রবিবার , ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > রাজধানীর স্কাউট ভবন থেকে ডেসটিনির অফিস উচ্ছেদ

রাজধানীর স্কাউট ভবন থেকে ডেসটিনির অফিস উচ্ছেদ

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ টাকার কমতি নেই। কিন্তু হিসাব জব্দের নামে সেই টাকাগুলো জব্দ সরকারের হাতে। টাকা ছাড়া অন্য সম্পদগুলোও রয়েছে পুলিশের হেফাজতে। তাই টাকার লেনদেন যেমন নেই, তেমনি নেই ব্যবসা-বাণিজ্যও। এ পরিস্থিতিতে সারা দেশে ডেসটিনি গ্রুপের ভাড়া করা অফিসগুলোর বকেয়া ভাড়ার পাহাড় জমছে। ভবনের মালিকরা ভাড়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন আর দেশব্যাপী ৪৫ লাখ গ্রাহকের নেটওয়ার্ক সচল রাখতে অসহায়ের মতো সময় নিচ্ছেন ডেসটিনি গ্রুপের কর্তারা।

রাজধানীর বিজয়নগরে স্কাউট ভবনে তিনটি ফ্লোরের প্রায় সোয়া কোটি টাকা বকেয়া থাকায় ঢাকার জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি দল সেই অফিস ছাড়তে বাধ্য করেছে ডেসটিনিকে। এতে হাতছাড়া হচ্ছে বহু গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ও গ্রাহকের দলিল।

ডেসটিনি গ্রুপের কর্মকর্তারা জানান, ডেসটিনি গ্রুপ প্রতিষ্ঠার পরপরই স্কাউট ভবনের ৯, ১১ ও ১৪ তলার ফ্লোর তিনটি ভাড়া নিয়ে কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। ‘প্রতারণা’ ও ‘অর্থপাচার’ অভিযোগে গ্রুপটির সব ব্যাংক হিসাব জব্দ হওয়ার পর থেকে গত এক বছর ওই তিনটি ফ্লোরের ভাড়া পরিশোধ করতে পারেনি ডেসটিনি। ফলে বকেয়া ভাড়ার পরিমাণ দাঁড়ায় এক কোটি ২০ লাখ টাকার মতো। মাস কয়েক আগে থেকে স্কাউট ভবন কর্তৃপক্ষ হয় ভাড়া, না হয় অন্তত দুটি ফ্লোর ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করে ডেসটিনিকে। পরে গত রমজান মাসে ঢাকার জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে তিনটি ফ্লোরই খালি করে দেওয়ার জন্য ডেসটিনিকে নোটিশ দেয়। ডেসটিনি কর্তৃপক্ষ আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করে। ওই আবেদনের কোনো জবাব দেয়নি জেলা প্রশাসক।

ডেসটিনি গ্রুপের কম্পানি সচিব মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘গত বুধবার বেলা ১১টার দিকে হঠাৎ করেই জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ডেসটিনির অফিস উচ্ছেদ করতে আসে। এ সময় ৪৮ ঘণ্টা সময় চাওয়া হয়। ডেসটিনি গ্রুপের পক্ষে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির চেয়ারম্যান আশরাফুল আমিন লিখিতভাবে অঙ্গীকার করেন যে ৪৮ ঘণ্টা সময়ের মধ্যেই তাঁরা ফ্লোর তিনটি খালি করে দেবেন। কিন্তু সরকারের লোকজন রাত ১টার সময় হঠাৎ করেই উচ্ছেদ শুরু করে। গুরুত্বপূর্ণ সব নথিপত্রসহ অফিস ডেকোরেশন, ফার্নিচার নিচতলার খোলা জায়গায় ফেলে রাখে। সকাল সাড়ে ৮টার সময় এসে দেখতে পাই, ফেলে রাখা নথিপত্রসহ ফার্নিচারগুলো যে যেভাবে পারছে নিয়ে যাচ্ছে। যারা নিয়ে গেছে তারা নাকি সেগুলো বিক্রি করে দিয়েছে। অল্প কিছু কাগজপত্র এখন আছে। সেগুলোই আমি বস্তায় ভরে অন্য অফিসে নেওয়ার চেষ্টা করছি।’

