বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা প্রায় শেষ, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিযুদ্ধে নামার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। আর এই ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের চটকদার বিজ্ঞাপনের ফাঁদে ফেলে মাত্র ৩-৪ মাসে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কোচিং ব্যবসায়ীরা। আবার ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হলে কোচিং করতেই হবে’– শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের এমন মানসিকতার কারণেও রমরমা এই কোচিং বাণিজ্য।
কেবল রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায়ই ছোট-বড় মিলিয়ে রয়েছে শতাধিক কোচিং সেন্টার। এই কোচিং সেন্টারগুলো আবার দেশের বিভিন্ন স্থানে খুলেছে শাখা। এর ফলে রাজধানী ও রাজধানীর বাইরের শিক্ষার্থীরা কোচিং ব্যবসায়ীদের টোপ কোনো না কোনোভাবে গিলছেই।
এ বছর ফার্মগেটের বিভিন্ন কোচিং সেন্টার ঘুরে দেখা গেছে, কোচিং সেন্টারভেদে ভর্তি-ফি ৭ হাজার টাকা থেকে ১৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। বেশ কয়েকটি কোচিং সেন্টারে এরই মধ্যে হাজারের উপরে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে এ সংখ্যা পাঁচ হাজার। সব মিলিয়ে এ এলাকায় প্রতিবছর প্রায় লক্ষাধিক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। এসব শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ভর্তি ফি, মডেল টেস্ট, শিক্ষা উপকরণ বিক্রিসহ বিভিন্ন উপায়ে প্রতিবছর কয়েকশ কোটি টাকা আদায় করে কোচিং মালিকেরা।
এছাড়া বড় কোচিংগুলোর সারাদেশে সব মিলিয়ে পাঁচ শতাধিক শাখা রয়েছে। এর মধ্যে ইউসিসিস’র শাখা ১১২টি, ইউনিএইড (মনির মল্লিক জহিরের) ৬৮ টি, (কিরণ সুমন কবিরের) ৬১ টি, ফোকাস ২৮ টি, আইকন’র ২৭ টি। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে সাইফুর’স, প্যারাগন, আইকন, কোয়ান্টাম, সংশপ্তক, দুর্বার, ক্যারিয়ার এইড, প্রাইমেট’র শাখা রয়েছে। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলে ভর্তির জন্য উদ্ভাস, রেটিনাসহ ছোট বড় অর্ধ-শতাধিক কোচিং সেন্টার রয়েছে।
এই কোচিং সেন্টারগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেকেই ভর্তি পরীক্ষার কোচিংয়ের পাশাপাশি অনলাইন ফরম পূরণ, হল বুকিং, ভর্তি জালিয়াতি, শিক্ষার্থীদের আবাসনসহ বিভিন্ন বৈধ-অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলেও বিভিন্ন সময় অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির সময় গ্রেফতার হওয়া এক শিক্ষার্থী নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, ইউনিএইড’র সাধারণ জ্ঞানের সাবেক শিক্ষক আব্দুর রাকিব দুই লাখ টাকার বিনিময়ে পরীক্ষার হলে ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে উত্তর পাঠানোর চুক্তি করেন।
ইউনিএইড’র জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান মনিরের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি দাবি করেন, এমন কোনো ঘটনা তার জানা নেই। তবে তিনি এ-ও বলেন, ব্যক্তিগত পর্যায়ে কেউ কোনো অপরাধ করলে তার দায় প্রতিষ্ঠান নেবে না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের অভ্যর্থনা জানানোর নামে কিছু লোক কোচিং ভবনের নিচে সর্বক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে। এরা শিক্ষার্থীদের দেখলেই ডেকে ধরে কোচিং সেন্টারে নিয়ে যাচ্ছে বা যেতে উদ্বুদ্ধ করছে। আর এক শ্রেণির লোক আছে যারা কোচিং সেন্টারের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা করার কাজ করছে। তারা বিভিন্ন ছাত্রাবাসের প্রচারপত্র ধরিয়ে দিচ্ছে।
এসব বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক শিক্ষাবিদ মনজুরুল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোচিং সেন্টারগুলোর দৌরাত্ম্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সারাদেশে ব্যাঙের ছাতার মত কোচিং সেন্টার গজিয়েছে। এরা শিক্ষার্থীদের আইওয়াশ করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। একই সাথে তারা সাধারণ শিক্ষার পরিবেশও নষ্ট করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যপুস্তক ও চারপাশ সম্পর্কে স্পষ্ট জ্ঞান থাকলেই শিক্ষার্থীরা ভালো ফল করবে।
উল্লেখ্য, গত বছর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ শিক্ষায় ভর্তিচ্ছুদের মধ্যে শতকরা ৯৩ ভাগ শিক্ষার্থীই কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়েছে। আর এ সংখ্যাটি ছিল ৬ লাখ ৪ হাজার ৫০০। শিক্ষার্থীদের জনপ্রতি খরচ হয়েছে ৪৩ হাজার ৯৮ টাকা। যে হিসাব অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের মোট খরচ হয়েছে দুই হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। বাংলানিউজটোয়েটফোর.কম