বুধবার , ১৩ই নভেম্বর, ২০২৪ , ২৮শে কার্তিক, ১৪৩১ , ১০ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > শূন্য হয়ে গেছে সোনালী ব্যাংক

শূন্য হয়ে গেছে সোনালী ব্যাংক

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঋণ কেলেঙ্কারি, দুর্নীতি আর অনিয়মে শূন্য হয়ে গেছে সোনালী ব্যাংক। রাষ্ট্রায়ত্ত এই প্রতিষ্ঠানটির যে ক্ষতি হয়েছে মুনাফা দিয়ে সেটি পূরণ করতে হলে ৩০৯ বছর লেগে যাবে। সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে দেশের বৃহত্তম এই রাষ্ট্রীয় ব্যাংকটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। চলতি বছরের মার্চভিত্তিক হিসাবে ব্যাংকটির মোট মুনাফা হয়েছে মাত্র ১৫ কোটি টাকা। কিন্তু ঝুঁকিভিত্তিক প্রভিশন ঘাটতি হিসাব করে দেখা যায় ব্যাংকটির নিট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা। ফলে চলতি বছরের মুনাফা ধরে হিসাব করলে এই ক্ষতিপূরণ করতে প্রায় ৩০৯ বছর লেগে যাবে প্রতিষ্ঠানটির।

সরকারের পর্যালোচনা অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে সোনালী ব্যাংক। ক্যামেলস রেটিং অনুযায়ী এই ব্যাংকটি পঞ্চম গ্রেডে নেমে গেছে। অন্য ৩ রাষ্ট্রীয় ব্যাংক জনতা, অগ্রণী ও রূপালী রয়েছে চতুর্থ গ্রেডে (প্রান্তিক)। তবে সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে তুলনামূলক ভালো অবস্থানে রয়েছে বেসিক ব্যাংক ও বিডিবিএল। এই দুই ব্যাংক ক্যামেলস রেটিং-এ তৃতীয় গ্রেডে রয়েছে। যার মানে হচ্ছে মোটামুটি ভালো। কোনো ব্যাংকের মান পঞ্চম গ্রেডে নেমে গেলে সামগ্রিকভাবে ওই ব্যাংকটির পারফরম্যান্স ‘অসন্তোষজনক’ বলে চিহ্নিত করা হয়। এ পর্যায়ে ব্যাংকটির কার্যক্রম ঝুঁকিপূর্ণ বলেও বিবেচিত হয়। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কোনো ব্যাংক পঞ্চম গ্রেডে নেমে যাওয়া মানে ওই ব্যাংকটির আমানত, মূলধন, ঋণ পরিস্থিতি, খেলাপি আদায়, প্রভিশন ঘাটতি এবং ব্যবস্থাপনা সব বিষয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ব্যাংকটিকে বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর বেশির ভাগই এখন এ ধরনের অবস্থায় রয়েছে। তবে আশার কথা, গ্রাহকরা এ বিষয়গুলো সম্পর্কে খুব বেশি জানে না।

আমানত : সরকারি ব্যাংকগুলোর মার্চ-২০১৩ ভিত্তিক পারফরম্যান্স পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আগের বছরের তুলনায় ৬ ব্যাংকের আমানত বেড়েছে। এর মধ্যে বেসিক ব্যাংক ও বিডিবিএলের আমানত বেড়েছে সবচেয়ে বেশি, যথাক্রমে ৫৩ শতাংশ ও ৪৩ শতাংশ। সবচেয়ে কম আমানত বেড়েছে সোনালী ব্যাংকের (১৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ)।

প্রভিশন ঘাটতি : মার্চভিত্তিক হিসাবে সোনালী ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি সবচেয়ে বেশি ৪ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া অগ্রণী ব্যাংকের ২ হাজার ৮৩ কোটি টাকা, রূপালীর ৮০৪ কোটি টাকা এবং বিডিবিএলের প্রভিশন ঘাটতি দেখা দিয়েছে ৭৩ কোটি টাকা। অপরদিকে বেসিক ব্যাংকের কোনো প্রভিশন ঘাটতি নেই এবং জনতা ব্যাংকের ২৬ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত রয়েছে।

মূলধন ঘাটতি : মার্চ, ২০১২ সময়ে সরকারি ৬ ব্যাংকের মূলধন উদ্বৃত্ত থাকলেও চলতি বছরে এসে শুধু বিডিবিএল ছাড়া বাকি সব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি বেড়ে গেছে। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি সবচেয়ে বেশি প্রায় ৫ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা। আর সবচেয়ে কম মূলধন ঘাটতি বেসিক ব্যাংকের মাত্র ১২৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া অগ্রণী ব্যাংকের ২ হাজার ১২০ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকের ১ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা এবং জনতা ব্যাংকের ১ হাজার ১১৪ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে।

এদিকে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে সরকারি ৬ ব্যাংকের পারফরম্যান্স পর্যালোচনা সভায় ব্যাংকগুলোর ক্যামেলস রেটিংসহ আমানত, ঋণ পরিস্থিতি, খেলাপি ঋণ আদায়, মন্দ ঋণ, মূলধন ও প্রভিশন ঘাটতিসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ে গত ১৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত ওই সভায় ব্যাংকগুলোর সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত হয়ে খোদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্ষোভ প্রকাশ করেন। রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের কার্যক্রমে অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানে সুশাসন ও স্বচ্ছতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আতিউর রহমান ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম সম্পর্কে ওই সভায় বলেন, সম্পদের গুণগত মান বিবেচনা না করে ঋণ মঞ্জুর করছে সরকারি ব্যাংকগুলো। প্রদানকৃত ঋণের নিয়মিত মনিটরিং না করার কারণে মন্দ ঋণ বেড়ে যাচ্ছে। সরকারি ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল বলেও গভর্নর মত প্রকাশ করেন। এ ছাড়া তিনি সরকারি ব্যাংকগুলোর ঋণ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণেরও সুপারিশ করেন।