স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিমানবাহিনীর সদস্যদের সংবিধান তথা গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় যে কোনো হুমকি মোকাবেলায় সদাপ্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আপনাদের ঐক্যবদ্ধ থেকে নিজেদের সর্বদা প্রস্তুত রাখতে হবে। আমার বিশ্বাস আপনারা নিজেদের প্রজ্ঞা, পেশাগত দক্ষতা ও কর্তব্যনিষ্ঠা দিয়ে স্বদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজেদের সুনাম বৃদ্ধি করবেন।’
ঢাকা সেনানিবাসে বিএএফ বাশার ঘাঁটিতে বুধবার সকালে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সদস্যদের এক দরবারে ভাষণকালে এ কথা বলেন তিনি। বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল এনামুল বারী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। সরকার প্রধান হিসেবে বিমানবাহিনীকে যতটুকু দেওয়া সম্ভব ততটুকু দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভবিষ্যতে একটি আধুনিক বিমানবাহিনী গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় সবকিছু আমি করব ইনশাল্লাহ।’
তিনি বলেন, ‘বিমানবাহিনীর সদস্যরা নেতৃত্বের প্রতি আস্থা, পারস্পরিক বিশ্বাস, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ, কর্তব্যপরায়ণতা, দায়িত্ববোধ এবং সর্বপরি শৃঙ্খলা বজায় রেখে স্বীয় কর্তব্য সম্পাদনে একনিষ্ঠভাবে কাজ করবেন।’
স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের আর্থিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও জাতির পিতা একটি দক্ষ ও চৌকস বিমানবাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। এর ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার বিমানবাহিনীকে এগিয়ে নিয়ে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম করে গড়ে তুলতে কার্যকর পরিকল্পনা নিয়েছে। সেই সঙ্গে বিমানবাহিনীর আধুনিকীকরণ, ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন ও কল্যাণমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নেও ইতোমধ্যে ব্যাপক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০১০-১১ অর্থবছরে চীন থেকে ১৬টি যুদ্ধবিমান এবং রাশিয়া থেকে ৩টি এমআই-১৭১ হেলিকপ্টার এবং ২০১১ সালে প্রথমবারের মতো একটি সারপেস টু এয়ার মিসাইল সিস্টেম বিমানবাহিনীতে সংযোজন করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘গত অর্থবছরে চীন থেকে ৯টি জেড ট্রেইনার বিমান কেনার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। পাশাপাশি রাশিয়া থেকে রাষ্ট্রীয় ঋণের আওতায় ২৪ অ্যাডভান্সড জেট ট্রেইনার এয়ারক্রাফট ও ৫টি এমআই-১৭১ হেলিকপ্টার কেনার চুক্তিপত্র প্রক্রিয়াধীন। এছাড়া চলতি অর্থবছরে দুটি মেরিটাইম সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ হেলিকপ্টার ও তিনটি বেসিক ট্রান্সপোর্ট ট্রেইনার বিমান সংগ্রহের কার্যক্রমও হাতে নেওয়া হয়েছে।’
২০১০-১১ ও ২০১১-১২ অর্থবছরে বিমানবাহিনীর ঘাঁটি পাহাড়কাঞ্চনপুর, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ও মৌলভীবাজারে পুরাতন রাডারের প্রতিস্থাপক এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও বঙ্গোপসাগরে বিস্তীর্ণ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তদারকির প্রয়োজনে ৪টি এয়ারডিফেন্স রাডার কেনার চুক্তি সম্পাদন করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বিএএফ ঘাঁটি বঙ্গবন্ধুতে বঙ্গবন্ধু অ্যারোনটিক্যাল সেন্টার স্থাপনের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া বিমানবাহিনীর জন্য অনেকগুলো নতুন ইউনিট প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এফ-৭ যুদ্ধবিমানের জন্য একটি ওভারহলিং প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজ চলছে এবং ফোর্সেস গোল-২০৩০ এর আলোকে এমআই সিরিজের হেলিকপ্টারের জন্য একটি ওভারহলিং প্ল্যান্ট স্থাপনেরও টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে।’ বিমানবাহিনীর সদস্যগণ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলাসহ উদ্ধার তৎপরতা ও অন্যান্য অভ্যন্তরীণ সংকট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।