স্টাফ রিপোর্টার ॥
দেশের জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের কাছে যে স্বর্ণ মজুদ রয়েছে তার বেশিরভাগই বৈধপথে আমদানি করা নয়। ফলে জুয়েলারি দোকানে শুল্ক গোয়েন্দাদের অভিযানে উদ্বিগ্ন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা। তাদের ধারণা এ অভিযানের মাধ্যমে বিপুল পরিমান স্বর্ণ জব্দ করা হতে পারে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শো-রুম সিলগালা হতে পারে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত মালিক, শ্রমিক ও সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বর্ণ আমদানিতে নানা জটিলতার কারণে দেশের বেশিরভাগ জুয়েলারি ব্যবসায়ী ভিন্ন পথে স্বর্ণ নিয়ে আসে। যাদের অনেকেরই নেই বৈধ কাগজ। স্বর্ণ আমদানিতে উচ্চ শুল্কের কারণে বৈধপথে নিরুৎসাহিত ব্যবসায়ীরা। এতে করে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে চোরাচালান। ফলে একদিকে সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব। অন্যদিকে শিল্পের ওপর পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব।
এদিকে ১৪ মে (রোববার) ‘ডার্টি মানি’র অনুসন্ধানে রাজধানী ঢাকায় আপন জুয়েলার্সের বিভিন্ন শাখায় অভিযান চালায় শুল্ক গোয়েন্দারা। অভিযানে প্রায় ৩০০ কেজি সোনা ও ডায়মন্ডের (হীরা) গহনা জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ। যার বাজার মূল্য প্রায় ৮৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। একই সঙ্গে ঢাকার শাহজাদপুরে সুবাস্তু টাওয়ারের শাখাটি সিলগালা করে দেয়া হয়েছে।
স্বর্ণ গহনা জব্দ বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ জানায়, আপন জুয়েলার্সে অলঙ্কার সাময়িকভাবে আটক করে শুল্ক আইন অনুসারে প্রতিষ্ঠানসমূহের জিম্মায় দেয়া হয়েছে। এখন এসব মূল্যবান পণ্যের কাগজ-পত্র যাচাই-বাছাই করা হবে। অনুসন্ধানে কোনো অনিয়ম প্রমাণিত হলে আপন জুয়েলার্স ও প্রতিষ্ঠানের মালিকদের বিরুদ্ধে চোরাচালান এবং মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা জাগো নিউজকে বলেন, শুল্ক গোয়েন্দার অভিযান চালাবে ভালো। তবে সম্প্রতি যে ঘটনা ঘটেছে তা উদ্বেগজনক। এ বিষয়ে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে আজ জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। সভায় পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সিন্ধান্ত নেয়া হবে।
বাজুসের সহ-সভাপতি এনামুল হক খান বলেন, সম্প্রতি বনানীর দ্য রেইন ট্রি হোটেলের ঘটনাকে আমরা এখন ব্যবসায় নিয়ে এসেছি তা ঠিক নয়। শুল্ক গোয়েন্দার অভিযান রুটিন কাজ।আমাদের মধ্যে কেউ অবৈধ ব্যবসা করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু হঠাৎ এভাবে অভিযান চালিয়ে একটি প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা করা ঠিক নয়। একটি প্রতিষ্ঠানে অনেক কর্মকর্তা, কর্মচারী ও কারিগর (শিল্পী) কর্মরত থাকেন। প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে হাজার হাজার লোক সমস্যায় পড়ে। তাদের বেতন বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়াও যেসব ক্রেতা গহনার অর্ডার দিয়েছে তাদের ঠিকমত পণ্য সরবারহ করা যায় না। তাই আমরা চাই শুল্ক গোয়েন্দারা অভিযান পরিচালনা করুক তবে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে নয়। এটা কোনো সুষ্ঠু সমাধান হতে পারে না।
এসব বিষয়ে সংগঠনের সিন্ধান্ত জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাজুস-এর পক্ষ থেকে আমরা জরুরি বৈঠক করে বেশকিছু সিন্ধান্ত নিয়েছে। প্রেস বিজ্ঞিপ্তির মাধ্যমে তা জানানো হবে।
স্বর্ণ আমদানির বিষয়ে তিনি বলেন, স্বর্ণ আমদানিতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। আসন্ন বাজেটে বাজুসের পক্ষ থেকে বৈধপথে স্বর্ণ আমদানি করতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নসহ সরকারের কাছে বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের যুগ্ম পরিচালক মো. শফিউর রহমান জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের উদ্বেগের বিষয়ে জাগো নিউজকে বলেন, আপন জুয়েলার্সের বিরুদ্ধে স্মাগলিংয়ের (চোরাচালান) অভিযোগ আছে। তারা কিভাবে স্বর্ণ আমদানি করছে- সে তথ্য আমাদের জানা নেই। বিষয়টি অস্পষ্ট বিধায় আমরা অভিযান চালাচ্ছি।
তিনি আরও জানান, আপন জুয়েলার্সের বিভিন্ন শাখায় অভিযান চালিয়ে ইতোমধ্যে প্রায় ৩০০ কেজি স্বর্ণ জব্দ করা হয়েছে এবং শাহজাদপুরের সুবাস্তু টাওয়ারের শাখাটি সিলগালা করে দেয়া হয়েছে।
‘স্মাগলিং করা অন্যায়, এটি হালাল ব্যবসা না। শাখা বন্ধ করে দেয়ায় কার চাকরি থাকল, না থাকল সেটা আমাদের দেখার বিষয় না।’
‘আমরা আমাদের জায়গা থেকে সচেতনার ভিত্তিতে অ্যাকশনে যাচ্ছি’- যোগ করেন শফিউর রহমান।
এ দিকে বাজুসের পক্ষ থেকে বৈধপথে স্বর্ণ আমদানি প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে, নীতিমালা প্রণয়নসহ ব্যাংকিং জটিলতা নিরসন ও ন্যূনতম কর নির্ধারণ সাপেক্ষে কমপক্ষে ১০ কেজি স্বর্ণ আমদানি অনুমতির দাবি এর মধ্যে অন্যতম। বর্তমানে ব্যবসায়ীরা স্বর্ণ আমদানি করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে ভরিপ্রতি (১১.৬৬৪ গ্রাম) তিন হাজার টাকা এবং ৪ শতাংশ ট্রেড ভ্যাট দিতে হয়।