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে স্কাউট ভবনে গিয়ে দেখা যায়, নিচে মাটিতে পড়ে আছে গুরুত্বপূর্ণ নানা নথি। হ-য-ব-র-ল কাগজগুলো বস্তায় ভরে রিকশায় নিচ্ছেন ডেসটিনির কিছু কর্মচারী। শত শত গ্রাহকের আইডি কার্ডও পড়ে আছে মাটি ও স্যাঁতসেঁতে পানিতে।

‘আমার নিজের ব্যবসার নথিপত্রও আর নেই। শুধু আমার রুমে যেসব নথিপত্র ছিল, হাতে-পায়ে ধরে সেগুলো রক্ষা করতে পেরেছি। আরেক রুমে ট্রি প্লান্টেশনের কিছু কাগজপত্র ছিল, সেগুলো আছে।’ বললেন মিজানুর রহমান।

ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির চেয়ারম্যান আশরাফুল আমিন বলেন, ‘স্কাউট ভবনের অফিস হঠাৎ করেই তছনছ করার কারণে আমাদের প্রায় তিন কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। সারা দেশে ১২০টি অফিস উচ্ছেদে আমাদের মোট ক্ষতি ১০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘২০১২ সালের মে মাস থেকে ডেসটিনি গ্রুপের ব্যাংক হিসাবগুলো জব্দ করে রাখা হয়েছে। ফলে টাকার ঘাটতি না থাকলেও ভাড়া পরিশোধের সুযোগ নেই আমাদের। গতকাল ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে স্কাউট ভবনের অফিস উচ্ছেদ করতে এলে আমি তাদের অনুরোধ করে বলি, আমাদের ৪৮ ঘণ্টা সময় দেন। এখানে ছয় লাখ গ্রাহকের দালিলিক নথিপত্র রয়েছে। আমি লিখিতভাবে তাদের সঙ্গে অঙ্গীকার করি যে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই সব মালামাল আমরা সরিয়ে নেব। কিন্তু লিখিত নেওয়ার পর আমাদের সে সময়ও দেওয়া হলো না।’

ডেসটিনি গ্রুপের এ অবস্থার জন্য সরকারের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করে আশরাফুল আমিন বলেন, ‘দেশের আইনে ডেসটিনি অন্যায় করে থাকলে তার শাস্তি হোক। আমরা আইনিভাবে তা মোকাবিলা করব। একজন রফিকুল আমীন মানেই তো ডেসটিনি গ্রুপ নয়। এ গ্রুপের সঙ্গে ৪৫ লাখ গ্রাহক জড়িত। কোনো গ্রাহক এখনো ডেসটিনি গ্রুপের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করেনি, অর্থপাচারের অভিযোগও করেনি। তা সত্ত্বেও সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করে রাখাটা মোটেই কাম্য নয়।’ তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা করার পর ১৮ থেকে ২৪ দিন পর্যন্ত রিমান্ডে নিয়েছে, আমাদের কাছে যেসব কাগজপত্র চেয়েছে, তার সবই দিয়েছি। তবু ৯ মাসে তারা আদালতে চার্জশিট দিতে পারেনি। আর চার্জশিট না দেওয়ার কারণে আদালত ও সরকার- কেউই কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। দেড় বছর ধরে গ্রুপটির ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ায় প্রায় এক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে ডেসটিনির গ্রাহকদের।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকার জেলা প্রশাসক শেখ ইউসুফ হারুন জানান, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই ডেসটিনির অফিস উচ্ছেদ করা হয়েছে। ডেসটিনির ব্যবহৃত ফ্লোর তিনটি খালি করে স্কাউট কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।