বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: সত্য স্বীকার করে সরকার সমর্থকদের মামলার হামলায় পড়েছেন দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম। একই ধরনের সংবাদ ছাপা অন্য পত্রিকার সম্পাদক রাষ্ট্রীয় পদক পাচ্ছেন। অথচ সত্য স্বীকার করা ব্যক্তি পড়েছেন বিপাকে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে এই ইস্যুতে সমালোচনা করলেও সোমবার প্রধানমন্ত্রী নিজেও মাহফুজ আনামের ব্যাপারে মুখ খুলেছেন।
ভাষা শহীদ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘আত্মসম্মানবোধ থাকলে মাহফুজ আনাম পদত্যাগ করতেন’ বলে মন্তব্য করেছেন। ওই সময়ের ভূমিকাকে আমিন-বারীর দালালি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, যুদ্ধারাধীদের মতো ওয়ান ইলেভেনের ষড়যন্ত্রকারীদেরও বিচার হবে।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় ডেইলি স্টার মাহফুজ আনামসহ আরও একটি পত্রিকার বিষয় এসেছে। কিন্তু ওই সময়ে অন্যান্য প্রায় সব গণমাধ্যমের ভূমিকা একই রকম হলেও তাদের বিষয়ে কোনো মন্তব্য আসেনি।
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় একটি বিশেষ সংস্থার দেওয়া সংবাদ যাছাই না করে ছাপানোর কথা স্বীকার করে মাহফুজ আনাম প্রকারান্তরে শেখ হাসিনার পক্ষেই কথা বলেছেন বলে মনে করেন বিশিষ্টজনরা।
ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক বলেন, মাহফুজ আনাম তার ভুল স্বীকার করেছে, এটা তো ভাল কথা। এই স্বীকারোক্তি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে যায়। সে তো মানুষ খুন করেনি। আমার মনে হয় এখানে অন্য কোনো কারণ আছে।
সম্প্রতি বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলের টকশোতে মাহফুজ আনাম স্বীকার করেছেন যে, সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় যাচাই না করে সংবাদ ছাপা তার সাংবাদিকতা জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। অবশ্য টকশোর আলোচনায় মাহফুজ আনাম আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম উল্লেখ করেননি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাপ্তাহিক-এর সম্পাদক গোলাম মোর্তোজার মতে, কারা ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকদের ধরে নিয়ে গেল, কারা নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায় করল, কারা সেটা সিডি করল, কারা সেটা গণমাধ্যমে পৌঁছে দিলো, কারা প্রেসার দিয়ে (পত্রিকায়) ছাপাল?
‘এদের কাউকে অভিযুক্ত বা এদের বিষয়ে তদন্ত না করে মাহফুজ আনামকে অভিযুক্ত করার কারণে দৃশ্যমানভাবে বোঝা যায় মাহফুজ আনামকে শুধু এই কারণে নয়, অন্য কোনো কারণে এসব করা হচ্ছে।’
গোলাম মোর্তোজা আরও বলেন, ‘একই ধরনের কাজ করে কাউকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরস্কৃত করা হবে আর কাউকে মানহানি ও রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামি হতে হবে এটা ঠিক স্বাভাবিক ব্যাপার বলে মনে হয় না। এই বিষয়টা গণমাধ্যমের একজনকে দিয়ে বাকিদের ভয় দেখানোর একটা প্রক্রিয়া বলে আমার মনে হয়।’
বিষয়টিকে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় মাহফুজ আনামের বিচার ও গ্রেফতার দাবি করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। এর পরপরই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ বিভিন্নজন মানহানির মামলা করতে শুরু করে।
এটিএন নিউজের সেই টকশো অনুষ্ঠানে সহ-আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের বার্তা সম্পাদক গাজী নাসিরউদ্দিন আহমেদ খোকন।
খোকনের করা প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতেই মাহফুজ আনাম তার ভুল স্বীকার করেছিলেন।
গাজী নাসিরউদ্দিন আহমেদ খোকন জানান, ‘শুধু সম্পাদক নন, মামলা যে কারো বিরুদ্ধেই হতে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে, মামলার মেরিট রয়েছে কিনা। যারা দলে দলে মামলা করছেন আমার মনে হয় না তারা সে বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন। সামনে আওয়ামী লীগের সম্মেলন, কেউ কেউ হয়ত এ সময়ে দলীয় নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে থাকতে পারেন। জরুরি অবস্থার সময় সংবিধান লঙ্ঘন থেকে শুরু করে জবরদস্তিমূলক এন্তার ঘটনা ঘটেছে। সেসবের প্রতিকারের কোনো জোরালো উদ্যোগ তো আমরা দেখিনি।’
‘তাহলে হঠাৎ করে একজন সাংবাদিকের একটি বক্তব্য নিয়ে এত শোরগোল করাটা নিছকই শোরগোল মনে হবার কারণ আছে। সম্পাদকের বক্তব্য ধরে গঠনমূলক যা যা হতে পারত তার কিছু হয়নি। যা হচ্ছে তা মানুষের কাছে কাঙ্ক্ষিত বলে মনে হয় না। একদল মামলা করছে আর একদল সাফাই গাইছে। মামলায় যদি দল হিসেবে আওয়ামী লীগের কোনো ভূমিকা থাকে তাহলে অবশ্যই তাদের হয়রানিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সরে আসা উচিত,’ যোগ করেন খোকন।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে মাহফুজ আনাম ইস্যু
সম্প্রতি শুরু হওয়া এই ইস্যু দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশি গণমাধ্যমেও স্থান পেয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে হওয়া মামলার নিন্দা জানিয়েছে। বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি (ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন)। বিবিসি ওয়ার্ল্ডের ছাপা হওয়া সে প্রতিবেদনে সরকারের সমালোচনাকারী গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণসহ নানা নেতিবাচক আচরণের প্রকাশ হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়।
তবে, সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সরকারের পক্ষ থেকে কোনো গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে না বলে দাবি করেন। একই সঙ্গে মাহফুজ আনামের সত্য স্বীকারোক্তিকে ‘সাহসী কাজ’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
সাক্ষাৎকারে তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘১/১১-এর ঘটনায় শুধু মাহফুজ আনাম নয়, ওই সময়ের সকল কুশীলবদের বিচারের আওতায় আনার ব্যবস্থা করা উচিত।’
ওই সময়ের অনেক কুশীলব আওয়ামী লীগ ও সরকারে আছে বলেও স্বীকার করেন তথ্যমন্ত্রী।