শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক কাল

রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক কাল

শেয়ার করুন

অনলাইন ডেস্ক ॥
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর ‘ঐতিহাসিক’ হবে উল্লেখ করে দেশটির পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্কর জানিয়েছেন সফরকালে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, সংসদের বিরোধী দলের নেতাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন মোদি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গেও তার বৈঠক হবে নিশ্চিত করেছেন পররাষ্ট্র সচিব জয়শঙ্কর। আজ থেকে শুরু হওয়া হাইপ্রোফাইল এই সফর নিয়ে গতকাল বিকালে নয়া দিল্লিতে সংবাদ সম্মেলন করেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব। ব্রিফিংয়ের তিনি মোদির দুদিনের রাষ্ট্রীয় সফরের কর্মসূচির বিস্তারিত তুলে ধরেন। শুরুতে জয়শঙ্কর সাংবাদিকদের বলেন, যারা আমার আগের ব্রিফিংয়ে যোগ দিয়েছেন তারা জানেন যে, আমি সাধারণত বিশেষণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকি। কিন্তু এক্ষেত্রে আমি বলতে চাই, আমি এটাকে ঐতিহাসিক এক সফর হিসেবে ব্যাখ্যা করবো। এর কারণ হিসেবে তিনি স্থল সীমান্ত চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এ সফরের মূল বিষয়বস্তু হলো, বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের স্থল সীমান্ত চুক্তিটি চূড়ান্ত করা। আপনারা জানেন এটা আমাদের সব থেকে দীর্ঘ স্থল সীমান্ত। প্রধানমন্ত্রীর এ সফরকালে আমরা চুক্তি অনুমোদনের বিষয়গুলো বিনিয়ম করবো। যে অর্জন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি বাংলাদেশে যাচ্ছেন, সেটা সত্যিকার অর্থে সাধারণ কোন অর্জন নয়। এর আগে সমুদ্র সীমা সমাধা হয়েছে এবং এবারে স্থল সীমান্ত নিয়ে সমঝোতার মধ্য দিয়ে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে সীমানা ইস্যু পূর্ণাঙ্গভাবে সমাধা করেছি। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। আর এর মধ্য দিয়ে যে আত্মবিশ্বাস এবং সুসম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে তার গুরুত্ব বলে বোঝানো যাবে না। এ সফর দুদেশের সম্পর্ক দৃঢ় ও গভীর করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। স্থল সীমান্ত চুক্তিটি সীমান্তে অবৈধ কর্মকাণ্ড মোকাবিলায় এটা অনেক বেশি কার্যকর হবে। কাজেই সীমান্তে স্থীতিশিলতা ও নিরাপত্তা ইস্যুগুলোতে দুদেশই উপকৃত হবে। বিশেষ করে ছিটমহল সমস্যাগুলো সমাধা হবে। অতীতে ছিটমহল এলাকাগুলো আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর আওতার বাইরে ছিল। এখন স্পষ্টভাবে চিহ্নিত সীমানার ফলে সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার হবে। সীমান্ত নিরাপদ হলে উভয় দেশের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। স্থল সীমান্ত চুক্তি ছাড়াও এ সফরে দুদেশ টেলিকম ও ইন্টারনেট বিষয়ক কিছু সমঝোতায় উপনীত হবে।
বাংলাদেশের সঙ্গে উন্নয়নমূলক সহযোগিতা নিয়ে জয়শঙ্কর বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ১৫ টি প্রকল্প চালু রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৭ টি সমাপ্ত হয়েছে। ৮ টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন । আর সার্বিক প্রতিশ্রুতির আনুমানিক অঙ্ক হলো ৮৬০ মিলিয়ন ডলার। এগুলোর বেশির ভাগই রেলওয়ে খাতে। এ সফরে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতামূলক প্রকল্পগুলো অন্যান্যা খাতে বিস্তৃত করার চেষ্টা করবো। এর মধ্যে রেল খাতসহ, বিদ্যুৎ, সড়ক, বন্দর, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে আমরা সহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ড বিস্তৃত করার লক্ষ্য থাকবে। বিস্তৃত পরিসরে উন্নয়নমূলক সহযোগিতার একটি পরিসর প্রতিষ্ঠিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এছাড়া পিপল টু পিপল যোগাযোগ বৃদ্ধি, বাংলাদেশে ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠার বিষয়গুলো মোদির এ সফরে গুরুত্ব পাবে বলে তিনি জানান। ব্রিফিংয়ের শেষে জয়শঙ্কর বলেন, বাংলাদেশ আমাদের জন্য ব্যতিক্রমী এক প্রতিবেশী। দায়িত্বশীল এক প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে ভারত বাংলাদেশকে প্রশংসা করে বলে মন্তব্য করেন তিনি। বাংলাদেশ সফরে মোদির কর্মসূচি নিয়ে জয়শঙ্কর বলেন, বাংলাদেশ সময় সকালে ঢাকা পৌঁছানোর পর জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাবেন মোদি। এরপর তিনি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে যাবেন। মধ্যাহ্ন ভোজের পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী দুটি গুরুত্বপূর্ণ বাস সেবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। গুরুত্বপূর্ণ এ দুটি বাস সেবা হলো কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা এবং ঢাকা-গৌহাটি-শিলং। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে স্থল সীমান্ত চুক্তি সংক্রান্ত অনুমোদনের বিষয়বস্তু বিনিময় হবে। এরপর উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। কিছু চুক্তিবিনিময় হবে। বাংলাদেশে আমরা কয়েকটি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছি সেগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। এরপর উভয় প্রধানমন্ত্রী একটি প্রেস বিবৃতি দেবেন। দিনশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আতিথেয়তায় নৈশভোজে অংশ নেবেন মোদি। সফরের দ্বিতীয় দিনে মোদি ঢাকেশ্বরী মন্দির সফর করবেন। সেখান থেকে তিনি রামকৃষ্ণ মিশন সফর করবেন। এরপর ভারতে নতুন চ্যান্সরি কমপ্লেক্সে যাবেন। এরপর বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠক এবং মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেবেন। এরপর বাংলাদেশের গুরুত্বর্পূর্ণ রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এর মধ্যে রয়েছেন বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদ, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, শীর্ষস্থানীয় চেম্বার অব কমার্স ও শিল্প নেতৃবৃন্দ এবং বামপন্থি দলের নেতৃবৃন্দ। সবশেষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বক্তব্য দেবেন। এরপর দিল্লি ফিরবেন তিনি।