স্টাফ রিপোর্টার ॥
ঢাকা: পোশাকশিল্প নিয়ে নানা শঙ্কার কথা বলা হলেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন কিন্তু ভিন্ন কথা। শঙ্কায় নয়, সম্ভাবনায় এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশের পোশাকশিল্প, এমনটাই বলছেন তারা।
পোশাকশিল্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পোশাক শিল্পের আন্তর্জাতিক বাজারের ক্রেতারা ব্যবসায় মুনাফার কথা বিবেচনা করেই ৮০’র দশকে বাংলাদেশে এসেছিল। সেই ১২ হাজার ডলারের পোশাকশিল্প আজ ২৪ বিলিয়ন ডলারের আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশের পোশাকশিল্প নিয়ে অনেক আশঙ্কার কথা হলেও এখন পর্যন্ত দেশের পোশাকশিল্প সম্ভাবনার দিকেই এগিয়ে রয়েছে।
পোশাকশিল্পের সবচেয়ে কঠিন সময় পার করেছে গত তিন বছর। কিন্তু এ সময়ে রফতানি কমেনি বরং বেড়েছে।
পোশাক রফতানিতে চীন ব্যতীত আর কোনো দেশই বাংলাদেশ থেকে আরো কয়েকটি বছর এগিয়ে যেতে পারবে না বলে মত দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে শ্রমের মজুরি কম। এই মজুরির কাছাকাছি মজুরিও বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলোর নেই। আন্তর্জাতিক ক্রেতারা যেখানে কমদামে পোশাক পাবেন, সেখানেই যাবেন।
তাছাড়া অবকাঠামোগত বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশের যে নেতিবাচক প্রচারণা ছিল, তা আর থাকবে না বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক।
তিনি বলেন, রানা প্লাজা ধসের পর ক্রেতাদের সংগঠন একর্ড ও অ্যালায়ান্স বাংলাদেশের কারখানা পরিদর্শন করে সার্টিফিকেট দিয়েছে। যে সব কারখানায় ত্রুটি পেয়েছে, তা বন্ধ করেছে। এমন কারখানা আছে মাত্র ২ শতাংশ। ফলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের কারখানার অবকাঠামোগত বিষয় নিয়ে তেমন কোনো সমস্যা থাকবে না।
তিনি বলেন, তবে হ্যাঁ, ট্রান্স-প্যাসেফিক পার্টনারশিপে (টিপিপি) যদি ভিয়েতনাম অন্তর্ভুক্ত হয়, তাহলে বাংলাদেশকে নতুন প্রতিযোগিতায় নামতে হবে।
এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক নেতা বলেন, নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্যই মূলত বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে সম্ভাবনার থেকে শঙ্কা বেশি আছে বলে নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হয়।
তিনি জানান, অনেক উদ্যোক্তা ও শ্রমিক নেতারা এমন সব বক্তব্য দেন, যেন মনে হয়, বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে সম্ভাবনা নেই। এখানে যা আছে, তা কেবল শঙ্কা। সরকারকে চাপ দিয়ে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্যই এ ধরনের প্রচারণা চালানো হয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো এত কমদামে কোথা থেকেও পোশাক কিনতে পারবেন না ক্রেতারা। ন্যূনতম মজুরির দিকে তাকালে দেখা যাবে, বাংলাদেশে ন্যূনতম মজুরি ৬৯ ডলার, ভিয়েতনামে ১২৮, ভারতে ১০৬ ও পাকিস্তানে ন্যূনতম ১১৮ ডলার। ফলে, ক্রেতাদের ইচ্ছা থাকলেও ব্যয়ের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ ছাড়বেন না তারা।
অন্যদিকে, পোশাক তৈরির জন্য যে ধরনের আঙুলের প্রয়োজন রয়েছে, তা কেবলমাত্র বাংলাদেশি শ্রমিকদেরই রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তপন সাহা।
তিনি বলেন, পোশাকশিল্পের মৌলিক উপাদানগুলোর মধ্যে অন্যতমটি হলো শ্রম। আর এই শ্রমের মজুরি ও গুণগত মানে বাংলাদেশের সঙ্গে আর কেউ প্রতিযোগিতায় পারবে না। পোশাকশিল্পের উপযোগী যে আঙুল, তা একমাত্র বাংলাদেশি শ্রমিকদেরই রয়েছে।
শত বাধার পরও যথাসময়ে অর্ডার সাপ্লাই দেওয়ায় সুনাম অক্ষুণ্ন রয়েছে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের, এ তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ রফতানিকারক সমিতির (ইএবি) সভাপতি ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী।
তিনি বলেন, গত কয়েক বছর ধরে নানা বাধা-বিপত্তিতে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। তারপরও সঠিক সময়ে সাপ্লাই দিচ্ছেন উদ্যোক্তারা। এর মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা, গ্যাস-বিদ্যুৎ সমস্যা, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদ হার তো রয়েছেই। আর এখন বাংলাদেশের ন্যূনতম মজুরিকে সস্তা শ্রম মজুরি বলা যাবে না। কারণ, ওভারটাইমসহ একজন হেলপার মাসে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার টাকা থেকে ৮ হাজার টাকা বেতন পান, যা প্রতিযোগী দেশগুলোর থেকে কোনো অংশেই কম নয়।