শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > সংখ্যালঘু শব্দেই বিশ্বাসী নই: মোদি

সংখ্যালঘু শব্দেই বিশ্বাসী নই: মোদি

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ নতুন সরকার গঠনের দিন যত এগিয়ে আসছে, যথার্থ রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে নিজেকে মেলে ধরছেন বিজেপির আত্মবিশ্বাসী প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদি।

ভারতীয় দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মোদি বুঝিয়ে দেন যে, প্রধানমন্ত্রী পদের মর্যাদা রক্ষার যোগ্যতা রয়েছে তার। রাজধর্ম পালন করে সরকার চালানোর ক্ষেত্রে তিনি কারও প্রতি প্রতিহিংসাপরায়ণ হতে চান না। বরং সমদৃষ্টি নিয়ে চলে সংখ্যালঘু-সহ সকলের উন্নয়ন করতে চান। সঙ্ঘের ইশারায় চলার থেকে সংবিধান মেনে কাজ করতেই তিনি আগ্রহী বলে জানান।

অটলবিহারী বাজপেয়ী শরিকদের পেয়েছিলেন ভোটের পরে। আর মোদিকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করে বিজেপি ভোটের আগেই ২৫ দলকে পাশে পেয়েছে। অতীতে কোনও জোটের ক্ষেত্রে যা হয়নি।

মোদী এও জানিয়েছেন, সরকারে প্রয়োজনে রাহুল গান্ধীর মতো বিরোধী নেতাদেরও সমর্থন নিতে চান তিনি। সরকার চালানোর ক্ষেত্রে দরকার হলে নিজের দলের নেতা-কর্মীদেরও যে তিনি ছাড় দেবেন না, তাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন।

আরএসএস এবং তার প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, মোদি কিন্তু সুকৌশলে সাম্প্রদায়িকতা সংক্রান্ত বিতর্কে না জড়িয়ে দেশের আগামী দিনের প্রশাসক হিসেবে নিজের ভাবনা ও পরিকল্পনার কথাই তুলে ধরেছেন।

এই মোদিকেই গুজরাট দাঙ্গার পর রাজধর্ম পালনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন বাজপেয়ী। সে দিনের সাংবাদিক বৈঠকে বাজপেয়ীর পাশে বসেও মোদি বলেছিলেন, তিনি সেই দায়িত্বই পালন করছেন। মোদি বুঝিয়ে দিলেন, প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসে রাজধর্ম পালন করাই তাঁর প্রধান লক্ষ্য।

মোদির সরকারে সঙ্ঘের প্রভাব কতোটা থাকবে জানতে চাইলে মোদি বলেন, ‘সরকার চলে সংবিধান অনুযায়ী। সরকারের ধর্ম একটাই, ভারত প্রথম। সরকারের একটিই পবিত্র গ্রন্থ, দেশের সংবিধান। আর সরকারের কার্যশৈলী সকলকে সঙ্গে নিয়ে সকলের উন্নয়ন।’

রামমন্দির, ৩৭০ ধারার মতো সঙ্ঘের মূল বিষয়গুলো যে সংবিধানের আওতা মেনেই হবে, সে কথা জানিয়ে দিয়েছেন মোদি।

প্রশ্ন করা হয়, সংখ্যালঘুরা কি তাঁকে ভয় পান? জাবাবে মোদি বলেন, এ জাতীয় শব্দেই তিনি বিশ্বাসী নন। এই প্রসঙ্গে তিনি গুজরাটে তার উন্নয়নের কার্যশৈলীর কথা তুলে ধরেন, যেখানে সংখ্যালঘুরাও তার উন্নয়নের শরিক।

রাজ্যে কারও অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে তার দায় কি মুখ্যমন্ত্রীর উপরেও বর্তায় না!

