স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভ্যাপসা গরম আর মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ে নাকাল মানুষ। চলতি মাসে তাপমাত্রা খুব বেশি কমার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাজধানী ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দু’-একদিনের মধ্যে সামান্য বৃষ্টি হলেও তাপমাত্রা না-ও কমতে পারে। আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান জানান, দেশের বিভিন্ন অংশে ঝড়-বৃষ্টি হলেও রাজধানীতে বৃষ্টির সম্ভাবনা কম। তাপপ্রবাহ চলবে পুরো মাস। এদিকে ভ্যাপসা গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাজধানীতে বাড়ছে লোডশেডিং। এক ঘণ্টা থেকে শুরু করে টানা তিন ঘণ্টা পর্যন্ত চলছে লোডশেডিং। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী মঙ্গলবার দেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ধরা হয় ৬৯৫০ মেগাওয়াট। আর সর্বোচ্চ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৬৭৪৯ মেগাওয়াট। লোডশেডিংয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২২৬ মেগাওয়াট। গত সোমবার রাত নয়টায় দেশে সর্বমোট লোডশেডিংয়ের পরিমাণ ছিল ১৮২ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাবে লোডশেডিংয়ের মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও বাস্তবে পরিস্থিতি ভিন্ন। ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি ডেসকো’র আওতাধীন এলাকাগুলোতে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ ছিল প্রায় ২২৫ মেগাওয়াট। ডেসকো’র প্রধান প্রকৌশলী নূর মোহাম্মদ জানান, গতকাল ডেসকোর বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৭৩৪ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ পাওয়া গেছে ৫০৯ মেগাওয়াট। বাকি ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি থাকায় লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে তা পুষিয়ে দিতে হয়েছে। রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা কাওরান বাজারে দিনে এক ঘণ্টা পরপর বিদ্যুৎ যাওয়া-আসা করে। প্রতিনিয়ত অন্তত আট ঘণ্টা লোডশেডিং হয় এ এলাকায়। এভাবে দৈনিক চার থেকে আটবার ঘটছে লোডশেডিং। রাজধানীর শ্যামলী, আদাবর কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, খিলক্ষেত, বাড্ডা, রামপুরা, তেজকুনীপাড়া, রাজাবাজার, শনির আখড়া, ডেমরাসহ বেশির ভাগ আবাসিক এলাকায় লোডশেডিংয়ের সমস্যা প্রকট আকারে দেখা দিয়েছে। ভোগান্তির শিকার পান্থপথ এলাকার গৃহিণী রোমানা শারমিন ইতি বলেন, এক ঘণ্টা পরপর ইলেক্ট্রিসিটি চলে যাচ্ছে। ইলেক্ট্রিসিটি থাকলেও ভোল্টেজ ওঠানামা করছে। পাম্প বন্ধ থাকার কারণে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। রান্না-বান্নাসহ দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। লোডশেডিংয়ের ফাঁদে পড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা। পরীক্ষার আগের রাতে ভয়াবহ লোডশেডিং তাদের পড়াশোনায় বিঘ্ন সৃষ্টি করছে। শ্যামলী কাজী অফিস এলাকার বাসিন্দা শহীদুল্লাহ বলেন, লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় রাতে ঘুমানো যাচ্ছে না। দিনে ঘরে থাকা যায় না। দৈনন্দিন জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। লোকসানের শিকার হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিবছর বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ে প্রায় ১০ শতাংশ। গত বছর বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ৭৭০০ মেগাওয়াটের কিছু বেশি। সে হিসেবে এবার গরমে সর্বোচ্চ চাহিদা ৮০০০ মেগাওয়াট ছাড়াবে। চাহিদা অনুযায়ী পুরোটা সরবরাহ করতে না পারলেও গত পাঁচ বছরে বিদ্যুতের উৎপাদন দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। তবে প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহ করা গেলে চালু বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে ৮৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। সাম্প্রতিক সময়ের লোডশেডিংয়ের কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, জ্বালানির নিশ্চয়তা ছাড়াই যেখানে সেখানে কেন্দ্র স্থাপন করায় কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র অচল হয়ে পড়ে আছে। এ ছাড়া গ্যাসের সঙ্কটও রয়েছে। ফলে গরমের মধ্যে কমবেশি লোডশেডিং হচ্ছে। ঘাটতির পরিমাণও কম নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুপরিকল্পনার মাধ্যমে পেট্রোবাংলা ও বিপিসির সঙ্গে আলোচনা করে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করলে সেখানে জ্বালানি সরবরাহে কোন সমস্যা হতো না। এটা না করায় এখন ১০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার সচল বিদ্যুৎকেন্দ্র বেশির ভাগ সময় অচল পড়ে থাকছে। ফলে কয়েক হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগও অলস পড়ে থাকছে। ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা। পিডিবির হিসাব অনুযায়ী, ৬ই মে গ্যাসের অভাবে ৮১১ মেগাওয়াট উৎপাদন করা যায়নি। গত ৬ই জানুয়ারি জ্বালানির জন্য ১৪৪৫ মেগাওয়াট উৎপাদন হয়নি। মানবজমিন