বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ গান গাইছিলেন তারা। তালে তাল মিলিয়ে, পা ঠুকছিলেন সবাই মিলে। ‘তোমার মতো, এ ভুবনে, আর কেউ নেই।’ যদিও আনন্দের গান এটি। কিন্তু আজ যেন তার সুরে মিশে গিয়েছে বেদনার ছায়া। গানের ফাঁকে ফাঁকে কাঁদছেন দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষরা। কারণ তারা হারিয়েছেন চীর নবীন, চীর প্রতিবাদি এক মানবতাবাদী নেতাকে। তিনি নেলসন রোলিহলালা ম্যান্ডেলা। দক্ষিণ আফ্রিকান মানুষদের সবার প্রিয় মাদিবাকে।
ম্যান্ডেলার মৃত্যুর পর একদিন কেটে গেলেও দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষের তাই এখনো শোক কমেনি। মহান এই নেতার শেষ কৃত্যের জন্য এখন প্রস্তুত হচ্ছেন তারা। ঠিক হয়েছে, ম্যান্ডেলার শৈশবের গ্রাম কুনুতে।
যদিও মৃত্যুর পরে ম্যান্ডেলাকে কোথায় সমাহিত করা হবে, তাই নিয়ে কিছুদিন আগেও তার পরিবারে ঘোর দ্বন্দ লেগে গিয়েছিল। এক দিকে ম্যান্ডেলার প্রথম পক্ষের নাতি মান্ডলা। অন্য দিকে দুই স্ত্রী উইনি ও গ্রাচা। ইতিমধ্যেই ম্যান্ডেলার কয়েক জন ছেলেমেয়ে মারা গিয়েছেন। তাদের শায়িত করা হয়েছিল কুনু গ্রামে। যে গ্রামে ম্যান্ডেলার শৈশবের বছরগুলো কেটেছিল।
কিন্তু মান্ডলা চাইছিলেন, মৃত্যুর পরে তার দাদাকেও সমাহিত করা হোক জন্মস্থান মাভেজোতে। অন্য আত্মীয়দের না জানিয়ে, বাবা-ফুপুর কবর কুনু গ্রাম থেকে রাতারাতি মাভেজোতে নিয়ে আসেন মান্ডলা। যাতে মৃত্যুর পরে মাভেজাতে সমাহিত করলে ছেলেমেয়েদের পাশেই ঠাঁই হয় ম্যান্ডেলার। আর তাতেই শুরু হয় কবর বিতর্ক। যা আদালতে পর্যন্ত গড়িয়েছিল। পরে আদালতের রায়ে অবশ্য ম্যান্ডেলার ছেলেমেয়ের কবর ফিরিয়ে আনা হয় কুনু গ্রামেই।
তাই ম্যান্ডেলার মৃত্যুর পরে তার শেষকৃত্য করার ব্যপারে একমত হয়েছেন পরিবারের সকলে। আগামী ১৫ ডিসেম্বর, রোববার পাহাড়ি গ্রাম কুনুতেই তার শেষকৃত্য হবে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকান প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা। তাই কুনুতেও শুরু হয়ে গিয়েছে তোড়জোর।
যদিও প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ম্যান্ডেলার ভঙ্গুর স্বাস্থ্য বেশ কিছু দিন ধরেই ইঙ্গিত দিচ্ছিল, তিনি আর বেশি দিন নেই। তার মৃত্যুতে দেশে যে আন্তর্জাতিক রথী-মহারথীদের ঢল নামবে, তাও ছিল প্রত্যাশিতই । তাই নাকি গত কয়েক বছর ধরে কুনুর সব থেকে কাছের বিমানবন্দর মাথাথাকে সাজিয়েগুছিয়ে নেয়া হচ্ছিল।
১১ থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ম্যান্ডেলার দেহ শায়িত থাকবে প্রিটোরিয়ার সরকারি ইউনিয়ন ভবনে। সরকারি শোকপালন তো রয়েছে, প্রেসিডেন্ট জুমার দেশের সব গির্জা-মসজিদে, সকলের বাড়িতে, যে যার মতো করে শোক পালন করতেও সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন।