লাকসামে মাদ্রাসা ছাত্রীর মৃত্যু নিয়ে ধুম্রজাল ; ৯ দিনেও মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ পুলিশ

সৈয়দ মুজিবুর রহমান দুলাল, লাকসাম.

কুমিল্লার লাকসামে ইক্বরা মহিলা মাদ্রাসায় সপ্তম শ্রেণির এক আবাসিক শিক্ষার্থীর মৃত্যু ঘিরে ধুম্রজাল ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গত ৯ দিনেও মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। নিহত শিক্ষার্থীর নাম সামিয়া আক্তার (১৩)। সে নাঙ্গলকোট পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের নাওগোদা গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী মো. নিজাম উদ্দিনের মেয়ে।

শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) রাজধানী ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই শিক্ষার্থী মারা যায়।আগেরদিন বৃহস্পতিবার (১৭)  দিবাগত রাত তিনটার দিকে মাদ্রাসার পাশে লাকসাম পৌরসভা সড়কে ওপর থেকে আহত অবস্থায় স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করেন। নিহত ওই শিক্ষার্থীর স্বজনদের অভিযোগ মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ পরিকল্পিভাবে তাকে হত্যা করেছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। তাঁরা বলছেন মাদ্রাসা থেকে পালানোর সময় ওই শিক্ষার্থী দুর্ঘটনার শিকার হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।

এদিকে সামিয়ার মৃত্যুর রহস্য ও সঠিক কারণ উদঘাটনের দাবি জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) লাকসাম ও নাঙ্গলকোটে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন নিহত সামিয়ার পরিবার, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন,  শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এবং  বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

তিনি জানান, ওই সময় মেয়েটি কিছু কথা বলতে চেয়েছেন।  কিছু কথা বলেছেনও। যা লাকসামে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কর্তব্যরত নার্স’র বা কর্তৃপক্ষের নিকট ওডিও বা ভিডিও রেকর্ড থাকতে পারে।এ ঘটনায় লাকসাম থানা একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করা হয়েছে।

পুলিশ, নিহত শিক্ষার্থীর স্বজন ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ মার্চ সামিয়াকে ওই মাদ্রাসায় (আবাসিকে) সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। গত ১৩ এপ্রিল সামিয়াকে বাড়ি নিতে তার বড় বোন এবং খালা মাদ্রাসায় আসেন। কিন্তু মাদ্রাসা প্রধান মো. জামাল উদ্দিন তাকে ছুটি দেননি। ছুটি না দেওয়ায় সে কান্নাকাটি শুরু করে।

সামিয়ার বড় বোন নাজমিন আক্তার ও খালা রাবেয়া বেগম জানান, সামিয়ার কান্নাকাটি দেখে তাঁরা মাদ্রাসা প্রধানের নিকট ছুটির আবেদন জানিয়ে তাকে নিতে চাইলে তিনি ছুটি তো দেনই নাই। উপরন্ত তাঁদের ধমক দিয়ে মাদ্রাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। একপর্যায়ে ওই মাদ্রাসার দারোয়ান খলিলুর রহমানের তাঁদের ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন।

মাদ্রাসার প্রধান মো. জামাল উদ্দিন এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ঈদের ছুটির পর সপ্তাহখানেক আগে ওই শিক্ষার্থীর নিয়মিত ক্লাস শুরু হয়। তবে সে মাদ্রাসার আবাসিকে থাকতে সে অনাগ্রহী ছিলো।

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) রাতে ওই শিক্ষার্থী তার মাকে ফোন দেয় এবং বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। গভীর রাতে মাদ্রাসার একটি জানালার গ্রীলের ফাঁকা জায়গা দিয়ে পালাতে গিয়ে নিচে পড়ে আহত হয়। এমতবস্থায় স্থানীয় লোকজন দেখে আমাকে মুঠোফোনে অবহিত করলে আমিসহ অন্যান্যরা তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। সেখানে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সে মারা যায়। নিহত সামিয়ার মা শারমিন আক্তারের অভিযোগ, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন কথা বলে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছে। তাঁর মেয়েকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

এদিকে ঘটনার অনুসন্ধানে সরেজমিনে ওই মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা গেছে, পাঁচতলা ভবনটির অজুখানার পাশে একটি জানালা। ওই জানালার দু’টি গ্রীলের মধ্যখানে ৬ইঞ্চি পরিমান ফাঁকা। ওই ফাঁকা স্থান দিয়ে একজন মানুষ বই-খাতা, কাপড়-চোপড়ের একটি ব্যাগ নিয়ে বের হওয়া অনেক কষ্টসাধ্য। নীচে আরসিসি ঢালাই সড়ক এবং আরসিসি ঢালাই নালার ওপর আরসিসি ঢালাই স্ল্যাব। পাশে বৈদ্যূতিক খাম। ওপরে ৪৪০ ভোল্টের বিদ্যূতের সচল লাইন। এমতবস্থায় প্রায় ৫০ ফুট ওপর থেকে ১৩ বছরের একজন শিশু নীচে পড়লো। কিন্তু একফোটা রক্ত বের হলো না! কোথাও ভাংগলো না! বিষয়টি অত্যন্ত রহস্যজনক বলে মনে করছেন অভিজ্ঞমহল। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, মাদরাসা কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে পাঁচতলা ভবনের জানালার একটি ফাঁকা জায়গা দিয়ে ওই শিক্ষার্থী পালাতে গিয়ে নিচে পড়ে আহত হয়েছে। এটিকেও যদি সত্য বলে মনে করি। তাহলেও এ ক্ষেত্রেও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারেন না। তাঁদের গাফিলতির কারণেই এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে।

এই ব্যাপারে লাকসাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজনীন সুলতানা বলেন, এ ঘটনায় নিহত ওই শিক্ষার্থীর মামা নাছির উদ্দিন থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করেছেন।

ওসি আরো বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।  ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া সাপেক্ষ প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

শেয়ার করুন

Related News

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