শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > রায় কে লিখেছেন জাতি জানতে চায়

রায় কে লিখেছেন জাতি জানতে চায়

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মানবতাবিরোধী মামলায় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায় ফাঁস হওয়া খসড়া কপি আইন মন্ত্রণালয়ে রতি ছিল বলে পত্রিকায় যে প্রতিবেদন এসেছে, সে পরিপ্রেেিত বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা বলেছেন, আসলে রায়টা কে লিখেছে। আইন মন্ত্রণালয়ের কম্পিউটারের ভেতরে রায়টা গেল কি করে, ঢুকল কি করে?

ট্রাইব্যুনালের উদ্দেশে তারা আরও বলেন, জাতি জানতে চায় আপনাদের কাছ থেকে, আসলে এ রায়টা কে লিখেছে। ট্রাইব্যুনালকে অনুরোধ করব- যদি আপনারা সেটা না বলেন, তাহলে এই দোটানার জাজমেন্টের ক্রেডিবিলিটি (বিশ্বাসযোগ্যতা) নিয়ে সমগ্র বিশ্বে যেমন প্রশ্ন দেখা দেবে তেমনি বাংলাদেশের মানুষের কাছেও প্রশ্ন দেখা দেবে। বুধবার বিএনপি নেতৃত্বাধীন সুপ্রিমকোর্ট বার আয়োজিত এক বিশেষ সভায় বক্তৃতাকালে আইনজীবী নেতারা এসব কথা বলেন। এসময় বিএনপি সমর্থক সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনতে সরকার পরে আইনজীবীদের আবেদনের কঠোর সমালোচনা ও তীব্র নিন্দা জানান নেতৃবৃন্দ। সভায় বারের সিনিয়র সদস্য ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিমকোর্ট বারের পর পর দুবার নির্বাচিত সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেনের একটি বক্তব্যের ব্যাপারে প্রসিকিউশন টিম আজ (বুধবার) ট্রাইব্যুনালে উনার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করার উদ্যোগ নিয়েছে। কলাবোরেটর অ্যাক্টসে বাংলাদেশে যে বিচার হচ্ছিল খন্দকার মাহবুব হোসেনকে সেই বিচারের চিফ প্রসিকিউটরের দায়িত্ব দিয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। সুতরাং তিনি যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে অত্যন্ত বিজ্ঞ একজন সিনিয়র আইনজীবী। তিনি আদালত অবমাননার বিষয়ে কি বলেছেন, তা আমাদের বোধগম্যের বাইরে।

তিনি আরও বলেন, ট্রাইব্যুনালে যাদের বিচার হচ্ছে আইন প্রতিমন্ত্রী বিচার চলাকালীন তাদের ফাঁসি দাবি করেছেন। বহুবার দাবি করেছেন। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায় আইন মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া যায়নি, এমন কথা আইন প্রতিমন্ত্রী দাবি করতে পারেননি। তিনি বলেছেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। এর অর্থ আইন প্রতিমন্ত্রী স্বীকার করে নিয়েছেন যে, আইন মন্ত্রণালয় থেকে এ কাজটা করা হয়েছে। বিচারকালীন তারা বলছেন, ফাঁসি চাই। বিচার সুষ্ঠু হোক তারা তা চায়নি, ন্যায়বিচার তারা চায়নি। যারা বিচার চলাকালীন ফাঁসি চেয়েছেন তারা তাদের এই দাবির মাধ্যমে বিচারপতিদের প্রভাবান্বিত করার চেষ্টা করেছেন। রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, এ সব আচরণ যারা করেছেন, আইন অনুসারে তারা আদালত অবমাননা করেছেন। কিন্তু আজ একটি সঠিক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে কেন এমন আচরণ করা হল জনগণ তা জানতে চায়। পত্রিকায় বলা হয়েছে, রায়টা মন্ত্রণালয় থেকে টাইপ হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল থেকে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো কিছু বলা হয়নি। সরকারও এ বিষয়ে কিছু বলেনি। আমার প্রশ্ন, আসলে রায়টা কে লিখেছেন। ওই আইন মন্ত্রণালয়ের কম্পিউটারের ভেতরে রায়টা গেল কি করে, ঢুকল কি করে? জাতি জানতে চায় আপনাদের কাছ থেকে, আসলে এ রায়টা কে লিখেছে? ট্রাইব্যুনালকে অনুরোধ করব, যদি আপনারা সেটা না বলেন, তাহলে এই দোটানার জাজমেন্টের ক্রেডিবিলিটি নিয়ে সমগ্র বিশ্বে যেমন প্রশ্ন দেখা দেবে তেমনি বাংলাদেশের মানুষের কাছেও প্রশ্ন দেখা দেবে।

সিনিয়রা আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, খন্দকার মাহবুব হোসেন যে কথা বলেছেন তা সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে দেয়া অধিকারের ভিত্তিতে বলেছেন। দুঃখজনক হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। যারা এই কাজটা করছেন, তাদের আমরা বলব, আপনারা সংবিধান পড়–ন এবং আপনারা বার এবং বেঞ্চের মধ্যে শত্র“তা করবেন না। আমরা চাই বার এবং বেঞ্চের মধ্যে ভালো সম্পর্ক থাকুক। ইতিহাসে যখনই কোনো সংকট দেখা দিয়েছে তখই সুপ্রিমকোর্ট বার সে সংকট সমাধানে নেতৃত্ব দিয়েছে। আমরা এখন সেই দায়িত্বই পালন করছি। যারা তাদের অবস্থানকে ব্যবহার করে বারের অত্যন্ত সিনিয়র আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করার পাঁয়তারা করছেন, এটা কারও জন্যই কোনো কল্যাণ বহন করে আনবে না।

