শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > লতিফ সিদ্দিকী চলতি অধিবেশনে সংসদে যাচ্ছেন

লতিফ সিদ্দিকী চলতি অধিবেশনে সংসদে যাচ্ছেন

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: চলতি ১০ম জাতীয় সংসদের ৫ম অধিবেশনে যোগ দিতে প্যারোলে মুক্তি চেয়েছেন সাংসদ সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। এ বিষয়টি বিবেচনা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে কর্তৃপক্ষ। তিনি সংসদের এ অধিবেশনে যোগ দিতে পারেন এবং তৈরিও হচ্ছেন।

অন্যদিকে সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর বাম চাখে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। বুধবার বেলা ১১টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অধ্যাপক ও চক্ষুবিশেষজ্ঞ জাফর আহমেদ অস্ত্রোপচার করেন।
বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে লতিফ সিদ্দিকীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, বার্ধক্যজনিত কারণে তার বাম চোখে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। ডান চোখেও অস্ত্রোপচার করতে হবে।
তবে লতিফ সিদ্দিকীর পরিবারের একটি সূত্র জানাগেছে, সংসদের অধিবেশনে যোগ দিতে প্যারোলে মুক্তির আবেদন করেছেন লতিফ সিদ্দিকী। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদনটি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
এদিকে বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (রাজনৈতিক) মো. হাবিবুর রহমান বলেছেন, সরকার লতিফ সিদ্দিকীকে প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, লতিফ সিদ্দিকীর পক্ষ থেকে প্যারোলে মুক্তির আবেদনটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবের দপ্তরে রয়েছে। গত মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ে বৈঠকে আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
ওই আবেদনে আবেগঘন ভাষায় তিনি বলেছেন, অনেক ঝঞ্ঝার পরও ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সংসদ সদস্য হয়েছি। বাবা-মায়ের পর জাতীয় সংসদ আমার অতি শ্রদ্ধার একটি জায়গা। তাই যে কোন উপায়ে জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনের প্রতিটি দিন উপস্থিত এবং সংসদীয় ব্যবস্থায় ভূমিকা রাখতে চাই।
আশা করছি, এ বিষয়ে আমাকে বিমুখ করা হবে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রতিবেদককে বলেন, কারা অধিদপ্তরের এ ধরনের কোন চিঠি এখনও নজরে পড়েনি। তবে জেলখানায় থেকেও সংসদ অধিবেশনে যোগ দেয়ার নজির আছে। সেটা অবশ্যই পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেখা হবে।
কারা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের আমন্ত্রণপত্র এবং লতিফ সিদ্দিকীর আবেদনসহ একটি চিঠি গত মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে কারা অধিদপ্তর। ওই চিঠিতে সংসদ অধিবেশনে লতিফ সিদ্দিকীর উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, লতিফ সিদ্দিকীকে সংসদ অধিবেশনে যোগ দেয়ার অনুমতি দিতে চাইলে তাকে প্যারোলে মুক্তি দিতে হবে।
কিন্তু লতিফ সিদ্দিকীকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে সংসদ অধিবেশনে যোগ দেয়ার অনুমতি দেয়া হবে কিনা- এটা এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বিষয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, লতিফ সিদ্দিকীর বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। সহসাই তার বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ফাইল পাঠানো হতে পারে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সফরে থাকার সময় গত ২৮শে সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে টাঙ্গাইল সমিতি’র সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে লতিফ সিদ্দিকী হজ, তাবলীগ জামাত, প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ও সাংবাদিকদের সম্পর্কে নানা বেফাঁস মন্তব্য করেন। এরপর তা নিয়ে শুরু হয় তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। লতিফ সিদ্দিকী সেদিন বলেছিলেন, আমি কিন্তু হজ আর তাবলীগ জামাতের ঘোরতর বিরোধী।
