শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > “সম্প্রচার নীতিমালা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করবে”

“সম্প্রচার নীতিমালা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করবে”

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: নতুন এ নীতিমালা গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ এবং গণতন্ত্রকে ধ্বংস করবে বলে মত দিয়েছেন বক্তারা। শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে শুরু হওয়া এক আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্যে তারা এ কথা বলেন। ‘গণমাধ্যমের সামনে চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সভাটি আয়োজন করে সম্পাদক পরিষদ।
সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেছেন, নতুন এ নীতিমালা গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করবে, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করবে। তিনি বলেন, এ নীতিমালা সর্বোপরি দেশের উন্নয়ন সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করবে।
তিনি বলেন, ব্রডকাস্ট নীতিমালার একটি গেজেট আমরা হাতে পেয়েছি। এ নীতিমালা টেলিভিশনকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে দেয়া হয়েছে। এর ধারাগুলো দেখে আমরা যে ধরনের মনোভাব পাই তা স্বাধীন গণমাধ্যমের পরিপন্থী।
মাহফুজ আনাম বলেন, একই সঙ্গে অনলাইন মিডিয়াকেও এখন নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চলছে। অথচ এটি এখনও একটি দ্রুত বিকাশমান মিডিয়া।
তিনি বলেন, নীতিমালার ৫:১:৪ ধারায় বলা হয়েছে- রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন ধরনের সামরিক, বেসামরিক বা সরকারি তথ্য প্রচার করা যাবে না। আমাদের কথা হচ্ছে, আমরা সেনাবাহিনী সম্পর্কিত তথ্যের স্পর্শকাতরতার বিষয়ে ভালোভাবেই অবগত। কিন্তু বেসামরিক এবং সরকারি তথ্য গণমাধ্যমে প্রচার করা কেন যাবে না? কাজেই এ ধারায় প্রমাণ করে- এ নীতিমালা গণমাধ্যমের ওপর হস্তক্ষেপ।
তিনি বলেন, সম্প্রচার নীতিমালা সম্পাদকদের নিরস্ত্র করার অভিনব প্রয়াস। এ নীতিমালা হলে বাংলাদেশের শ্রোতা-দর্শক দেশের টিভি-চ্যানেল বাদ দিয়ে অন্য দেশের মিডিয়ার ওপর ঝুঁকবে।
প্রবীণ শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমরা বিপদে আছি। এর মধ্যে এ সমপ্রচার নীতিমালা আরেকটি নতুন বিপদ। এটাকে আপদও বলা যায়। আশা করব, সম্পাদক পরিষদ এ চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করবে।
তিনি বলেন, গণমাধ্যমের ওপর যে আক্রমণ হচ্ছে, এটার একটা বড় কারণ হলো সাংবাদিকদের মধ্যে ঐক্য নেই। এ বিভাজন দুঃখজনক।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এ সম্প্রচার নীতিমালা অপ্রত্যাশিত। এটা কণ্ঠরোধ করবে। এমনিতেই গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রিত। মালিক নিয়ন্ত্রণ করেন, যারা বিজ্ঞাপন দেন তারা নিয়ন্ত্রণ করেন, আবার সরকার আইন-কানুন দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করে। এ নীতিমালা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর- এটা প্রত্যাখ্যান করা দরকার।
বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম বলেন, যারা এ নীতিমালা করেছে তারা আসলে সরকারের বন্ধু বা শুভাকাঙ্খী কিনা, সরকারকে এখনই তা দেখতে হবে।
তিনি বলেন, সরকার মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলছে। কিন্তু সম্প্রচার নীতিমালা গণমাধ্যমকে কঠোর জবাবদিহিতার মধ্যে এনেছে যা সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে খর্ব করবে।
এসোসিয়েশন অব টিভি চ্যানেল ওনার্সের সাধারণ সম্পাদক ও চ্যানেল আইয়ের পরিচালক শাইখ সিরাজ বলেন, আমরা একটি নীতিমালা চেয়েছিলাম। এ চাওয়ার পেছনে কয়েকটি যুক্তিও ছিল। যেমন চাইলে যে কেউ যেনো টিভির লাইসেন্স না পায়। যোগ্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যেনো যোগ্যতার ভিত্তিতেই লাইসেন্স পায়।
তিনি বলেন, বর্তমানে যে নীতিমালা করা হয়েছে এরকম নীতিমালা আমরা চাইনি। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার জন্য সহায়ক নীতিমালা দরকার।
শাইখ সিরাজ বলেন, এ নীতিমালায় আমাদের হাত-পা বেঁধে সাঁতার কাটতে বলা হয়েছে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি দৈনিক সমকালের সম্পাদক গোলাম সারওয়ার।
আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রহমান, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের দুই অংশের সভাপতি শওকত মাহমুদ ও মনজুরুল আহসান বুলবুল, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, নিউ এজ সম্পাদক নুরুল কবির, কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, মাছরাঙ্গা টিভির প্রধান সম্পাদক ফাহিম মুনায়েম প্রমুখ।
সভায় সভাপতিত্ব করেন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত।
বেঙ্গলিনিউজটোয়েন্টিফোর.কম ডেস্ক