স্টাফ রিপোর্টার:
গাজীপুরের শ্রীপুরে বাগেরহাটের একনারী ব্যবসায়ীকে মারধর, গর্ভপাত ঘটানো এবং মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চেয়ে শনিবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে গাজীপুরে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী ওই নারী।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, তিনি ও তাঁর স্বামী সফিকুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ফরিদপুর গ্রামে ভাড়া থেকে ব্যবসা করে আসছেন। প্রথমে তাঁরা রফিকুল শেখের বাড়িতে, পরে তাঁর ভাই মজিবুর শেখের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। ভাড়া থাকাকালীন বাড়ির মালিকের পরিবারের সঙ্গে তাঁদের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে।
ভুক্তভোগী আরও জানান, গত বছরের ৮ মার্চ বিকেলে রফিকুল শেখের ছেলে শ্যামল ও তার মা সুমি বেগম ব্যবসার প্রয়োজনে তাঁর ও তাঁর স্বামীর কাছ থেকে নগদ ১০ লাখ ৫৭ হাজার টাকা ধার নেন। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, দুই দিনের মধ্যে টাকা ফেরত দেবেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে টাকা না দিয়ে নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপণ শুরু করেন এবং পরে টাকা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানান। টাকা চাইতে গেলে উল্টো তাঁদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়, এমনকি তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাও দায়ের করা হয়।
এসব ঘটনার জেরে গত বছরের ৭ জুলাই নয়নপুর এলাকায় তাঁদের রাস্তায় আটকে মারধর করা হয়। এ সময় তাঁর স্বামীর মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। বাধা দিতে গেলে সালমা শারীরিক লাঞ্ছনার শিকার হন। পরে তাঁদের ভাড়া বাসা থেকেও বের করে দেওয়া হয়। পরে তাঁরা পাশের ধনুয়া গ্রামে আশ্রয় নেন।
এরপর, গত ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখ সন্ধ্যায় সালমা আক্তার নয়নপুর এলাকায় পায়ে হেঁটে বাসায় ফেরার সময় মোটরসাইকেলে এসে রফিকুলের ছেলে শ্যামল ও মফিজউদ্দিনের ছেলে আরমান পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে তাঁকে ফেলে দেন বলে অভিযোগ করেন। এতে তিনি গুরুতর আহত হন এবং তাঁর গর্ভে থাকা তিন মাসের সন্তান নষ্ট হয়ে যায়।
এসব ঘটনার পর তিনি ৯ জনকে আসামি করে শ্রীপুর থানায় মামলা দায়ের করেন, যার নম্বর ২৮/২০২৪। তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই অহিদ মিয়া পক্ষপাতিত্ব করেছেন বলে অভিযোগ করেন সালমা আক্তার। তাঁর দাবি, ঘটনাস্থলের প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য উপেক্ষা করে মামলার দুই আসামি ছাত্রলীগ কর্মীকে রক্ষা করতে মনগড়া ও পক্ষপাতমূলক প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। এ কারণে তিনি গাজীপুর আদালতে তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ‘না—রাজি’ আবেদন করেন।
আদালতের নির্দেশে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পান পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আদালত পিবিআইকে নির্দেশ দেন, মামলার চার্জশিট থেকে গর্ভপাতের অভিযোগ থেকে বাদ পড়া আসামিরা গর্ভপাতের ঘটনায় জড়িত কি—না, তা তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু চার মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন সালমা আক্তার।
সংবাদ সম্মেলনে সালমা বলেন, আমি গাজীপুরে গিয়ে মামলার খোঁজ নিতে পারছি না। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বারবার আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। আমি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি চাই, দ্রুত এই মামলার সঠিক তদন্ত হোক এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।