শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > শ্রমিকদের শোষণ করছে বাটা

শ্রমিকদের শোষণ করছে বাটা

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে জুতার বাজারে অন্যতম ব্র্যান্ডের নাম বাটা। ১৯৬২ সাল থেকে এ ভূখণ্ডে বাটা রমরমা ব্যবসা করে আসছে। দেশের প্রতিটি জেলা শহরে বাটার একাধিক শো’রুম রয়েছে। ব্যবসা আরো বিস্তৃত করতে চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে খোলা হচ্ছে নতুন নতুন শো’রুম।

সম্প্রতি এসব শো রুমের শ্রমিকরাই শোষণের অভিযোগ তুলেছেন আর্ন্তজাতিক এ কোম্পানিটির বিরুদ্ধে। এ নিয়ে কয়েক দফা আন্দোলনও করেছেন সংশ্লিষ্ট শ্রমিকরা।

রাজধানীর কয়েকটি শো’রুমের বিক্রয় শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোনো প্রকার নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র এমনকি মাসিক বেতনও দেওয়া হয় না এ কোম্পানির বিক্রয় শ্রমিকদের। নেই কোনো হাজিরা খাতা এবং সাপ্তাহিক ছুটিও। তবে শ্রমিকদের বেলায় একটুও ছাড় দেয়নি কোম্পানিটি। কোনো কারণে কর্মস্থলে হাজির হতে বিলম্ব হলে সেদিনের কমিশন থেকে বঞ্চিত হতে হয় শ্রমিকদের।

দেশে বাটার ২৪০টিরও বেশি শো’রুমে প্রায় ১২শ’ শ্রমিক কাজ করেন। এসব শো’রুমে ১৬-১৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করে এলেও পদোন্নতি হয়নি অনেক শ্রমিকের, এমনকি কমিশনও বাড়েনি। তাদের কাউকেই এখন পর্যন্ত নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র দেওয়া হয়নি। কিন্তু কোম্পানির সিদ্ধান্তের বাইরে গেলেই ছাটাইয়ের হুমকি দেওয়া হয় প্রতিনিয়ত।

শ্রমিকরা জানান, তাদের মাসিক বেতনও দেওয়া হয় না। একটি শো’রুমে সারাদিন যতো টাকার জুতা এবং জুতা সামগ্রী বিক্রি হয় তার থেকে হাজারে ২৫ টাকা দেওয়া হয় ওই শো’রুমের বিক্রয় শ্রমিকদের। ওই ২৫ টাকা সমান ভাগে পেয়ে থাকেন শো’রুমের প্রতিজন বিক্রয় শ্রমিক। তবে দিন শেষে শ্রমিকরা সেই পারিশ্রমিক পান না। পরবর্তী মাসের ১৪/১৫ তারিখ তারা সে কমিশন পেয়ে থাকেন। কোনো প্রয়োজনে ছুটি কাটালে সে দিনগুলোতে তাদের কোনো আয় থাকে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বিক্রয় শ্রমিক বলেন, হরতাল বা কোনো কারণে বিক্রি বন্ধ থাকলেও সেদিন তাদের শো’রুমে আসতে হয়। কিন্তু সেদিনের কোনো পারিশ্রমিকই আমরা পাই না।

আমাদের দিয়ে দোকান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা থেকে শুরু করে গেটম্যানের দায়িত্ব পালন সবই করিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু দুপুরের খাবারটিও ওইদিন নিজের পকেটের টাকায় কিনে খেতে হয়।

জানতে চাইলে বাটা সেলসম্যান শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান হাওলাদার আসাদ বলেন, সকাল সাড়ে ৮টায় শো’রুমে বাধ্যতামূলক উপস্থিত থাকার নিয়ম থাকলেও ডিউটি শেষ করার কোনো নির্দষ্ট সময় নেই। কখনও সারা রাত কাজ করতে হয় বিনা পারিশ্রমিকে। কিন্তু কোনো ওভারটাইম মেলে না।

তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী শ্রমিককে ৩ মাসের মধ্যে স্থায়ী করার কথা থাকলেও বছরের পর বছর শ্রম আইন লঙ্ঘন করে মুনাফা করে যাচ্ছে বিদেশি কোম্পানিটি। বাটার সাইন সম্বলিত যে টি-শার্টটি বিক্রয় শ্রমিকদের গায়ে থাকে সেটিও শ্রমিকদের নিজেদের টাকায় কিনে নিতে হয়।

এ ব্যাপারে শ্রম মন্ত্রণালয়ে আবেদন-নিবেদন করেও কোনো লাভ হয়নি বলেও জানিয়েছেন বাটা সেলসম্যান শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি কাজী সাইদুল ইসলাম তছলিম।

তিনি বলেন, আমাদের দাবি, অভিযোগ তুলে ধরে শ্রম মন্ত্রণালয়ে আমরা আবেদন করেছি। এরপর শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ানের সঙ্গে দেখাও করেছি। শ্রম প্রতিমন্ত্রী এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে গত এক মাস আগে একটি চিঠি দেন বাটা কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু এরপর এক মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো কাজ হয়নি। কোনো পরিবর্তন আসেনি বাটার এ দেশীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে।

তসলিম বলেন, অবিলম্বে শ্রম আইন অনুযায়ী বেতন কাঠামো, নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, হাজিরা শিট, সাপ্তাহিক ছুটিসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা না দিলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবো।

তিনি আরো বলেন, আর দু-একদিন অপেক্ষা করার পর আগামী সোমবার দেশের প্রতিটি শো’রুমে পুর্ণদিবস কর্মবিরতিতে যাবো আমরা। এরপরও যদি দাবি না মানা হয়, তবে রমজানের প্রথম সপ্তাহের পর থেকে লাগাতার কর্মবিরতির কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সহ-সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বাটা বিক্রয় শ্রমিকদের যেভাবে শ্রম শোষণ করছে তা মধ্যযুগীয়। তবে শ্রমিকদের আন্দোলন করেই তাদের দাবি আদায় করে নিতে হবে বলেও জানান তিনি।

বাটার বিক্রয় শ্রমিকদের দাবি এবং আন্দোলনের সঙ্গে প্রথম থেকেই যুক্ত বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক লীমা ফেরদৌস বলেন, যতো বড় কোম্পানিই হোক শ্রম আইন মেনেই তাদের ব্যবসা করতে হবে। তবে এ মাসের মধ্যেই বাটার কর্মকর্তাদের সঙ্গে আন্দোলনরত শ্রমিকদের বৈঠক হবে বলে তিনি জানান।

এ ব্যাপারে বাটা কোম্পানির হিউম্যান রিসোর্স কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলে তিনি একটি মিটিংয়ে আছেন বলে একজন জানান। পরবর্তীতে একাধিকবার ফোন দেওয়ার পরও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।