শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > সংকট পিছু ছাড়ছে না বিএনপির, পদবঞ্চিতরা সক্রিয় হচ্ছে

সংকট পিছু ছাড়ছে না বিএনপির, পদবঞ্চিতরা সক্রিয় হচ্ছে

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
একের পর এক সংকট লেগেই রয়েছে বিএনপির। ‘ভুল’ সিদ্ধান্তের কারণে সাংগঠনিকভাবে দাঁড়াতেই পারছে না দলটি। সংকট যেন পিছু ছাড়ছেই না। কোনো রাজনৈতিক ইস্যুই কাজে লাগাতে পারছে না দলটি। দীর্ঘদিন পর বড় কমিটি ঘোষণা করা হলেও কমিটিতে স্থান পাওয়া নিয়ে সংকট আরো গনিভুত হচ্ছে। অনেকে পদত্যাগ করছেন আবার অনেকে পদত্যাগের জন্য অপেক্ষা করছেন।

এদিকে সংস্কারপন্থিদের দলে না নেওয়ায় তারা নতুন দল গঠন করতে যাচ্ছে এবং বিএনপির সংক্ষুব্ধদের সঙ্গে ইন্দোন জোগাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া সৌদি আরব থেকে ফিরে আন্দোলন ও পদবঞ্চিদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিবেন।

বিএনপির যেসব ত্যাগী ও সক্রিয় নেতা নতুন কমিটিতে পদবঞ্চিত হয়েছেন অথবা প্রত্যাশিত পদ পাননি, তাদের উপযুক্ত পদে বসানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। দলটির নীতি-নির্ধারকদের কাছ থেকে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানার পরপরই অভিমান ভেঙে ফের সক্রিয় হচ্ছেন সংক্ষুব্ধ নেতারা। সীমিত আকারে হলেও তারা দলীয় কর্মকান্ডে অংশ নিতে শুরু করেছেন।

৬ আগস্ট বিএনপির ৫০২ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি, ১৭ সদস্যের স্থায়ী কমিটি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের ৭৩ জন সদস্যের নাম ঘোষণা করা হয়। জ্যেষ্ঠতা লংঘন, পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পেয়ে কমিটি ঘোষণার পরই নেতাদের একটি অংশ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায়। কমিটি ঘোষণার সাড়ে ৪ ঘণ্টার মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন মোসাদ্দেক আলী ফালু। একইদিন বিকালে পদত্যাগ করেন সহ-প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম। এছাড়া পরবর্তী সময়ে নির্বাহী কমিটির সদস্য মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল পদত্যাগ করেন।

এছাড়া স্থায়ী কমিটিতে জায়গা না হওয়ায় মনোক্ষুণ্ণ হন শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, আবদুল্লাহ আল নোমান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদসহ আরও কয়েকজন। আর প্রত্যাশিত পদ না পেয়ে আমান উল্লাহ আমান, নাজিমউদ্দিন আলম, ফজলুল হক মিলন, নাদিম মোস্তফা, গোলাম আকবর খন্দকার, মিজানুর রহমান মিনু, মশিউর রহমান, ডা. মাজহারুল ইসলাম দোলন, আবদুল লতিফ জনি, বজলুল করিম চৌধুরী আবেদসহ কয়েক ডজন নেতা অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

তাদের কেউ কেউ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার পাশাপাশি রাজনীতি ছেড়ে দেয়ার হুশিয়ারিও দেন। প্রত্যাশিত পদ না পেয়ে অনেকেই পরবর্তী করণীয় নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেন। আমান উল্লাহ আমান ও তার অনুসারীরা বারিধারায় একটি বাসায় কয়েক দফা বৈঠক করেন। ওইসব বৈঠকে কমিটি নিয়ে বড় ধরনের বিদ্রোহ করার ব্যাপারে সবাই একমত হন। প্রত্যাশিত পদ না দেয়া হলে গণপদত্যাগের হুশিয়ারি দিয়েছেন কোনো কোনো নেতার অনুসারীরা।

কোনো কোনো নেতা দলীয় প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের বঞ্চনার কথাও জানান। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাদের অভিযোগের কথা গুরুত্বের সঙ্গে শোনেন। এ প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, কমিটি ঘোষণার পর অনেকেই চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করেছেন, ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন। বঞ্চিতরাও দেখা করেছেন, কথা বলেছেন। চেয়ারপারসন তাদের বলেছেন, ‘কাজ করো, দেখব।’ তার এমন কথায় অনেকেই আশ্বস্ত হয়ে দলীয় কর্মকান্ডে ফের সক্রিয় হচ্ছেন।

চেয়ারপারসনের এমন আশ্বাস ও সংক্ষুব্ধদের উপযুক্ত পদে বসানো হবে- দলের এমন নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা সংশ্লিষ্ট নীতি-নির্ধারকদের কাছ থেকে জানার পরই পাল্টাতে থাকে দৃশ্যপট। ধীরে ধীরে সক্রিয় হয়ে ওঠে প্রায় সব স্তরের সংক্ষুব্ধ নেতারা। যদিও কৌশলগত কারণে নতুন কমিটি পরিবর্তনের বিষয়ে কঠোর মনোভাব অব্যাহত রেখেছে দলের হাইকমান্ড। কারণ কমিটি পরিবর্তনের বিষয়ে প্রকাশ্য ঘোষণা দেয়া হলে, কেন্দ্রের ওপর নানামুখী চাপ সৃষ্টি হতে পারে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন জানান, বিএনপি একটি বড় দল। পদ পাওয়ার মতো অনেক যোগ্য নেতা রয়েছেন। সবাইকে তাদের প্রত্যাশিত পদে পদায়ন করা সম্ভব হয়নি। তাই কারও কারও মধ্যে ক্ষোভ-অসস্তোষ থাকতেই পারে।

সূত্র জানায়, দলের হাইকমান্ডের আশ্বাস পেয়ে সংক্ষুব্ধ অনেকেই সক্রিয় হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গত ১২ আগস্ট আরাফাত রহমান কোকোর জন্মদিনে তার কবর জিয়ারতের সময় খালেদা জিয়ার সঙ্গে ক্ষুব্ধ অনেক নেতাকেই দেখা গেছে। কমিটি ঘোষণার পর নীরব থাকলেও ওইদিন খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন আবদুল আউয়াল মিন্টু, আমান উল্লাহ আমান, নাজিমউদ্দিন আলমসহ আরও অনেকে। এছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও নতুন কমিটি নিয়ে জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করতে গেলে, সেখানেও বঞ্চিত নেতাদের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

তবে সেখানে ছিলেন না আবদুল্লাহ আল নোমান। শেষ পর্যন্ত তারও অভিমান ভাঙে। পবিত্র হজ পালনে ৭ সেপ্টেম্বর বিকালে খালেদা জিয়া সৌদি আরব যাওয়ার সময় তাকে বিদায় জানাতে বিমানবন্দরে হাজির হন নোমান। তার উপস্থিতিতে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে উচ্ছ্বাস দেখা দেয়। তারা মনে করেন, এই মুহূর্তে দলে নোমানের মতো অভিজ্ঞ ও আস্থাভাজন নেতার বড় প্রয়োজন। চেয়ারপারসন তাকে যথাযথ মূল্যায়ন করবেন এমন প্রত্যাশা তার অনুসারীদের। কমিটি ঘোষণার পর দীর্ঘদিন দলের সব কর্মকান্ড থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখেন তিনি (নোমান)। কিন্তু এই নীরবতা ভেঙে পবিত্র ঈদুল আজহায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন তিনি।

নীতি-নির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে, স্থায়ী কমিটিতে দুটি পদ ফাঁকা রয়েছে। ওই দুই পদে নোমান ও মিন্টুকে জায়গা দিতে তার অনুসারীরা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছেন। সরাসরি না বললেও বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখবেন বলে তারা জানিয়েছেন। হাইকমান্ডের এমন আশ্বাস পেয়েই নোমান সক্রিয় হন। তবে ফের পুনর্মূল্যায়ন না হলে নোমান আনুষ্ঠানিকভাবে নিষ্ক্রিয় হতে পারেন বলে তার ঘনিষ্ঠজনরা জানান। প্রত্যাশিত পদোন্নতি না পেয়ে কমিটি ঘোষণার পর তাৎক্ষণিকভাবে পদত্যাগ করেন সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম। পুনর্মূল্যায়ন করা হলে আবারও সক্রিয় হবেন তিনি।

সূত্র জানায়, পূনর্মূল্যায়ন হতে পারে আমান উল্লাহ আমান, জয়নাল আবদিন ফারুক, নাজিমউদ্দিন আলম, গোলাম আকবর খন্দকার, বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, আবদুল লতিফ জনিসহ আরও কয়েক নেতার। এছাড়া এক নেতার এক পদ বাস্তবায়নের ফলে প্রায় অর্ধশত পদ ফাঁকা হবে। এসব পদে অনেককে পদোন্নতি দেয়া হবে। পাশাপাশি পদবঞ্চিতদেরও জায়গা হবে নতুন কমিটিতে।