সুপ্রিমকোর্ট বারের সভাপতি এজে মোহাম্মদ আলী বলেন, খন্দকার মাহবুব হোসেনের মন্তব্যকে নিয়ে যারা বিভ্রান্তি সৃষ্টির প্রয়াস চালাচ্ছেন, তারা বিচার বিভাগের সুহৃদ হতে পারেন না। তারা বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছেন। যারা এর পেছনে ইন্ধন দিচ্ছেন তারা যেন এটা থেকে বিরত থাকেন।

বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিমকোর্ট বারের পর পর দুবার নির্বাচিত সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছিলেন, বিচারকার্য স্বচ্ছ করতে হবে। তিনি প্রশ্ন করেছিলেন রায় ঘোষণার আগে রায় কিভাবে বাজারে চলে এল, ইন্টারনেটে চলে এল। এই প্রশ্ন আজ সারা জাতির। কিভাবে এই রায় আগে প্রচারিত হল। পত্রিকায় এসেছে, বেলজিয়াম থেকে নাকি ইন্টারনেটে প্রকাশ হয়েছে এ রায়। মে মাসে আইন মন্ত্রণালয়ের কম্পিউটারে কিভাবে এসেছে? তাই বলতে চাই, খন্দকার মাহবুব হোসেনের যে বক্তব্য সে বক্তব্য সব আইনজীবীর। তিনি আরও বলেন, আমরা আইনের শাসনে বিশ্বাস করি। স্বচ্ছ বিচার প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস করি। এই বিচার প্রক্রিয়া সম্বন্ধে আইনজীবী হিসেবে এবং আইনজীবী নেতা হিসেবে খন্দকার মাহবুব হোসেন বক্তব্য রেখেছেন। এই মন্তব্যকে তারা এখন রাজনৈতিকভাবে ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করছে। অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, কীভাবে সরকারের মন্ত্রীরা বলেন ট্রাইব্যুনালে যাদের বিচার হচ্ছে তাদের ফাঁসি হবে? আইন প্রতিমন্ত্রী কীভাবে বললো যে, ওদের ফাঁসি হবে? প্রধানমন্ত্রী কিভাবে বলেন ওদের রায় কার্যকর হবে, ফাঁসি হবে? গণজাগরণ মঞ্চের ডা. ইমরান এইচ সরকার কেন অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে এল?

তিনি আরও বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস সম্পূর্ণ কলুষিত করেছে বিচার প্রক্রিয়াকে। শুধু তাই নয়, আগের দিন গণজাগরণ মঞ্চ শাহবাগ থেকে বলল- সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি চাই। আগে তারা বলল কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই, গোলাম আযমের ফাঁসি চাই, পরের দিন ট্রাইব্যুনাল থেকে ফাঁসি দেয়। মাহবুব উদ্দিন বলেন, বিচারপতি নাসিম (নিজামুল হক নাসিম) স্কাইপিতে কথা বলেছেন রায়ের আগে। তারপরও তিনি কিভাবে বিচারকের আসনে বসেন- এ প্রশ্ন রাখেন তিনি প্রধান বিচারপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেলের প্রতি। সব বিচার ব্যবস্থাকে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে স্কাইপ কেলেংকারির মাধ্যমে। বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী এমইউ আহমেদকে হত্যার সঙ্গে জড়িত। তার কারণেই এমইউ আহমেদকে হত্যা করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে তাকে প্রমোশন দেয়া হয়েছে। এ অসহিষ্ণু অবস্থা সুপ্রিমকোর্টে বা বাংলাদেশের আইননাঙ্গনে চলবে না। যদি ট্রাইব্যুনালও কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কোনো দরখাস্ত গ্রহণ করেন তাহলে বার কাউন্সিল ও সুপ্রিমকোর্ট থেকে আমরা সিদ্ধান্ত দিতে বাধ্য হব- সব আইনজীবী যেন এই ট্রাইব্যুনাল বর্জন করে। পরে আইনজীবীদের বক্তব্যের সর্বসম্মতিক্রমে সেখানে একটি রেজুলেশন পাস হয়।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সংসদ সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ফাঁসির আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এই রায়ের পর জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, এই বিচারটি প্রহসনের বিচার। এই বিচার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বিচার। ইনশাআল্লাহ যদি জাতীয়তাবাদী শক্তি মতায় আসে, তাহলে সত্যিকার অর্থে যারা যুদ্ধাপরাধী তাদের বিচার হবে এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে নির্দোষ ব্যক্তিদের যে বিচার করা হয়েছে, কাল্পনিক গল্প দিয়ে যে মামলা তৈরি করা হয়েছে, অবশ্যই সেটা চলে যাবে। এবং যারা এই প্রহসনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল, ইনশাআল্লাহ বাংলার মাটিতে তাদেরও বিচার হবে। তার এই বক্তব্যে বিরুদ্ধে বুধবার ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ জানিয়েছে রাষ্ট্রপ। রাষ্ট্রপরে আবেদনের পরিপ্রেেিত ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ লিখিত আকারে দায়েরের কথা জানান। রাষ্ট্রপরে এমন উদ্যোগের প্রতিবাদেই বুধবার দুপুরে সুপ্রিমকোর্ট বার ভবনে এক বিশেষ সভার আয়োজন করে বার সমিতি।