শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > লাইসেন্স বাতিলের হুমকিতে সিটিসেল

লাইসেন্স বাতিলের হুমকিতে সিটিসেল

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: বাতিল হচ্ছে মোবাইল ফোন অপারেটর সিটিসেলের লাইসেন্স। একই সঙ্গে দ্বিতীয় প্রজন্ম (টুজি) গাইডলাইনের শর্ত ভঙ্গ করায় সিটিসেলের মালিক, সব পরিচালক ও সিইওর বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে মামলা করা হচ্ছে। জানা গেছে, বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মোট পাওনা ২৫২ কোটি টাকা পরিশোধ না করে কালক্ষেপণের চেষ্টার অভিযোগে সম্প্রতি এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, লাইসেন্স বাতিলের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে এরই মধ্যে বকেয়া পরিশোধে ২১ কার্যদিবস সময় দিয়ে সিটিসেলকে কারণ দর্শানোর চূড়ান্ত নোটিশ দিয়েছে বিটিআরসি। তবে সিটিসেলের পক্ষ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ বাতিল ও পাওনা পরিশোধের সময় বাড়ানোর জন্য চিঠি দেয়া হলেও বিটিআরসি এই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পাওনা পরিশোধ করার নির্দেশনা দিয়েছে। অন্যথায় লাইসেন্স বাতিলসহ মামলা করা ছাড়া বিকল্প কোনো রাস্তা নেই বলেও সিটিসেল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
বিটিআরসির সর্বশেষ সভায় (১৭৫তম সভা) সিটিসেলের বিষয়ে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ অবস্থায় আতংক নেমে এসেছে সিটিসেলের সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে। অনেকে চাকরি হারানোর ভয়ে আছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মচারী জানান, বিটিআরসির চিঠি পাওয়ার খবর জেনে সিটিসেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ফুঁসে উঠেছে ম্যানেজমেন্টের বিরুদ্ধে। দু-একদিনের মধ্যে তারা ম্যানেজমেন্টের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার কথাও ভাবছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, ইন্টারনেট সার্ভিসে সিটিসেল এখনও দেশে অন্যান্য মোবাইল ফোন অপারেটরের মধ্যে বেশ ভালো অবস্থানে আছে। কিন্তু ম্যানেজমেন্ট ও মালিকপক্ষের কতিপয় দুর্নীতিবাজ পরিচালকের কারণে প্রতি মাসে শত শত কোটি টাকা লুটপাট হচ্ছে। তারা বলেছে, মোবাইল ফোন অপারেটরের সিইও হিসেবে মেহবুব চৌধুরী যোগদানের পর থেকেই মূলত এ প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। অভিযোগ উঠেছে সিইওর নেতৃত্বে মার্কেটিং ও কমিউনিকেশন এবং টেকনিক্যাল বিভাগের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা শত শত কোটি টাকা লোপাট করেছে। কর্মকর্তারা বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) দিয়ে তদন্ত করানোর দাবি জানান। তাদের বক্তব্য, এটা করা হলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে। শুধু তাই নয়, সিটিসেলের দুর্নীতিবাজ এই চক্রটি বিটিআরসির একটি অসাধু চক্রের সঙ্গে আঁতাত করে প্রতি বছর হাজার কোটি টাকার ভিওআইপি বাণিজ্য করছে বলেও তারা জানান। অভিযোগ রয়েছে, সিটিসেলের ইন্টারনেট সার্ভিস ব্যবহার করে সরকারবিরোধী একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠী ও জঙ্গি সংগঠনের নেতাকর্মীরা দেশে-বিদেশে নানা অপকর্ম চালাচ্ছে। সিটিসেলের শীর্ষ কর্মকর্তারা এসব জেনেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
অভিযোগ রয়েছে, মোটা অংকের টাকা আন্ডারহ্যান্ড ডিলিং থাকায় এ নিয়ে কেউ টুঁ শব্দ করছে না। এ বিষয়ে জানতে রোববার সিটিসেলের সিইও মেহবুব চৌধুরীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও জনসংযোগ শাখা থেকে তিনি অফিসে নেই বলে জানানো হয়েছে। সংস্থার হেড অব কর্পোরেট কমিউনিকেশন্স অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স তাসলিম আহমেদ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিটিসেলের কাছে সরকারের বকেয়া পরিশোধের সময়সীমা বৃদ্ধি সম্পর্কে ৯ ফেব্রুয়ারি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ৩০ মার্চের মধ্যে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয় বিটিআরসিকে। ওই সভায় সিটিসেলের বিষয়ে ৬টি সিদ্ধান্ত হয়। সিটিসেল চলতি মার্চের মধ্যে টুজি তরঙ্গ ফি বাবদ ২২৯ কোটি, রেভিনিউ শেয়ারিং ফি ৪ কোটি ৮৭ লাখ, সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল বাবদ সরকারের প্রাপ্য ২৬ কোটি টাকা পরিশোধের জন্য সিদ্ধান্ত হয়। সিটিসেলের পক্ষে সময় বাড়ানোর আবেদন করা হলেও বিটিআরসি তা নাকচ করে দিয়েছে। এ অবস্থায় যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে সিটিসেলের অপারেশন।
বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ কমিশন সভায় সিটিসেলের পাওনা পরিশোধের সময় বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলেও সময় না বাড়ানোর সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
উল্লেখ্য, সিটিসেলের কাছে টুজি রিনিউয়্যালের দ্বিতীয় ও তৃতীয় কিস্তি বাবদ ২২৯ কোটি টাকা, স্পেকট্রাম ফি (অক্টোবর-ডিসেম্বর/২০১৩, জানুয়ারি-মার্চ/২০১৪, এপ্রিল-জুন/২০১৪) বাবদ ৭ কোটি ৪০ লাখ ২৮ হাজার ৩০৯ টাকা, রেভিনিউ শেয়ারিং (জানুয়ারি-মার্চ/২০১৪, এপ্রিল-জুন/২০১৪) বাবদ ৮ কোটি ৪৮ লাখ ৯২ হাজার ৫৪৪ টাকা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল (নভেম্বর/২০১১-মার্চ-২০১৪) বাবদ ৫ কোটি ৯৩ লাখ ১৫ হাজার ৮৯১ টাকা অর্থাৎ সব মিলে ২৫২ কোটি ৮২ লাখ ৩৬ হাজার ৭৪৪ টাকা পাওনা রয়েছে।
বিটিআরসি একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, পাওনা পরিশোধে সিটিসেলকে ৫ থেকে ৬টি চিঠি দেয়া হয়েছে। তাদের বিষয়ে রেজুলেশনও হয়েছে ৬টি। বকেয়া পরিশোধের জন্য সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে বারবার। তবে কোনো সময়সীমার মধ্যেই বকেয়া পরিশোধ করতে পারেনি কোম্পানিটি। তাই সিটিসেলের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই কমিশনের হাতে। তিনি বলেন, সর্বশেষ টেলিযোগাযোগ আইন ২০০১-এর ৪৬ ধারার বিধান অনুযায়ী লাইসেন্স বাতিলসহ কেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে না এই মর্মে ২১ দিনের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। সূত্র- যুগান্তর