শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > জাতীয় > রাজধানীর ফুটপাতে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা।

রাজধানীর ফুটপাতে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা।

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
রাজধানীর ফুটপাতে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। ইতিমধ্যে রোজা অর্ধেক শেষ হয়ে গেছে। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে ঈদের কেনাকাটা। ঈদ বাজারের এই কেনাকাটায় সবচেয়ে এগিয়ে আছে ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা দম ফেলার সুযোগ পাচ্ছেন না। ব্যবসায়ীদের দেখা গেছে কথা বলারও সময় পাচ্ছেন না তারা। কোনো কোনো ফুটপাতে কথার ঝামেলা এড়াতে একদামে বেচাকেনা করতেও দেখা গেছে। ভিড়ে কোথাও কোথাও হাঁটতেও কষ্ট হচ্ছে সাধারণ মানুষের। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে জটলাও। এর একটি কারণও আছে বটে। কেননা, ফুটপাতেই বসে রাজধানীর অন্যতম বড় ঈদের বাজার। যা বিত্তবানদের জন্য না হলেও নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যদের জন্য অনেকটাই আশীর্বাদ স্বরূপ।

নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরা সাধ্যের মধ্যে সেরাটা খুঁজে নেন এই ফুটপাতের দোকান থেকেই। আর তাতেই পরিবারের চাহিদাও মেটান অনায়াসেই। রমজানের প্রথম সপ্তাহে তেমন জমজমাট ছিল না এই ফুটপাতের ব্যবসা। এরই মধ্যে পাইকারি বাজার থেকে পণ্য কেনার পর পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন ফুটপাতে। আর ১০ রমজানের পর বেচাকেনায় বেশ জমজমাট বলে মানবকণ্ঠকে জানিয়েছেন ফুটপাতের একাধিক ব্যবসায়ী। জাঁকজমকপূর্ণ আলো ঝলমলে মার্কেটে পোশাকের দাম আকাশচুম্বি হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষের একমাত্র ভরসা এই ফুটপাত।

রাজধানীর প্রায় অর্ধশত স্থানে চলছে ফুটপাতে ঈদের কেনাবেচা। এসবের মধ্যে জমে উঠেছে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর-পশ্চিম গেটের সামনে, দৈনিক বাংলা মোড়, মতিঝিল জনতা ব্যাংকের সামনে, মতিঝিল শাপলা চত্বরের চারদিকের ফুটপাত, ফকিরাপুল এলাকা, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ হকার্স সমিতি মার্কেট, গুলিস্তান মোড়ের চারপাশের ফুটপাত, নয়াপল্টনের ভিআইপি সড়কের ফুটপাত, গোলাপ শাহ মাজার সংলগ্ন ফুটপাত, বঙ্গবাজার, নিউমার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনীচকের ফুটপাতেও জমে উঠেছে ঈদের বেচাকেনা।

নামিদামি শপিংমলে কেনাকাটার ইচ্ছা থাকলেও সামর্থ্য না থাকায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ফুটপাতের দোকানে ছুটছেন নগরীর অনেক মানুষ। নিজেদের আদরের ছেলেমেয়ে বা প্রিয়জনকে ঈদের পোশাকসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য পণ্য কিনে দেন এই ফুটপাত থেকে। কী নেই এই ফুটপাতে? শার্ট, প্যান্ট, জুতা, সালোয়ার, কামিজ, রং-বেরঙের থ্রিপিস, গেঞ্জি, পাজামা-পাঞ্জাবি, কসমেটিকস, টুপি, আতর সবকিছুই রয়েছে ফুটপাতের দোকানে। দামও রয়েছে নাগালের মধ্যেই।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সব বয়সী নারী-পুরুষের জন্য রং-বেরঙের বিভিন্ন ডিজাইনের জামা-কাপড় পাওয়া যাচ্ছে ফুটপাতে। রাজধানীর ফুটপাতের বাজারে প্রতিনিয়তই ক্রেতারা আসছেন, পছন্দমতো জামা-কাপড় কিনছেন। কেউ কর্মস্থলে যাওয়ার সময় কেউবা ফেরার সময় পছন্দমতো নিজেদের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সারছেন।

