রবিবার , ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > রাজনৈতিক সংকটের জন্য দু’দলই দায়ী

রাজনৈতিক সংকটের জন্য দু’দলই দায়ী

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির উচিত তাদের ত্রুটিপূর্ণ রাজনৈতিক ভূমিকা সমালোচনার দৃষ্টিতে পুনর্নিরীক্ষণ করা। তাদের রাজনৈতিক ভূমিকার কারণেই সৃষ্টি হয়েছে চলমান সংকট। হতাশা নেমে এসেছে দলগুলোর তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীদের মধ্যে। দল দুটির মধ্যে যখন বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে তখন এমন একটি পরিস্থিতি তাদের ঠেলে দিয়েছে কিনারায়। ‘চেইন অব কমান্ড’ ইতিমধ্যে ভেঙে গেছে। এর ফলে আর্থিক স্বার্থ আর স্থানীয়ভাবে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে আন্তঃদলীয় দ্বন্দ্ব। এসব দ্বন্দ্বের ফলে শাসক দলের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বীদের হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে।
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে, ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র এবং যুব ক্যাডাররা মরিয়া হয়ে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে। এর সূত্র ধরে নিহত হয়েছে তাদের নিজেদেরই সহকর্মীরা। ছাত্রলীগ আর যুবলীগ তাদের কর্মকাণ্ড দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। তারা টেন্ডারের কাগজপত্র ছিনিয়ে নিচ্ছে। চাঁদাবাজি করছে। এমনকি স্কুলও বাদ যাচ্ছে না চাঁদাবাজি থেকে। তাদের অ-রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে ক্ষমতাসীন দল ও সরকার অত্যন্ত বিব্রত। বন্দুকযুদ্ধ আর ক্রসফায়ারের ঘটনার পর শাসক দলের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ক্রসফায়ার নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিভিন্ন রকম অভিমত প্রকাশ করছেন। একদিকে যোগাযোগ মন্ত্রী বলেছেন, ‘অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে’। এ মন্তব্যে, বিপথগামী ছাত্রলীগ ক্যাডারদের ক্রসফায়ারে হত্যা নিয়ে তার সমর্থনের ইঙ্গিত মেলে। অপরদিকে, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন কোন ক্রসফায়ার হওয়া উচিত না।
প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ এমপি ফজলে নুর তাপস বলেছেন, লালবাগে ছাত্রনেতা আরজুকে ক্রসফায়ারে হত্যা করার ঘটনা ছিল পরিকল্পিত। ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দলের নেতাদের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরোধিতা করেছেন। এদিকে, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের ক্যাডাররা আতঙ্কে চলে ফিরে বেড়াচ্ছেন। কেননা, তাদের কিছু সহকর্মী হয় দুষ্কৃতকারী, নয়তো আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার হাতে হত্যার শিকার হয়েছে। এসব ঘটনা ক্ষমতাসীন দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে ভয়-ভীতি সৃষ্টি করেছে।
এদিকে, সরকার রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে শক্ত হাতে প্রভাব বিস্তার করছে। বিশেষ করে গণমাধ্যমে। প্রবীর শিকদারের গ্রেপ্তারের পর আইসিটি আইনের ৫৭ ধারার অপব্যবহার নিয়ে প্রতিবাদ এসেছে। প্রবীর শিকদার জামিন পেয়েছেন কিন্তু ক্ষমতাধর এক মন্ত্রীর নির্দেশে মামলা বহাল রয়েছে। একদিকে প্রবীর শিকদারকে জামিনে মুক্ত করা হয়েছে অপরদিকে, ফেডারেল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্টস-এর প্রেসিডেন্ট শওকত মাহমুদকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। সাংবাদিক সম্প্রদায়ের দায়িত্বরত এক নেতাকে গ্রেপ্তার করার বিশেষ এক ঘটনা এটি। ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত ইউনিয়ন সরকারের এমন স্বেচ্ছাচারী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ পর্যন্ত করেনি। এটা দুঃখজনক। এটা একটা বাজে উদাহরণ হিসেবে থাকবে। আর ভবিষ্যতে অনেক সাংবাদিক এমন ঘটনার শিকার হতে পারেন।
এবারে বিরোধী দলের প্রসঙ্গে আসা যাক। সরকারের দ্বারা দমন-পীড়ন, সাধারণ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পালনের সুযোগে অস্বীকৃতি আর দলের সিনিয়র নেতা ও সুযোগসন্ধানীদের নিষ্ক্রিয়তার কারণে নেতাকর্মীদের হতাশার কারণে বিএনপি এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। ২০১৪ সালের ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন বর্জনের পর দলটি নতুন নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করানোর মতো কার্যকর কোন আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে নি। ৫ই জানুয়ারির সংবিধান রক্ষার নির্বাচনের পর ক্ষমতাসীন দল আরেকটি নির্বাচন ডাকার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে গেছে। ওই নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পরপরই একাদশ সংসদীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য সংলাপ শুরু হবে। নন-ইনক্লুসিভ ওই নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে সরকার পরিচালনা করে যাচ্ছে। আর নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্য ক্ষমতাসীন দল যে সংলাপ শুরু করবে এমন কোন ইঙ্গিত এখনও মেলেনি। একই সমস্যা আর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বিদ্যমান রয়েছে। সরকারকে নিজেদের কথা শুনতে বাধ্য করার জন্য বিএনপির দুটি চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। আন্দোলনগুলো সুপরিকল্পিত ছিল না। সিনিয়র নেতারা দলপ্রধানের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয় দলই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য দলের প্রধানের ওপর নির্ভরশীল। বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী অঙ্গ-স্থায়ী কমিটি প্রায় অকার্যকর। এমতাবস্থায় নিজেদের পুনরায় গুছিয়ে নিতে দলটিকে বেগ পেতে হচ্ছে। আর এ চেষ্টাও ক্ষমতাসীন দলের চাপে ভেস্তে যাচ্ছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের কারাগারে পাঠিয়ে, অসংখ্য মামলা দিয়ে বিএনপির প্রধান শক্তিকে হয়রানি করার মাধ্যমে সরকার চাপ সৃষ্টি করছে।
এটা অনেকাংশে সত্যি যে, দুই দলপ্রধানের কর্তৃত্বপরায়ণ ভূমিকার কারণে এখন দলদুটির মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। এটা সার্বিক সুশাসন প্রক্রিয়ার ওপর প্রভাব ফেলেছে। এর ফলে সৃষ্টি হয়েছে, আইনকানুন লঙ্ঘন এবং দল ও প্রশাসনে ‘চেইন অব কমান্ড’ ভঙ্গের প্রবণতা। দু’ দলের নেতারা যদি তাদের মতপার্থক্য কমিয়ে আনতে সম্মত না হন তাহলে দেশকে অব্যাহতভাবে দুর্দশা ভোগ করতে হবে। গণতন্ত্র চলে যাবে কর্তৃত্বপরায়ণতার গ্রাসে। এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে, নিজ নিজ দলের মধ্যে গণতন্ত্র চর্চায় বড় দুই দলের ব্যর্থতা দেশকে একদলীয় গণতন্ত্রের মধ্যে থাকতে বাধ্য করেছে। যেখানে কোন বিরোধী দল নেই। মানবজমিন