শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > রাজশাহীর অর্ধ শতাধিক মৌসুমি কারখানায় তৈরি হচ্ছে ভেজাল সেমাই

রাজশাহীর অর্ধ শতাধিক মৌসুমি কারখানায় তৈরি হচ্ছে ভেজাল সেমাই

শেয়ার করুন

রাজশাহী প্রতিনিধি ॥ ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে রাজশাহী নগরী এবং এর আশপাশের এলাকায় গড়ে উঠেছে ভেজাল ও নিম্নমানের সেমাই তৈরির অর্ধশতাধিক কারখানা। কারখানাগুলো মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) নাকের ডগাই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাত-দিন সমান তালে চালিয়ে যাচ্ছে উত্পাদন। তবে বিএসটিআই বলছে, মানহীন সেমাই কারখানাগুলোতে পর্যায়ক্রমে অভিযান চালানো হচ্ছে। নেয়া হচ্ছে আইনগত ব্যবস্থা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিএসটিআইএ’র অনুমোদন না নিয়েই নগরীর ও এর আশপাশের এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে সেমাই তৈরির কারখানা। একশ্রেণীর অসাধু মৌসুমি ব্যবসায়ী ওইসব কারখানা গড়ে তুলেছে। সেগুলোতে উত্পাদিত হচ্ছে লাচ্ছা ও সেমাই (রোলেক্স)। রোজার শুরু থেকে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠে অবৈধ এসব কারখানা। প্রতি বছরের মতো এবারও এসব কারখানায় অবাধে তৈরি হচ্ছে ভেজাল ও নিম্নমানের সেমাই। প্রতিদিন এসব কারখানায় অন্তত আড়াই থেকে তিন হাজার খাঁচি বা টুকরি সেমাই তৈরি হচ্ছে। এরই মধ্যে গত শনিবার বিএসটিআই’র ভ্রাম্যমাণ আদালতে নগরীর হাজরাপুকুর এলাকা শাহি ফুড ইন্ডাস্ট্রিজকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ভেজাল ও দূষিত খাবার তৈরির দায়ে প্রতিষ্ঠানটিকে এ দণ্ড দেয়া হয়। এ সময় জব্দ করা ৩০০ প্যাকেট ভেজাল সেমাই আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। আদালতের বিচারক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফ আহমেদ রাসেল বিএসটিআই অধ্যাদেশ আইনের ৩১-এ ধারায় এই আদেশ দেন।
ওই সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফ আহমেদ জানান, নগরীর রেলস্টেশনের পেছনে হাজরা পুকুর এলাকায় অবস্থিত শাহী ফুড ইন্ডাস্ট্রিজে অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে বিষাক্ত রাসায়নিক রং মেশানো খোলা, ধুলাবালুযুক্ত লাচ্ছা জব্দ করা হয়। ভেজাল ও দূষণযুক্ত পরিবেশে খাবার তৈরির দায়ে ওই কারখানাকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা ও ৩০০ প্যাকেট ভেজাল সেমাই ধ্বংস করা হয়েছে বলেও তিনি জানান। এ আগেও নগরীর বেশ কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। সেগুলোতেও করা হয় জরিমানা।
এদিকে রাজশাহী বিসিকসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এবার বিসিকের বিভিন্ন কারখানার ভেতরে এবং নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গোপনে গড়ে উঠেছে অন্তত ৫০টির মতো অস্থায়ী সেমাই কারখানা। এছাড়া দিনার, বিশাল, বনফুল, বেলিফুল, রুচিতা, পপুলার, মিষ্টিবাড়িসহ ১০ থেকে ১৫টি স্থায়ী কারখানা রয়েছে।
ঈদ উপলে এসব কারখানা প্রায় ১৫ দিন ধরেই সেমাই উত্পাদন করছে। অস্থায়ী কারখানাগুলোতে গড়ে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৮০ খাঁচি (প্রতি খাঁচিতে ১৮ কেজি) সেমাই উত্পাদিত হচ্ছে। অন্যদিকে স্থায়ী কারখানাগুলোতে উত্পাদিত হচ্ছে গড়ে প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ খাঁচি সেমাই।
এসব কারখানায় উত্পাদিত লাচ্ছা ও সেমাই রাতের আঁধারেই চলে যাচ্ছে খুচরা ও পাইকারি দোকানগুলোতে। সেখানে প্রতি খাঁচি লাচ্ছা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪শ’ টাকা থেকে ১ হাজার ৫শ’ টাকায়। আর ৩৫ কেজি ওজনের প্রতি খাঁচি সেমাই মিলছে প্রায় ১ হাজার ৮শ’ টাকায়।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অস্থায়ী কারখানাগুলোতে খুব গোপনে সেমাই তৈরি করা হচ্ছে। বিসিক এলাকায় গড়ে ওঠা সবক’টি কারখানার েেত্রই স্টিল, প্লাস্টিক, লোহাসহ বিভিন্ন কারাখানার দুই-একটি রুম ভাড়া করে অথবা কারখানা মালিক নিজেই অস্থায়ী সেমাই কারখানা গড়ে তুলেছেন। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে উত্পাদিত এসব সেমাইয়ে মেশানো হচ্ছে নিম্নমানের উপাদান ও তিকারক রং।
এদিকে বিএসটিআই আঞ্চলিক অফিসের উপ-পরিচালক রেজাউল করিম সরকার জানান, রোজা শুরুর আগে থেকেই নগরীতে প্রায় প্রতিদিন ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করছে বিএসটিআই। এর মধ্যে গত ১ থেকে গত ২১ জুলাই পর্যন্ত সাতটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এতে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে মোট ২ লাখ ১৪ হাজার ৯শ’ টাকা জরিমানা আদায় ও ১৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, বিএসটিআই’র মান নিয়ন্ত্রিত পণ্যের তালিকায় চিকন সেমাই নেই। ফলে স্বপ্রণোদিত হয়ে ভেজাল ও নিম্নমানের সেমাই প্রস্তুতকারী কারখানাগুলোতে পর্যায়ক্রমে অভিযান চালানো হচ্ছে। পুরো রোজার মাসই এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।