মোদির উত্তর, সেই দায় তিনি প্রথম দিন থেকেই নিয়েছেন। বিধানসভাতেও এ নিয়ে বলেছেন, তার রেকর্ড আছে। গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে প্রতিটি প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন তিনি। ২০০২-এ জেতার পরে আমার বক্তব্য ছিল, ‘অভয়ং, অভয়ং, অভয়ং’। সেই অবস্থানেই অনড় রয়েছেন তিনি জানালেন মোদি।

মোদির প্রচারে যে গোলাপি বিপ্লবের কথা বলছেন, সেটাও সাম্প্রদায়িক বক্তব্য নয়, বরং আর্থিক বিষয়। গবাদি পশু চলে গেলে দুধের আকাল পড়বে। গোটা অর্থনীতি শোধরানোই তার লক্ষ্য।

মোদি যে কোনও মতেই সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে সংক্রান্ত বিতর্কে জড়াতে নারাজ, স্পষ্ট ভাবে আজ তা জানিয়ে দেন। বলেন, গলায় দড়ি বেঁধে বলাতে চাইলেও আমি বিরোধীদের মতো বিভাজনের রাজনীতি করব না।

তিনি ক্ষমতায় এলে সোনিয়া গান্ধীর জামাই রবার্ট ভদ্র কি জেলে যাবেন? এর জবাবে প্রতিহিংসাপরায়ণ না হওয়ার আশ্বাস দিয়ে মোদি বলেছেন, গত ১৪ বছরে তিনি কারও ফাইল খোলেননি। এ সবে মন দিলে মানুষের উন্নয়নের কাজ ব্যাহত হবে। দিনে সাড়ে তিন ঘণ্টা ঘুমিয়ে মানুষের জন্য কাজ করাই তার প্রতিদিনের অভ্যাস। মানুষের কাজ করার জন্য পাঁচ বছর নিতান্তই কম। ফলে এ সব কাজে শক্তি ব্যয় করে লাভ নেই।

তবু কেন ব্যক্তিগত আক্রমণ করছেন প্রচারে? মোদির বক্তব্য, রাজনীতিতে কটাক্ষকে ভাল মনে নেওয়ার রেওয়াজ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ না থাকলে আনন্দই থাকে না।

তবে এও জানান, কংগ্রেসের প্রথম পরিবারের বিরুদ্ধে কিছুই বলা যাবে না, এমন বাধ্যবাধকতা তাঁর নেই। নিজের উপরে আসা ব্যক্তিগত আক্রমণও জনতার বিচারের উপরেই ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।

মোদি বিরোধীদের আনা সব অভিযোগেরই জবাব দিয়েছেন। টফির দামে শিল্পপতিদের জমি দেওয়া নিয়ে রাহুল গান্ধীর অভিযোগের জবাবে টেনে এনেছেন গুজরাটে কংগ্রেস আমলের কথা, যখন আরও কম পয়সায় জমি দেওয়া হয়েছে।

ছোটখাটো বিষয়ে না ঢুকে গোটা সাক্ষাৎকারে মোদির বোঝাতে তৎপর হন কী ভাবে নীতি রূপায়ণ করা যায়, সে ব্যাপারে তার ভাবনার কথা। কী ভাবে গরিবের উত্থান হবে, কী ভাবে মূল্যবৃদ্ধি দূর হবে, পেশ করেছেন তার রূপরেখা। বলেছেন বিদেশ থেকে কালো টাকা উদ্ধারে চুক্তি করার কথা।

মোদির এসব বক্তব্যের পরে কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, মোদির পুরোটাই ভাঁওতা। তিনি ক্ষমতায় এলে দেশের জনতার কী করুণ দশা হবে, তা সকলেরই জানা।

জবাবে বিজেপি নেত্রী মীনাক্ষী লেখি বলেন, কংগ্রেসের দিন শেষ। তাই হতাশায় মোদি-বিরোধিতা ছাড়া তারা আর কিছু দেখে না। ঢাকাটাইমস