শাবাশ! শাবাশ! ফাইনালে বাংলাদেশ

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥

মিরপুর থেকে: শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠে গেল বাংলাদেশ। বুধবার (২ মার্চ) নিজেদের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠলো টাইগাররা। টাইগার ব্যাটসম্যান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ছক্কায় জয় নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা পর পর দুটি চার মেরে জয়ের লক্ষ্য সহজ করে দেন। পরে রিয়াদ কল্যাণে জয় ছিনিয়ে নেয় টাইগাররা।

অবশেষে এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ। এশিয়া কাপের এবারের আসরের অষ্টম ম্যাচে আফ্রিদিদের ৫ উইকেটে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মত টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠলো স্বাগতিক টাইগাররা।

পাকিস্তানের দেয়া ১৩০ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৫ উইকেট হারিয়ে ৫ বল বাকি থাকতেই জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ।

এরআগে বুধবার (২ মার্চ) মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের বিপক্ষে টস হেরে বোলিংয়ে নেমেই রীতিমত চমক দেখালেন টাইগার স্ট্রাইক বোলার আল-মিন হোসেন। একেবারে প্রথম বলেই খুররাম মঞ্জুরকে ব্যক্তিগত ১ রানে মুশফিকের গ্লাভসে তুলে দিয়ে কাঁপিয়ে তুললেন মিরপুর স্টেডিয়াম।

খুররামের ফিরে যাবার বেশ সতর্ক হয়েই খেলা শুরু করলেন দ্বিতীয় উইকেট জুটির দুই ব্যাটসম্যান শারজিল খান ও মোহাম্মদ হাফিজ। দেখে শুনে খেলে দলকে চেয়েছিলেন বড় একটি সংগ্রহ এনে দিতে।

কিন্তু টিম বাংলাদেশ যেভাবে আক্রমণাত্মক বোলিং করেছে তাতে তাদের সেই আশা দুরাশায় পরিণত হয় ঠিক তিন ওভার পরেই। আরাফাত সানির চতুর্থ ওভারের পঞ্চম বলটি কিছুটা অফ স্ট্যাম্পের বাইরে ছিল সেই বলটি শারজিল খান মিড উইকেটের উপর দিয়ে খেলার চেস্টা করেছিলেন শেষ পর্যন্ত বলের লাইন মিস করলে বলটি গিয়ে আঘাত হানে তার মিডল স্ট্যাম্পে ফলে আরেকবার গর্জে উঠে মিরপুর। ফলে ব্যক্তিগত ১০ রানে ফেরেন শারজিল। আর দলীয় ১২ রানেই সাজঘরে পাকিস্তানের দুই ওপেনার।

আল-আমিন, আরাফাত যখন দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে দিয়ে ফাইনালের মিশনের পথ সহজ করছিলেন তখন বসে ছিলেন না টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাও।

পঞ্চম ওভারে মাশরাফির পঞ্চম গুড লেংথের বলটি মোহাম্মদ হাফিজ শট নিতে গেলে ব্যক্তিগত ২ রানে এলবিডব্লিউর ফাদে পড়লে আত্মবিশ্বাস টাইগার শিবিরে।

পাওয়ার প্লে শেষে পাকিস্তানের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ২৫ রান।

পাওয়ার প্লেতে এমন স্বল্প সংগ্রহে পাকিস্তান আরও ব্যাকফুটে চলে যায়, যখন নবম ওভারে তাসকিনের দ্বিতীয় বলটি ডিপ পয়েন্ট থেকে তা তালু বন্দি করেন, সাকিব আল হাসান। ফলে ব্যক্তিগত ৪ রানেই তুষ্ট থাকতে হয় আগের ম্যাচে আমিরাতের বিপক্ষে অপরাজিত ৫০ রানের ইনিংস খেলা উমর আকমলকে।

আকমলের বিদায়ের পর পঞ্চম উইকেটে শরফরাজ আহমেদকে নিয়ে শোয়েব মালিক এসে দলের হাল ধরলেন বেশ শক্ত হাতেই। এই দুই পাক মিডল অর্ডার খেললেন ও বেশ দারুণ। মাশরাফি-সাকিবদের বল যতটুকু দেখেশুনে খেলা যায়, ঠিক সেভাবেই খেললেন। সিঙ্গেল, ডাবলস, বাউন্ডারি, ওভার বাউন্ডারি খেলে দুজনই এগিয়ে যাচ্ছিলেন অর্ধশতকের দিকে।

শোয়েব-সরফরাজের ব্যাট যখন টাইগারদের বলকে চোখ রাঙানি দিচ্ছিল তখন ১৭তম ওভারে তাদের সেই চোখরাঙানির মোক্ষম জবাব দেন টাইগার স্পিনার আরাফাত সানি। ওভারের পঞ্চম বলটি লেগ স্ট্যাম্পে পিচআপ করায় তা সজোরে হাকিয়ে সীমানার বাইরে পাঠাতে চেয়েছিলেন শোয়েব মালিক। কিন্তু লাভ হয়নি, কেননা ডিপ মিড উইকেট থেকে বলটি লুফে নেন সাব্বির। ফলে ব্যক্তিগত ৪১ রানেই থামতে হয় শোয়েব মালিককে।

