শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > শেখ হাসিনার ঘোষণায় মন্ত্রী-এমপিদের ঘুম হারাম

শেখ হাসিনার ঘোষণায় মন্ত্রী-এমপিদের ঘুম হারাম

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী বাচাইয়ের অংশ হিসেবে সারাদেশের তৃণমূল নেতার্কমীদের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা করছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। অবশ্য গত নির্বাচনে জয়ী সংসদ সদস্যরা এবারও দলের টিকিট পাচ্ছেন, এমনটাই ভেবেছিলেন তারা। তবে প্রধানমন্ত্রীর এক ঘোষণায় মন্ত্রী-এমপিদের পায়ের নিচের মাটি যেন সরতে বসেছে।

শেখ হাসিনা তার ঘোষণায় বলেছেন, ‘যার এলাকায় যে যতোবেশি জনপ্রিয় তাকেই আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে।’ এমন কি মনোনয়ন প্রত্যাশীদের জনপ্রিয়তা যাচাই করতে ১০টি প্রশ্ন সংবলিত একটি উত্তরপত্র তৃণমূল নেতাকর্মীদেরকে দেয়া হয়েছিল। যেখানে জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নামের তালিকা দিতে বলা হয়। এর ওপরই চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়া হবে বলে ঘোষণা দেন দলের নেত্রী।

এ ঘোষণার পর ঘুম হারাম হয়ে গেছে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি-মন্ত্রী ও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের। তাই এখন তৃণমূল নেতাদের মন জোগাতে এলাকামুখী হয়েছেন সরকারি দলরে মনোনয়নপ্রত্যাশী এমপি-মন্ত্রী ও অতিথি নেতারা। কোথাও কোথাও আবার তৃণমূলের মন পেতে টাকার খেলাও চলছে বলে অভিযোগ।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনে জয়লাভের পর আওয়ামী লীগের অনেক এমপি সেই যে এলাকা ছেড়েছেন তারপর আর তাদের তেমন দেখা পায়নি এলাকাবাসী। ঈদে দু’একবার তাদের দেখা পেলেও একদিনের বেশি নয়। কিন্তু এখন সেই এমপি-মন্ত্রীরাই বেশি বেশি করে ছুটছেন এলাকার দিকে। তৃণমুল নেতাকর্মীদের মন ভাঙাতে খোঁজ-খবরও নিচ্ছেন। ঘুরছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। বক্তব্য রাখছেন বিভিন্ন সভা, সমাবেশসহ সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও। প্রচারণা চালাচ্ছেন ব্যানার, পোস্টারিং, লিফলেটের মাধ্যমে।

তাদের পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় নেতারাও চষে বেড়াচ্ছেন নিজ এলাকা। যোগ দিচ্ছেন নানা সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ফরিদপুর-১ (বোয়ালমারী-আলফাডাঙ্গা-মধুখালী) আসনের সংসদ সদস্য মো. আব্দুর রহমান গত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভের পর এলাকা ছাড়েন। তারপর থেকে তার কোনো দেখা পায়নি এলকাবাসী। একাদিকবার তার সাাৎ চেয়েও পায়নি তৃণমূল নেতারা। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ আসনের নেতাদের মতবিনিময়ের পর এখন তিনি ছুটে গেছেন এলাকায়।

মো. আব্দুর রহমান বলেন, ‘মনোনয়ন দেয়ার মালিক দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। আমি একজন সংসদ সদস্য হিসেবে দলের মনোনয়ন আশা করতে পারি।’

তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই, এমন অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘যারা অভিযোগ করছে তারা তৃণমূলের প্রকৃত নেতাকর্মী নয়। যারা প্রকৃত নেতাকর্মী তাদের সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ আছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এখন আমি আমার নির্বাচনী এলাকায় আছি। সকাল থেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠান করছি। আসলে মানুষের চাওয়া-পাওয়ার কোনো শেষ নেই। তাই অভিযোগ থাকবেই।’

একইভাবে তৃণমূলের দিকে ছুটছেন রাজশাহী বাগমারার (রাজশাহী-৪) সংসদ সদস্য এনামুল হক, ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের গিয়াস উদ্দিন, কক্সবাজারের আব্দুর রহমান বদি, পটুয়াখালীর সংসদ সদস্য ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শাহজাহান মিয়া, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হকসহ প্রায় ১৫০টি আসনের এমপি-মন্ত্রীরা।

রাজশাহী-৪ আসনের সংসদ সদস্য এনামুল হক বলেন, ‘আমি আমার নির্বাচনী এলাকায় আছি। নিয়মিতভাবেই নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি আবারও মনোনয়ন পাবো।’

এদিকে ঢাকার গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান (ঢাকা-১), অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম (ঢাকা-৪), মিজানুর রহমান খান দীপু (ঢাকা-৬), মুরাদ জং (ঢাকা-১৯), বেনজীর আহমদ (ঢাকা-২০), আসলামুল হক (ঢাকা-১৪), আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যডভোকেট কামরুল ইসলামও (ঢাকা-২) তৃণমূল নেতাদের প্রাধান্য দিয়ে চলছেন। অথচ নবম সংসদ নির্বাচনের পর তাদের সাাৎ পাওয়া ছিল যেন সোনার হরিণ।

ভূমি প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান (ঢাকা-১ আসনের সংসদ সদস্য) এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘দলীয় মনোনয়ন কে পাবে আর কে পাবে না, এটা এখনো ঠিক করা হয়নি। ঠিক করলে তারপর বলতে পারবো। আর তৃণমূলের অভিযোগের বিষয়টি আমার জানা নেই। এলাকার জন্য আমার যতটুকু কাজ করা দরকার আমি সেটা করেছি।’

ঢাকা-৪ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম বলেন, ‘আমি দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি না, এমন অভিযোগ মিথ্যা। এখন আমি নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করছি।’

অন্যদিকে দলীয় প্রধানের নির্দেশেও নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় বেশি বেশি যাতায়াত করছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাজেদা চৌধুরী, মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তসহ দলের কেন্দ্রীয় বেশকিছু নেতা ঘন ঘন তাদের নির্বাচনী এলাকা সফর করছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজ এলাকায় যাওয়া-আসা বাড়িয়ে দিয়েছেন তারা। অংশ নিচ্ছেন এলাকার বিভন্ন উন্নয়নমূলক কাজেও। স্থানীয় নেতাকর্মীসহ দেখা করছেন ভোটাদের সঙ্গে।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ আলম লেনিন বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা সব রকম প্রস্তুতি নিচ্ছি। নেতাদের প্রত্যেককেই নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় জনগণের কাছে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা।’

তিনি আরো বলেন, ‘নেত্রীর নির্দেশেই নেতাকর্মীরা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় সফর করছেন। সভা-সমাবেশ, প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে মনোনয়নের ব্যপারে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেই দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত নেবেন কাকে কোন আসনে মনোনয়ন দেয়া হবে।’

প্রসঙ্গত, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী বাচাই করতে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক মতবিনিময় করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যা চলবে আগামী ২ অক্টোবর পর্যন্ত। তৃণমুল নেতাদের মতামত এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার জরিপের ভিত্তিতে দেয়া হবে দলের টিকিট।

এর আগ তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে গত ১ থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে সাংগঠনিক সফর করে।