শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > লিগাটাম ইনস্টিটিউট এর প্রতিবেদন > ব্যবসা, সামাজিক পুঁজি ও সুশাসনে পিছিয়ে বাংলাদেশ

লিগাটাম ইনস্টিটিউট এর প্রতিবেদন > ব্যবসা, সামাজিক পুঁজি ও সুশাসনে পিছিয়ে বাংলাদেশ

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
১১ ধাপ পিছিয়ে সার্বিক অগ্রগতি অর্জনে বিশ্বের ১৪৯টি দেশের মধ্যে এ বছর বাংলাদেশের অবস্থান ১১৪। যেখানে গত বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০৩। যুক্তরাজ্যভিত্তিক বহুজাতিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান লিগাটাম ইনস্টিটিউট প্রকাশিত ‘প্রসপারিটি ইনডেক্স র্যাঙ্কিংস ২০১৬’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক উন্নতি হলেও সুশাসন, সামাজিক পুঁজি ও ব্যবসায় পরিবেশ সূচকে উন্নতি করতে ব্যর্থ হয়েছে। এর ফলে সার্বিক ক্রমতালিকায় পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে বলা হয়েছে, ২০০৭ সাল থেকে গত ৯ বছরে এ সূচকে বাংলাদেশ ২০ ধাপ উন্নতি করেছে। অর্থনৈতিক অগ্রগতি সূচকে চলতি বছরে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৭। ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হলেও যথেষ্টসংখ্যক কর্মসংস্থান তৈরি না হওয়ায় জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্ব আরোপ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মোট কর্মসংস্থানের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশের জোগান হচ্ছে অনানুষ্ঠানিক খাতে। গ্রামাঞ্চলের স্বল্প দক্ষ নারীরা এ খাতে বেশি কাজ করেন। রপ্তানিতে তৈরি পোশাক খাতের ওপর অতিনির্ভরশীলতার সমালোচনাও করা হয়েছে প্রতিবেদনে। যেখানে বলা হয়েছে, রপ্তানি আয়ের ৯০ শতাংশই এ খাত থেকে আসে। এটির বহুমুখীকরণ করতে না পারলে ভবিষ্যতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা কঠিন হবে।

তাদরে তথ্য মতে আরও বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশ ধর্মীয় উগ্রবাদ গত এক বছরে বাড়লেও নিরাপত্তা সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে।  এ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৬।

এর কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক দশকে বাংলাদেশ কোনো বড় ধরনের জাতিগত সংঘাত অথবা গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়েনি। রাতে একা চলাফেরায় ৮০ শতাংশ বাংলাদেশি নিজেদের নিরাপদ মনে করে। এটিও নিরাপত্তা সূচকে বাংলাদেশের ভালো করার অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। তবে ধর্মীয় উগ্রবাদ, রাজনৈতিক সংঘাত, প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো কিছু বিষয়ের কারণে নিরাপত্তা সূচকে গত সাত বছরে বাংলাদেশ ১৪ ধাপ পিছিয়ে পড়েছে।

প্রতিবেদন আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, পরিবেশ রক্ষা সূচকে বাংলাদেশ সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে আছে। এ সূচকে দেশটির অবস্থান ১৩৮। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যা, পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় জমির উর্বরতা শক্তি কমে যাওয়ার কারণে এ সূচকে বাংলাদেশ খারাপ অবস্থায় আছে।

এদিকে আবার জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে উর্বর জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে, নদীর পানিতে দূষণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সুপেয় পানির সরবরাহ কমছে, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। গ্রাম থেকে শহরমুখী মানুষের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় নগর অঞ্চলে বায়ুদূষণ বাড়ছে। এসব কারণে পরিবেশ রক্ষা সূচকে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়েছে।

অন্যান্য সূচকে তুলনামূলক অবস্থান সুশাসন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৯। এতে শীর্ষে রয়েছে ফিনল্যান্ড। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে নিউজিল্যান্ড ও নরওয়ে। শাসনব্যবস্থা, গণতন্ত্র, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও আইনের শাসনের মতো বিষয়গুলোকে এ সূচকের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

শিক্ষা সূচকে বাংলাদেশ রয়েছে ১১৯ নম্বরে। স্বাস্থ্য সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৯ নম্বরে। একটি দেশের নাগরিকেরা প্রয়োজনীয় শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন কি না, চিকিৎসা অবকাঠামোর মান ও বিভিন্ন সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে প্রতিষেধক ব্যবস্থার মতো পদক্ষেপগুলোকে এ সূচকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ব্যক্তিস্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশ ১০৫ নম্বরে স্থান পেয়েছে।  মৌলিক আইনগত অধিকার সুরক্ষায় একটি দেশ কতটুকু উন্নতি করল, সামাজিক সহনশীল অবস্থান আছে কি না, এসব বিষয় এ সূচকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক বহুজাতিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান লিগাটাম ইনস্টিটিউট প্রকাশিত ‘প্রসপারিটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, ব্যবসার পরিবেশ, সুশাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সামাজিক উন্নয়ন ও প্রাকৃতিক পরিবেশের মতো নয়টি বিষয়ে একটি দেশ গত এক বছরে কতটুকু উন্নতি অথবা অবনতি করল, সে ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।