বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: লবণ আমদানির সুফল পাচ্ছেন না ক্রেতারা। এখনো বিভিন্ন ব্রান্ডের লবণের খুচরা মূল্য কেজিপ্রতি ৪০ টাকা থেকে ৪২ টাকা।
মাসখানেক আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে গিয়ে লবণ ব্যবসায়ীরা প্যাকেটজাত লবণের দাম কেজিপ্রতি ৫ টাকা কমানোর ঘোষণা দিলেও তার বাস্তবায়ন নেই বাজারে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দুই দফায় দুই শতাধিক ব্যবসায়ীকে আড়াই লাখ টন লবণ আমদানির অনুমোদন দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রতি টন ক্রুড লবণ ২০ ডলার দরে কেনার পর এ মাসের প্রথম সপ্তাহেই মিলে পৌঁছে এবং উৎপাদনের পর সেই লবণ বাজারেও চলে গেছে। কিন্তু দাম কমাননি ব্যবসায়ীরা।
লবণ ব্যবসায়ীদের দাবি, বেনামি প্রতিষ্ঠানকে আমদানির অনুমতি ও একই প্রতিষ্ঠানকে একাধিক আমদানিপত্র দেওয়ায় এ সংকট দেখা দিয়েছে।
প্যাকেট লবণ উৎপাদক কোম্পানিগুলো বলছে, মূলত ক্রুড লবণের অভাবেই দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ আছে তাদের লবণ প্রক্রিয়াকরণ কারখানাগুলো। সরকার যে পরিমাণ লবণ আমদানির অনুমতি দিয়েছে, তা দিয়ে কোনো কোনো কারখানা একদিনের বেশি চালানোও সম্ভব নয়। ফলে ছোট ছোট লবণ ব্যবসায়ী ও ব্যবসা ছেড়ে দেওয়া ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আমদানির লবণ তিন থেকে চারগুন বেশি দামে কিনে প্যাকেটজাত করতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বেশি পড়ে যাওয়ায় প্যাকেটজাত লবণের দাম কমানো যাচ্ছে না।
এসিআই সল্টের বিজনেস ম্যানেজার কামরুল হাসান বলেন, ‘আমরা দুই দফায় ১ হাজার ২শ’ টন লবণ আমদানির অনুমতি পেয়েছি। এক মাসেরও বেশি সময় আমাদের কারখানায় উৎপাদন বন্ধ আছে। গড়ে প্রতিদিন আমাদের উৎপাদন ক্ষমতা ছয়শ’ টন। আমদানির লবণ দিয়ে কারখানা চালু করলে দু’দিনেই তা শেষ হয়ে যাবে। তাছাড়া ক্রুড লবণের সিস্টেম লসের সঙ্গে মিলের প্রক্রিয়াকরণ পাইপে যে লবণ আটকে থাকবে, তাতে উৎপাদন খরচ উঠবে না’।
তিনি বলেন, ‘আমরা যদি কমপক্ষে ৩০ হাজার টন লবণ আমদানির অনুমতি পেতাম তাহলে এক মাসেরও বেশি সময় কারখানা চালু রাখা যেতো। বাজারে এর প্রভাব পড়তো, দামও কমতো। সরকারের দেওয়া আমদানির সুযোগ জনগণের কাজে আসতো’।
কনফিডেন্স সল্টের সাইদুল হাসান বলেন, ‘আমরা ১ হাজার ২শ’ টন লবণ আমদানির অনুমতি পেয়েছি। এতে আমাদের কারখানা ছয়দিন চলেছে। তা দিয়ে পেইন্ডিং অর্ডার মেটানো গেছে। কিন্তু এখন আবার মিল বন্ধ আছে। লবণ আমদানির সুযোগ পাওয়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ৫ টাকার লবণ ১৪ টাকা হাঁকছেন। এ দরে লবণ কিনে বাজারে কিভাবে ইফেক্ট ফেলা যাবে, তা বোধগম্য নয়’।
তিনি বলেন, ‘ক্রুড লবণ প্রক্রিয়া করতে গেলে ৬৫ শতাংশ সিস্টেম লস হয়। সব খরচ মিলিয়ে আমদানির লবণের দর কমার সম্ভাবনা দেখি না’।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তালিকাভুক্ত দুই শতাধিক লবণ মিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে লবণ আমদানির অনুমোদন পেয়েছে। তাদের বেশিরভাগই এখন লবণ ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেই। কোনো কোনো কোম্পানি একাধিক নামে আর কোনো কোনো কোম্পানি অনুমোদন পেয়েছে গুদামের ঠিকানায়। যেমন: মোল্লা সল্ট চারটি কোম্পানির নামে আর মধুমতি সল্ট অনুমোদন পেয়েছে টেকনাফের হ্নীলায় অবস্থিত গুদামের নামে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনেকেও পারমিট ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছেন। প্রতিদিন ৫শ’ টন থেকে ১ হাজার ২শ’ টন লবণ প্রক্রিয়া করা মিল আর ছয় বছর বন্ধ থাকা বা ব্যবসা ছেড়ে দেওয়া মিল মালিকদের সমপরিমাণ লবণ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বিসিকের হিসেবে, প্রতি বছর দেশে লবণের চাহিদা প্রায় সাড়ে ১৬ লাখ টন। গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ১২ লাখ টন, নভেম্বরে ৭১ হাজার ২২৬ টন ও ডিসেম্বরে ৬৪ হাজার ৭৭৬ টন এবং এ বছরের জানুয়ারিতে ৫৭ হাজার ৪২১ টন ও ফেব্রুয়ারিতে ৫৯ হাজার ৭৫২ টন উৎপাদিত হয়েছে।
বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির তথ্যমতে, লবণ উৎপাদন কম হওয়ায় মূলত দাম বেড়েছে। বাজারে লবণের ঘাটতি পূরণ করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত ১৪ আগস্ট ৭৫ হাজার টন ভোজ্য ও ৭৫ হাজার টন শিল্পে ব্যবহৃত লবণ আমদানির অনুমতি দেয়। আমদানি ও রফতানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দফতর থেকে ১২১টি মিলকে ৬২০ টন করে ভোজ্য লবণ ও ১২০টি মিলকে ৬২৫ টন করে শিল্পে ব্যবহৃত লবণ আমদানির চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এর বাইরে নতুন করে আরও ১ লাখ টন আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
কাগজপত্রে বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সদস্য সংখ্যা ৪০৫। তবে এসব মিলের বেশিরভাগ এখন বন্ধ। অনেক মিল নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।