আমি জামায়াতে ইসলামীরও বিরোধী। এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, বিপুল সংখ্যক মানুষ হজে যাওয়ায় দেশের অর্থ আর শ্রম শক্তির অপচয় হয়। তার ওই বক্তব্যের ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে কয়েকটি ইসলামী দল আন্দোলনের হুমকি দেয়। তাকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেয়ার পাশাপাশি গ্রেপ্তারের দাবিও তোলে বিএনপি। সারা দেশে তুমুল সমালোচনার পড়েন লতিফ সিদ্দিকী। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত আনার অভিযোগ এনে সারা দেশে দুই ডজনেরও বেশি মামলা হয়। বেশ ক’টি মামলাতে জারি হয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা।
এমন অবস্থার মধ্যে নিউ ইয়র্ক থেকে ফিরে গত ৩রা অক্টোবরই এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন লতিফ সিদ্দিকী আর মন্ত্রিসভায় থাকবেন না। হজ শেষে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ও মন্ত্রী পরিষদ সচিব মোশাররফ হোসাইন ভূঁইঞা দেশে ফেরার পর ১২ই অক্টোবর লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিত্ব থেকে অপসারণ করা হয়।
এরপর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য থেকে বাদ দেয়া হয়। গেল বছরের ২৩শে নভেম্বর অনেকটা আকস্মিকভাবে দেশে ফেরেন লতিফ সিদ্দিকী। এরপর ২৫শে নভেম্বর আত্মসমর্পণের পর থেকেই জেলখানায় বন্দি। যদিও বর্তমানে অসুস্থ অবস্থায় বিএসএমএমইউ হাসপাতালের প্রিজন সেলে আছেন। সেখানেই কাটছে তার বন্দি জীবন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের একটি হোটেলে সেখানকার টাঙ্গাইল সমিতির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়ে লতিফ সিদ্দিকী পবিত্র হজ ও তাবলিগ জামাত নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে কটাক্ষ করে বক্তব্য দেন। এরপর দল ও মন্ত্রিত্ব থেকে অপসারিত হন লতিফ সিদ্দিকী।
ওই মন্তব্যের জন্য ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ঢাকা ও দেশের ১৮টি জেলায় ২২ টি মামলা করা হয়। গত ২৫ নভেম্বর লতিফ সিদ্দিকী রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় আত্মসমর্পণ করেছেন। এর পর থেকে তিনি বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ তার ফাঁসি চেয়ে বক্তব্য দিয়েছেন।
আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে মুরতাদ ঘোষণা করেছেন হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী। পবিত্র হজ পালনের জন্য বর্তমান মক্কায় অবস্থান করছে হেফাজত ওই আমির।
লতিফ সিদ্দিকী ইসলামের মৌলিক বিধান পবিত্র হজ, হাজি সাহেবান, মহানবী (সা.) এবং পবিত্র আরববাসী সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ ও কটাক্ষ করে যে বক্তব্য দিয়েছে তাতে তিনি মর্মাহত হয়েছেন বলে এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেন আল্লামা শফী।
আল্লামা শফী বলেছিলেন, লতিফ সিদ্দিকী ইসলামী শরীয়ত বিধান অনুযায়ী ইসলামের মৌলিক স্তম্ভ পবিত্র হজকে কটাক্ষ করায় সে মুরতাদ হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, হজ মহান আল্লাহ প্রদত্ত বিধান। এই বিধানকে ফরজ করে পবিত্র কোরআনে আয়াত নাজিল হয়েছে। আর মহানবী (সা.) আল্লাহ প্রেরিত সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ট নবী ও রাসূল। সকল নবীদের সরদার।
একটি মুসলিম প্রধান দেশের মন্ত্রী হয়ে মহানবী (সা.), হজ, তাবলিগ জামায়াত ও আরববাসীদের নিয়ে কটূক্তি করে চারটি মৌলিক অপরাধ করে ইসলাম ধর্ম থেকে খারিজ হয়ে গেছে লতিফ সিদ্দিকী। সে মুরতাদ। ইসলামে মুরতাদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
শেখ হাসিনা সরকার বিষয়টিকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পরিচালনা করেন। কিন্তু একাধিক আইনবিশেষজ্ঞের মতে, বাংলাদেশের প্রচরিত আইনে তার সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে দু’বছর। জানা গেছে, তাকে এ মুহূর্তে কঠোর কোনো ব্যবস্থা নেওয়্র সুযোগ নেই সরকারের। এ কারণেই, তিনি প্যারলো মুক্তি পেয়ে জাতীয় সংসদে তার নিজ এলাকার জনগণের দাবি-দাওয়ার বিষয় নিয়ে সংসদে কথা বলার সুযোগ পেতে পারেন। বেঙ্গলিনিউজটোয়েন্টিফোর.কম