শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > জাতীয় > শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করলে ৩ মাসের জেল

শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করলে ৩ মাসের জেল

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্কুলে অবস্থানকালীন কোন শিক্ষার্থীকে শিক্ষক বা অন্য কেউ নির্যাতন করলে তিন মাসের জেলের বিধান রেখে ‘শিক্ষা আইন ২০১৩’-এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। খসড়া আইনের ৮(৫) ধারায় বলা হয়েছে বিদ্যালয়ে অবস্থানকালীন কোন শিশুকে কোন প্রকার মানসিক বা শারীরিক শাস্তি দেয়া যাবে না। এটা অমান্য করলে- তফসিল-১: অপরাধ ও শাস্তির অধ্যায়ে বলা হয়েছে এর জন্য দায়ী ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০’-এর আলোকে শিক্ষামন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত খসড়া আইনের প্রথম অধ্যায়ে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। শিক্ষার প্রতি শিশুদের আগ্রহী করে তুলতে ৪ থেকে ৬ বছর বয়স পর্যন্ত দু’বছর মেয়াদের বিদ্যালয়ে প্রস্তুতিমূলক শিক্ষা প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হবে। প্রাথমিক শিক্ষা প্রথম শ্রেণী থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। এ ৮ বছর মেয়াদি প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে শিশু বয়স ন্যূনতম ৬ বছর হবে। সব শিশুর অধিকার হিসেবে গণ্য করে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একটি স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠন ও এর দায়িত্ব নির্ধারণ করা হয়েছে আইনে। মোট ৬৫টি ধারা সংবলিত ২৪ পৃষ্ঠার এই শিক্ষা আইনের ৮ ধারায় বলা হয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভর্তি উপযোগী শিশুকে তার জন্ম নিবন্ধন সনদ বা সরকারি বা সরকার অনুমোদিত কোন প্রাক-প্রাথমিক বা প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে শিক্ষা সমাপ্তির সনদ দাখিল সাপেক্ষে উপযুক্ত শ্রেণীতে ভর্তি নিশ্চিতকরণে ব্যবস্থা নেবে। প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি এবং যাচাই পরীক্ষা গ্রহণ করা যাবে না। লটারির ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে হবে। নতুন আইন অনুযায়ী মাধ্যমিক শিক্ষার স্তর ৯ম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত। এ আইনের আওতায় বর্তমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণী সংযোজন ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহে পর্যায়ক্রমে ৯ম ও ১০ম শ্রেণী খোলা হবে। যেসব কলেজে অনার্স/ডিগ্রি কোর্স চালু রয়েছে সেসব কলেজে কেবল স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষা চালু করা হবে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত প্রতিটি শ্রেণীর শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবই জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রণয়ন করবে। বোর্ডের অনুমতি ছাড়া শিক্ষাক্রমে অতিরিক্ত কোন বিষয় বা পাঠ্যবই অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। এ বিধান লঙ্ঘন করলে দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে অনধিক দু’লাখ টাকা জরিমানা অথবা ৬ মাসের কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড দেয়া হবে। মতামত দেয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে িি(.িসড়বফঁ.মড়া.নফ) ৫ই আগস্ট খসড়া আইনটি দেয়া হয়েছে। এই খসড়ার ওপর সুশীল সমাজ, রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সব স্তরের মানুষের মতামত, সুপারিশ, পরামর্শ থাকলে তা আগামী ২৫শে আগস্টের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ই-মেইল : রহভড়(ধ)সড়বফঁ.মড়া.নফ, ৎধভরয়০২১২৫৯(ধ)ুধযড়ড়.পড়স, ষধথিড়ভভরপবৎ(ধ)সড়বফঁ.মড়া.নফ এ দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরের সাধারণ, কিন্ডারগার্টেন, মাদরাসা, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা, ইংরেজি মাধ্যম ও বিদেশী কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশি কোন শাখাসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বাধ্যতামূলকভাবে নিবন্ধিত হতে হবে। নিবন্ধন ছাড়া এ ধরনের কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন বা পরিচালনা করা হলে তা বন্ধ করে দেয়া হবে। একই সঙ্গে এর জন্য দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা ৬ মাসের কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড দেয়া হবে। মাধ্যমিক পর্যায়ে ইংরেজি মাধ্যমসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বেতন ও অন্যান্য ফি সরকার বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে নির্ধারণ করতে হবে। এ আইন ভঙ্গকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা এক বছরের কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। ইংরেজি মাধ্যমসহ উচ্চশিক্ষার সব স্তরের প্রতিষ্ঠানকে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নিবন্ধন ও পাঠদানের অনুমতি নিতে হবে। অন্যথায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ করাসহ দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা এক বছরের কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। খসড়া আইনের ৪২ ধারায় বলা হয়েছে- যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা বাংলাদেশে কোন বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় বা বিদেশী কোন প্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস, স্টাডি সেন্টার বা টিউটোরিয়াল কেন্দ্র পরিচালনা করা যাবে না। অন্যথায় অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হবে। একই সঙ্গে অপরাধী ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষকে অনূর্ধ্ব ৫ বছর কারাদণ্ড অথবা ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড দেয়া হবে। জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম সভায় শিক্ষা আইন প্রণয়নের জন্য শিক্ষা সচিবের নেতৃত্বে আইন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন অধিদপ্তর-দপ্তরের প্রতিনিধি সমন্বয়ে ১৯ সদস্যবিশিষ্ট শিক্ষা আইন প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির প্রথম সভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবকে (নিরীক্ষা ও আইন) আহ্বায়ক করে ৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি ১২টি সভা করে শিক্ষা আইনের খসড়া প্রস্তুত করে। অপরাধের বিচার সম্পর্কে বলা হয়েছে- (ক) ১৮৯৮ সালের ফৌজদারী কার্যবিধি বা বর্তমানে বলবৎ অন্য কোন আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন এ আইনের অধীন সব অপরাধ আমলযোগ্য ও জামিলযোগ্য হবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক সংক্ষিপ্ত আকারে বিচার হবে। সরকার বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক দায়েকৃত অভিযোগ ছাড়া কোন আদালত এই আইনের অধীন অপরাধসমূহ আমল গ্রহণ করবে না জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি ছাড়া এ আইনের অপরাধসমূহ মীমাংসাযোগ্য হবে না। ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান তাসলিমা বেগম বলেন, জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এর আলোকে শিক্ষা আইন করা হয়েছে। তিনি বলেন, এ আইনের যে কোন ধারা লঙ্ঘন করা হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এজন্য সংশ্লিষ্টদের সতর্ক ও প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।