শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > লেডি গাগা অন্য গ্রহের মানুষ!৫ দিনেও ব্যবস্থা নেয়নি জনপ্রশাসন

লেডি গাগা অন্য গ্রহের মানুষ!৫ দিনেও ব্যবস্থা নেয়নি জনপ্রশাসন

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ বাড়তি সুযোগ-সুবিধা নিতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেওয়া প্রশাসনের শীর্ষ পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গত ৫ দিনেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। আর অনৈতিক এ কাজের জন্য ওই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আদৌও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না তাও অনিশ্চিত।
এমনকি এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা তা নিয়ে মুখ খুলছেন না কেউ।
বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদিকের কাছে এ বিষয়ে জানার চেষ্টা করে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি না থাকায় প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনা করতে রাজি হননি।
বিষয়টি নিয়ে জনপ্রশাসন সচিবের সঙ্গে প্রতিমন্ত্রী কথা বলার পরামর্শ দেন। প্রতিমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা চলে সাংবাদিকদের। একপর্যায়ে দুপুরে মন্ত্রণালয়ের নিচে বারান্দায় কথা হয় জনপ্রশাসন সচিবের সঙ্গে।
ওই সময় সাংবাদিকদের অনানুষ্ঠানিক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেখা যাক, কী করা যায়’ বলেই শেষ করেন জনপ্রশাসন সচিব। গত কয়েকদিন থেকেই তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হচ্ছিলেন না।
এর আগে গত সোমববার মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা কোনো মন্তব্য করেন নি। জনপ্রশাসন সচিবের সঙ্গে তিনিও কথা বলার পরামর্শ দেন।
এদিকে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে আলোচনা চলছে তাদের বিরুদ্ধে অনৈতিক কাজের জন্য বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তারা বলছেন, মিথ্য তথ্য দিয়ে সনদ নেওয়ার বিষয়টি এখন প্রমাণিত।
অপরদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে আইনগত ব্যাখ্যা দিয়ে।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক সচিব মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান, স্বাস্থ্য সচিব নিয়াজ উদ্দিন মিঞা, সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সচিবালয়ের এ কে এম আমির হোসেন, ওএসডি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কে এইচ মাসুদ সিদ্দিকী এবং ওএসডি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব আবুল কাসেম তালুকদারের সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। এসব কর্মকর্তা চাকরিতে সময় বাড়ানোর সুযোগ ও অনৈতিক সুযোগ নিতেই মিথ্য তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেন।
ওই পাঁচ কর্মকর্তার সনদ বাতিলের দিন মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার নেই। ব্যবস্থা নেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

এ ঘটনার পর গত পাঁচ দিন পার হলেও বিষয়টি এখনও অস্পষ্ট। আর বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ায় দুদকের সুপারিশের ১০ দিন পার সনদ বাতিল হলেও এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি জানাতে পারছেন না জনপ্রশাসন সচিব।
জামুকার সিদ্ধান্তের পর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় তাদের সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে দিয়েছে কিনা জানতে চাইলে জনপ্রশাসন সচিব ওই সময় বলেন, ‘চিঠি পাইনি। তবে তারা চিঠি দেবে।’
গত ৮ সেপ্টেম্বর দুদকের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে জনপ্রশাসন ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায় দুদক।
জামুকার বৈঠকের সিদ্ধান্ত তুলে ধরে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের জানান, আগামী ২৬ মার্চ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ এবং পরিচয়পত্র দেওয়া হবে।
ভারত ও বাংলাদেশে প্রশিক্ষণ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধা ছাড়া অন্যদের সনদ পুনরায় যাচাই-বাছাই করা হবে। পুনরায় সরকারি ঘোষণা না আসা পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের অন্য সব তালিকা স্থগিত থাকবে।
এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অতিরিক্ত এক বছর চাকরির সুযোগ হারাচ্ছেন তারা। যদিও মোল্লা ওয়াহিদ অবসরে গেছেন আগেই।
বর্তমানে চাকরিতে বয়স সীমা ৫৯ বছর। মুক্তিযোদ্ধা সনদ পেলে চাকরিতে বয়স সীমা দাঁড়াতো ৬০ বছর।
অন্যদিকে সনদ বাতিলের এ সময়ে এসব কর্মকর্তার চাকরির সময় শেষ হয়ে আসছে। স্বাস্থ্যসচিব নিয়াজ উদ্দিন মিঞা এ বছরের ৩০ ডিসেম্বর অবসরোত্তর ছুটিতে যাবেন। তবে সনদ বাতিল না হলে চাকরিতে অতিরিক্ত সময় থাকার সুযোগ পেতেন।

মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান তিন বছর আগেই অবসরে গেছেন। এরপর তিন বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান। গত ১১ জানুয়ারি তাঁর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ শেষ হয়। চুক্তির মেয়াদ আবার বাড়িয়ে এবার তাকে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের চেয়ারম্যান করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওই সময়ের সচিব বর্তমানে ওসডি কে এইচ মাসুদ সিদ্দিকী অবসরে যাবেন এ বছরের ৩০ অক্টোবর। অপর দুই কর্মকর্তা সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সচিবালয়ের এ কে এম আমির হোসেন এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব আবুল কাসেম তালুকদারের চাকরির সময়ও শেষ হয়ে আসছে।
এতো কিছুর পরেও জনপ্রশাসন মিথ্যা তথ্য দিয়ে নেওয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেওয়ার বিষয়ে কোনো অগ্রগতি জানাতে পারছে না।