মালিকের ফিরে যাবার পর দলকে সম্মান জনক সংগ্রহের পথ দেখাতে এলেন পাক অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারেননি এই হার্ড হিটার ব্যাটসম্যান। ১৮ তম ওভারে আল-আমিনের তৃতীয় ডেলিভারিতে সাব্বির রুম্মনের হাতে ধরা পড়ে কোন রান না করেই প্যাভিলিয়নে ফেরেন পাক অধিনায়ক।

এরপরের ওভারটিতে অবশ্য কোন সাফল্যই পেলেন না টাইগাররা। উল্টো তাসকিনের বল থেকে ১২ রান যোগ করলেন নিজেদের খাতায়। তখন সপ্তম উইকেটে সরফরাজের সঙ্গে ব্যাট করছেন আনোয়ার আলী।

সতীর্থ সরফরাজের সঙ্গে যেন রানের ক্ষুধায় হন্যে হয়ে উঠেছিলেন আনোয়ার আলীও। তবে তার সেই রান ক্ষুধার জ্বালা পরিপূর্ণভাবে মেটাতে দেননি আল-আমিন হোসেন। ২০ তম ওভারে তার শেষ বলটি ডিপ মিড উইকেটে থেকে সৌম্য তালুবন্দি করলে ব্যক্তিগত ১৩ রানে থামে আনোয়েরর ইনিংস।

তবে দলটির হয়েই একাই লড়েছেন সরফরাজ আহমেদ। টাইগারদের এমন আক্রমণাত্মক বোলিংয়েও থেমে ছিলনা তার ব্যাটিং। খেলেছেন একেবারে ২০ ওভার পর্যন্ত। আর খেলার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপরাজিত থেকেছেন ব্যক্তিগত ৫৮ রানে।

আর তার এই অনবদ্য ৫৮ রানেই ২০ ওভার শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে ১২৯ রানের সংগ্রহ পায় পাকিস্তান।

বল হাতে বাংলাদেশর হয়ে আল-আমিন হোসেন ৩টি, আরাফাত সানি ২টি আর মাশরাফি ও তাসকিন নিয়েছেন ১টি করে উইকেট।

জবাবে জয়ের জন্য ১৩০ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ওপেনিং জুটিতে শুরুটা ভাল করার আভাস দিয়েও শেষ পর্যন্ত তা করে দেখাতে পারেননি সৌম্য ও তামিম। কেননা দ্বিতীয় ওভারে মোহাম্মদ ইরফানের তৃতীয় বলে তামিম এলবি’র ফাঁদে পড়লে পুরো মিরপুর স্টেডিয়ামে নামে নিস্তব্ধতা।

দ্বিতীয় উইকেটে সাব্বির-সৌম্য যেভাবে খেলছিলেন তাতে মনেই হচ্ছিলনা তারা পাকিস্তানের মত কোন দলের বিপক্ষে খেলছেন। কিন্তু তাদের সেই অবিছিন্ন জুটিটি খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে দেননি শহীদ আফ্রিদি। নবম ওভারে আফ্রিদির প্রথম বলটি স্ট্যাম্প ছেড়ে এগিয়ে এসে খেলতে চাইলে তা প্রথমে তার প্যাডে লেগে পড়ে স্ট্যাম্পে চুমু খেলে ব্যক্তিগত ১৪ রানে ক্রিজ ছাড়া হন সাব্বির।

সাব্বিরের ফিরে যাবার পর তৃতীয় উইকেটে মুশফিক-সৌম্য জুটির খেলা দেখে মনে হচ্ছিল তারা দুজনই দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিতে পারবেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। ১৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলে মোহাম্মদ আমিরের ইয়র্কার লেংথের বলটি সৌম্যর মাঝখানের স্ট্যাম্পে চিড় ধরালে ক্যারিয়ারের প্রথম টি-টোয়েন্টি অর্ধশতক বঞ্চিত হন সৌম্য। আর বাংলাদেশও কিছুটা চাপে পড়ে।

সৌম্যর ফিরে যাবার পর তার পথ অনুসরণ করলেন মুশফিকও। ১৫ তম ওভারে শোয়েব মালিকের দ্বিতীয় বলটি রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ব্যক্তিগত ১২ রানে নিজের ইনিংসের ফুলস্টপ টানেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল মুশফিক।

এরপর টাইগারদের উপর আবার আমির আঘাত আর তাতেই ক্রিজ ছাড়া সাকিব আল হাসান। ১৮তম ওভারে আমিরের দ্বিতীয় বলে ব্যক্তিগত ৮ রানে বোল্ড আউট হয়ে দলকে জয়ের শঙ্কায় ফেলে দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন সাকিব।

এরপর ষষ্ঠ উইকেটে মাশরাফি-রিয়াদের ২৩ রানের দায়িত্বপূর্ণ ইনিংসে জয়ের বন্দরে নোঙ্গর ফেলে বাংলাদেশ।

মাশরাফি খেলেছেন ১২ ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ খেলেছেন ব্যক্তিগত অপরাজিত ২২ রানের ইনিংস।

বলহাতে পাকিস্তানের হয়ে মোহাম্মদ আমির ৩টি মোহাম্মদ ইরফান, শহীদ আফ্রিদি ও শোয়েব মালিক নিয়েছেন ১টি করে উইকেট।

শেয়ার করুন

Related News

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