করে বিশ্বব্যাংকের নন-ল্যান্ডিং টেকনিক্যাল অ্যাসিসট্যান্স কমিটি এই অ্যাকশন প্ল্যানটি হস্তান্তর করে।

সূত্র জানায়, আগামী ১০ বছরে প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশে উন্নীত করার জন্য যে কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ প্রত্যাশা করছে সরকার সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিতেই বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে বিনিয়োগ বোর্ড। আলোচনায় সংস্থাটির কাছে সরকারের পরিকল্পনা তুলে ধরে বলা হয়, উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্য দিয়ে আগামী ১০ বছরে সরকার প্রায় দেড় কোটি লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চায়। তখন বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, উচ্চ মজুরি ও ব্যয় বৃদ্ধির কারণে চীন থেকে যে শ্রমঘন শিল্প চলে যাচ্ছে সেগুলোকে বাংলাদেশে আনতে পারলে সরকারের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।
যেসব খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে তার একটি সম্ভাব্য খতিয়ানও তুলে ধরা হয়েছে কর্মপরিকল্পনায়। সেখানে পোশাক খাতে ৬৯ লাখ, অন্যান্য শ্রমঘন রপ্তানিমুখী শিল্পে ৩৫ লাখ, হালকা প্রকৌশল খাতে ১৪ লাখ, জাহাজ নির্মাণ শিল্পে ২ লাখ, কৃষি ব্যবসা খাতে ১৫ লাখ এবং তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি ও ওষুধ শিল্পে আরও ১৫ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। জানা গেছে, সরকারের শিল্পায়ন ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত এ পরিকল্পনা জানার পর বিনিয়োগ বোর্ডের কাছে বিশ্বব্যাংক তাদের প্রস্তাবনাটি তুলে ধরে।
বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাবনা : প্রস্তাবনায় বিশ্বব্যাংক বলেছে, চট্টগ্রামে কোরিয়ান ইপিজেডে বিদেশি বিনিয়োগ ধরার জন্য নন-কমপ্লায়েন্স এসএমই শিল্প স্থাপনে বরাদ্দ দিতে হবে; বন্ডেড ওয়্যার হাউসের বিশেষায়িত কার্যক্রম আরও সম্প্রসারণ করতে হবে; বেজার সক্ষমতা বাড়াতে একজন আন্তর্জাতিক খ্যতিসম্পন্ন প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে। বেসরকারি খাতের জন্য বেজার বাস্তবায়ন নীতি প্রকাশ করতে হবে। বেজা, বেপজা, বেসরকারি ইপিজেড সেল বিনিয়োগ বোর্ড এবং বেসরকারি কমিশনের পরিচালনা পর্ষদে বেসরকারি প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। একই লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে আরও ৫টি কৌশলগত পরিকল্পনাও সরকারের কাছে তুলে ধরা হয়। এগুলো হচ্ছে, নতুন শিল্প গড়ে তুলতে বেজার আওতায় আরও ৪০ হাজার একর জমি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে; রপ্তানিমুখী পণ্যের জন্য সহজে কাঁচামাল আমদানি করতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে আমদানি নীতি আরও সহজ করতে হবে; প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন পিপিপি অফিসকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে এটি অন্যতম ভূমিকা রাখতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল আরও বাড়াতে হবে এবং দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। বিশ্বব্যাংক বলছে, বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছানোর জন্য যে রূপকল্প-২০২১ ঘোষণা করেছে সেটি অর্জন করতে হলে তাদের এই অ্যাকশন প্ল্যানটি বাস্তবায়ন করতে হবে। সংস্থাটির মতে, তৈরি পোশাক খাতের ওপর নির্ভর করে বাংলাদেশ যে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে সেটিকে ১০ শতাংশে নিয়ে যেতে হলে শ্রমঘন শিল্প স্থাপনে জোর দিতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে চীন থেকে যেসব শ্রমঘন শিল্প বেরিয়ে আসছে গুরুত্ব দিতে হবে সেসব শিল্পে। বলা হচ্ছে, কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জন ত্বরান্বিত হতে পারে যদি চীনের মতো দ্রুত বর্ধনশীল দেশ থেকে শ্রমঘন শিল্প কারখানা অন্য দেশে স্থানান্তরকালে বাংলাদেশ ওই স্থানান্তরিত শিল্প স্থাপনের সুযোগ গ্রহণ করে। এর ফলে দেড় কোটি বা তার চেয়ে বেশি লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে এই সম্ভাবনার পেছনে বেশকিছু প্রশ্নও তুলেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলছে, বিদেশি বিনিয়োগ ধরার জন্য কম মজুরির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যেমন এগিয়ে আছে, তেমনি গ্যাস, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ অবকাঠামো সমস্যা এবং ভূমির স্বল্পতার কারণে মিয়ানমার ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোর তুলনায় পিছিয়ে আছে। এই ঘাটতি পূরণে সরকারকে এই অ্যাকশন প্ল্যান দিয়েছে সংস্থাটি।
এদিকে বিশ্বব্যাংকের দেওয়া অ্যাকশন প্ল্যানটি নিয়ে সরকারের নীতি নির্ধারণী মহলে যথেষ্ট উৎসাহ সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, এরই মধ্যে প্রস্তাবনাটির ব্যাপারে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব আবুল কালাম আজাদ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সঙ্গে একটি বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে শিল্পায়ন ও বিনিয়োগ বাড়াতে দেশে ত্বরিত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলকে (বেজা) আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।