শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > রেলওয়ের ৭০ ইঞ্জিন কেনার দরপত্র বাতিল হলো

রেলওয়ের ৭০ ইঞ্জিন কেনার দরপত্র বাতিল হলো

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ পুরনো মডেলের ৭০টি ইঞ্জিন কেনার দরপত্র বাতিল করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। দরপত্রে ঘূর্ণন গতিবেগ একক (রোটেশন পার মিনিট— আরপিএম) নির্দিষ্ট করে দিয়ে ২০ বছরের পুরনো দুই স্ট্রোকবিশিষ্ট মডেলের ইঞ্জিন সরবরাহের উল্লেখ ছিল। ২৫টি প্রতিষ্ঠান এতে আগ্রহ দেখালেও মাত্র তিনটি প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত দরপত্রে অংশ নেয়। আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ায় গত মাসে বাতিল করা হয়েছে ওই দরপত্র প্রক্রিয়া।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৭০টি মিটার গেজ ইঞ্জিন কেনার আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। দরপত্রে ইঞ্জিনের গতিবেগ একক আরপিএম নির্ধারণ করে দেয়া হয় ৯০০ থেকে ১১০০-এর মধ্যে। কিন্তু এ রকম ইঞ্জিন জেনারেল মোটরসের কোরিয়া ইউনিট ছাড়া আর কোনো প্রতিষ্ঠানই নির্মাণ করে না। ইএমডি-৭১০ সিরিজ ইঞ্জিন নামে পরিচিত এগুলো। দরপত্রে অংশ নেয় যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল মোটরস (কোরিয়া ইউনিট), জার্মানির সিমেন্স ও কানাডার বোম্বারডিয়ার। সংশ্লিষ্টরা জানান, পুরনো দুই স্ট্রোকবিশিষ্ট হওয়ায় ইঞ্জিনপ্রতি বছরে ৫০ লাখ টাকার অতিরিক্ত জ্বালানি প্রয়োজন হবে। পাশাপাশি ইঞ্জিনগুলো কিনতে অতিরিক্ত ব্যয় হবে প্রায় শতকোটি টাকা।

বাংলাদেশ রেলওয়ের যুগ্ম পরিচালক (মেকানিক্যাল) ও প্রকল্প পরিচালক মো. মতিন চৌধুরী বলেন, আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ায় ৭০টি মিটার গেজ ইঞ্জিন কেনার দরপত্র বাতিল করা হয়েছে। শিগগিরই নতুন দরপত্র আহ্বান করা হবে। এক্ষেত্রে শর্তে কিছুটা পরিবর্তন আনা হবে। আশা করা যায়, এবার আরো বেশি সাড়া পাওয়া যাবে।

জানা গেছে, ইঞ্জিন সরবরাহে আগ্রহী দুই কোম্পানি আগের দরপত্রের শর্ত নিয়ে মার্চে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আপত্তি জানায়। চিঠিতে বলা হয়, রেলওয়ে যে ইঞ্জিন কিনবে, তা ২০ বছরের পুরনো মডেলের ও দুই স্ট্রোকবিশিষ্ট। এতে জ্বালানি খরচও বেশি। বর্তমানে সারা বিশ্বে যেসব ইঞ্জিন চালু রয়েছে, সেগুলো ইএমডি-৭১০ সিরিজের তুলনায় কমপক্ষে ১০ শতাংশ জ্বালানিসাশ্রয়ী। এতে প্রতিটি ইঞ্জিন বছরে ৫০ লাখ টাকার জ্বালানি সাশ্রয় করবে। এ হিসাবে ৭০টি ইঞ্জিন ২০ বছরে শুধু জ্বালানি সাশ্রয় করবে ৭০০ কোটি টাকার। এগুলো পরিবেশবান্ধবও।

রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিং স্টক) খলিলুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, রেলওয়ে দীর্ঘদিন ধরে যে ইঞ্জিন ব্যবহার করে আসছে, এবারো সেই একই ইঞ্জিন কেনার চেষ্টা করা হচ্ছে। নতুন মডেলের ইঞ্জিন কেনা হলে রেলওয়ের লোকজনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে প্রচুর সময় লাগবে। এছাড়া ইঞ্জিনের কম গতিবেগ বাংলাদেশের জন্য উপযোগী। বেশি গতিবেগে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ে। এর আগে বেশি আরপিএমের ইঞ্জিন কেনা হয়েছিল। কিন্তু তার ফল ভালো হয়নি। এ কারণে আগের ইঞ্জিনই কেনা হচ্ছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ৭০টি ইঞ্জিন কেনায় ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৯৪৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। বিডার্স ফিন্যান্সের মাধ্যমে এগুলো কেনা হবে। এক্ষেত্রে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নিজেই ঋণের সংস্থান করবে, বাংলাদেশ সরকার সুদসহ এ ঋণ পরিশোধ করবে। এর মধ্যে সম্পূর্ণ চালু অবস্থায় কেনা ৩০টি ইঞ্জিনের দাম ধরা হয়েছে ৯২৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ ইঞ্জিনপ্রতি দাম পড়বে ৩০ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

অথচ ২০০৯ ও ২০১১ সালে রেলওয়ের জন্য একই ধরন ও বৈশিষ্ট্যের যথাক্রমে ৯টি ও ১১টি ইঞ্জিন কেনায় খরচ ছিল অনেক কম। এগুলোর সরবরাহকারীও ছিল জিএম মোটরসের দক্ষিণ কোরিয়া ইউনিট। ২০০৯ সালে কেনা প্রতিটি ইঞ্জিনের দাম ছিল প্রায় ১৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা (২৮ লাখ মার্কিন ডলার)। ২০১১ সালে কেনা প্রতিটির দাম ধরা হয় প্রায় ২৮ কোটি টাকা (৩৫ লাখ ডলারে)। সে হিসাবে ইঞ্জিনপ্রতি ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করা হচ্ছে।

৭০টি ইঞ্জিনের মধ্যে আংশিক খোলা ২৫টির দাম ধরা হয়েছে ৫৪৬ কোটি টাকা। আর সম্পূর্ণ খোলা ১৫টি ইঞ্জিনের দাম ধরা হয়েছে ২৯৪ কোটি টাকা। রেলওয়ের নিজস্ব কারখানায় এসব ইঞ্জিন সংযোজন করা হবে। এগুলোর ক্ষেত্রেও ইঞ্জিনপ্রতি ১ কোটি টাকা করে বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে।