সংসারে অভাব, তবুও ২০ বছর ধরে পথের কুকুরকে খাবার দেন তিনি

অনলাইন ডেস্ক ॥
দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে গোপালগঞ্জ শহরে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। এখন বয়স হয়েছে। রিকশার প্যাডেল ঘোরাতে পায়ে তেমন জোর পান না। শহরের বেশিরভাগ রিকশা ইঞ্জিনচালিত হলেও তিনি প্যাডেল ঘুরিয়েই রিকশা চালান। অর্থাভাবে নিজের রিকশাটিতে মোটর লাগাতে পারেননি। প্যাডেলচালিত বলে এখন অনেকেই তার রিকশায় উঠতে চান না। তাই আয়ও অন্য রিকশাচালকদের থেকে অনেক কম। এই স্বল্প আয়েও দীর্ঘ ২০ বছর ধরে গোপালগঞ্জ শহরের ৮-১০টি পথের কুকুরকে প্রতিদিন খাবার খাওয়ান ৬৫ বছর বয়সী রিকশাচালক বাবর আলী মোল্লা।

শহরের সবচেয়ে নিকটতম লতিফপুর ইউনিয়নের ঘোষেরচর (দক্ষিণপাড়া) গ্রামে বসবাস করেন বাবর। মা, স্ত্রী, এক মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে তার সংসার। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। মেয়ে শহরের বঙ্গবন্ধু কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছে দুবছর আগে। ছেলে স্বর্ণকলি স্কুলে ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর দুজনেরই পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে অর্থাভাবে। মেয়েকে বিয়েও দিতে পারছেন না।

এতো কষ্টের মধ্যেও বাবর আলী মোল্লার দিন শুরু হয় পথের কুকুরকে খাবার খাওয়ানোর মধ্য দিয়ে। সারাদিন রিকশা চালিয়ে বিকেলের দিকে তিনি চলে যান বিসিক শিল্পনগরী এলাকার বেকারিতে। সেখানে গিয়ে কোনো দিন ৭০ টাকা আবার কোনো দিন ১০০ টাকার ঝুড়ি কেক কিনে কুকুরকে খাইয়ে বাড়ি চলে যান।

অবশিষ্ট যা থাকে সকালে সেই কেক নিয়ে চলে আসেন শহরের পুরাতন লঞ্চঘাট এলাকায়। সেখানে পৌঁছেই শিস বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে চার-পাঁচটি কুকুর ছুটে আসে। এরপর আলাদা আলাদা করে খেতে দেন কুকুরগুলোকে। এভাবে খাবার খাওয়ান শেখ কামাল স্টেডিয়াম এলাকায়, চৌরঙ্গী, বঙ্গবন্ধু কলেজ এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে। প্রতিদিন ৮-১০টি কুকুরকে খাবার খাইয়ে চলছেন বাবর আলী মোল্লা।

তার রিকশার গদির নিচেই খাবার সংরক্ষণ করা থাকে। পথে কোথাও ক্ষুধার্ত কুকুর দেখলেই রিকশা থামিয়ে খেতে দেন তিনি। শুধু খেতে দেয়াই নয়, কোনো কুকুর অসুস্থ হলে বা দুর্ঘটনায় আহত হলে পরম মমতায় ওষুধ খাইয়ে, সেবা দিয়ে সুস্থ করে তোলেন তিনি। এই অবলা জীবের প্রতি ভালোবাসা দেখে অনেকেই তাকে পাগল বলে উপহাস করেন।

কুকুরকে খাবার খাওয়ানোর বিষয়ে রিকশাচালক বাবর আলী মোল্লা বলেন, কুকুরকে কেন খেতে দেই এটা আমি বলতে পারবো না। তবে কুকুরগুলোকে খেতে দিয়ে আমি তৃপ্তি পাই। ছোট বেলায় বাড়িতে কুকুর পালন করতাম। সেই থেকেই মূলত কুকুরের প্রতি একটা টান রয়ে গেছে। আমি সারাদিন পরিশ্রম করে ৩শ-৪শ টাকা রোজগার করি। সেই রোজগারের ৭০-১০০ টাকা কুকুরের খাবারের পেছনে ব্যয় করে সংসার চালাতে কষ্ট হয়। তারপরও এই পশুগুলোকে অভুক্ত রেখে আমি খাবার খাব সেটা পারি না।
তিনি বলেন, ঝড়, বৃষ্টিতে রিকশা চালাতে না পারলেও প্রতিদিন কুকুরগুলোকে খাওয়ানোর জন্য বাড়ি থেকে বের হতে হয়। এতে অনেকেই আমাকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কথা বলাবলি করে। যত দিন বাঁচব, ততদিন এসব কুকুরকে খেতে দেব।

শেয়ার করুন

Related News

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