ফুটপাতের বেচাকেনার খোঁজ নিতে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে যেতেই কানে ভেসে এলো ‘দেইখ্যা লন দুইশ’, বাইছ্যা লন দুইশ’, একদাম দুইশ’, যেটাই নেবেন দুইশ’। এ রকম শব্দ শুধু এখানেই নয়, পুরো রাজধানীজুড়েই। বায়তুল মোকাররমের সামনে ফুটপাতে পাঞ্জাবির ব্যবসা করেন আনোয়ার হোসেন। তিনি একদামে ১৫০ টাকায় বেচাকেনা করছেন। পাশেই কয়েকটি দোকানে গিয়ে দেখা যায়, তারাও এক দামেই ব্যবসা করছেন। যার যেটি পছন্দ হচ্ছে একদাম বলে দিচ্ছেন বিক্রেতারা। ক্রেতার পছন্দ ও সাধ্যের মধ্যে হলে প্যাকেট করছেন আর সাধ্যের মধ্যে না হলে অন্য দোকানে ছুটছেন। একদামের বিষয়ে ফুটপাতের ব্যবসায়ী মীর হোসেন মানবকণ্ঠকে জানান, ‘প্রতিদিন অনেক ক্রেতার সঙ্গে কথা বলি। রোজা রেখে বেশি কথা ভালো লাগে না, সীমিত লাভ রেখে মাল (পণ্য) ছেড়ে দিচ্ছি।’

অন্যদিকে বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকার পশ্চিম গেটের ফুটপাতের দোকানি সিহাব খান এ প্রতিবেদককে জানান, এবারের ঈদ সামনে রেখে সৌদি আরবের তৈরি বিভিন্ন আতর বেশি বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া দেশীয় শাহী দরবার ও রজনীগন্ধা আতরও বিক্রি হচ্ছে। বায়তুল মোকাররম এলাকাসহ রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে দেশি-বিদেশি জায়নামাজ, টুপি এবং কাঠ ও পাথরের তৈরি তসবি বিক্রি হতে দেখা গেছে।

রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভেতরের দোকানগুলোতে শুধু মানুষের ভিড়। মার্কেটের দোকানদাররা জানান, কেনাকাটা জমজমাট হয়ে উঠেছে ১০ রোজার পর থেকে। পাশাপাশি চলছে মার্কেটের বাইরে ফুটপাতের বেচাকেনা। নিউমার্কেটের ফুটপাত থেকে আদুরে মেয়ের জন্য গোলফ্রক কিনেছেন আসাদুল আলম। স্বনামধন্য না হলেও একটি প্রতিষ্ঠানে বেশ ভালো দায়িত্বেও আছেন তিনি। তবে ফুটপাতের কেনাকাটা নিয়ে বলেন, ঈদের জন্য যদি পুরো মাসের টাকা দিয়ে কেনাকাটা করি তবে পরের মাসে তো না খেয়ে থাকতে হবে। এ ছাড়া ঈদের আনন্দটাও তো কিছুটা রাখতে হবে। তাই আয়-ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য করছি।

একাধিক ফুটপাতের ব্যবসায়ী মানবকণ্ঠকে জানান, ঈদের সময় যতো কাছে আসবে এই বেচাকেনা মধ্য রাত ছাড়িয়ে যাবে। মার্কেট ভেদে ছেলেদের শার্ট বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকায়, জিন্স প্যান্ট ৩৫০ থেকে সাড়ে ৭০০ টাকায়, টি-শার্ট ২৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা, মেয়েদের থ্রিপিস ৪৫০ টাকা থেকে ১০০০-১২০০ টাকা, শাড়ি ৪৫০ থেকে ২০০০ হাজার টাকা, বাচ্চাদের থ্রি-কোয়ার্টার জিন্স প্যান্ট ৩০০ টাকা, গেঞ্জির সেট ২০০ থেকে ৫০০ টাকা, ফ্রক ও টপস ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা, ছেলে ও মেয়ে শিশুদের জন্য হাতাকাটা গেঞ্জি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা।

মতিঝিল এলাকার শার্ট বিক্রেতা হাসান মোল্লা জানান, বাণিজ্যিক এলাকা হওয়ায় এখানে সারাক্ষণই ভিড় লেগে থাকে। বিক্রিও ভালো। বিভিন্ন অফিসের বড় বড় কর্মকর্তারা এখান থেকে কেনেন।

রাজধানীর মৌচাক মার্কেটের ফুটপাতের ব্যবসার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখানে জমজমাট কসমেটিক্স পণ্য। নানা ধরনের নেইলপলিশ, লিপিস্টিক, কাজল, বিভিন্ন মাথার খোঁপা ও মাথার ক্লিপসহ হরেক রকমের কসমেটিক্স পণ্য সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। ক্রেতাও কম নয়। মানুষের ভিড়ে পা ফেলার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না এখানে। পরিবারের প্রয়োজনীয় পণ্যটি আগেভাগেই কিনে ফেলছেন সবাই। তবে এখানকার ফুটপাতের জামা বা জুতার ব্যবসায়ীরাও বসে নেই। তাদের বিকিকিনিও বেশ ভালো।

ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা গতকাল মানবকণ্ঠকে জানান, ঈদের তিন-চারদিন আগে গার্মেন্টসসহ প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা বেতন-বোনাস পাবেন। সেই সময় আরো ভিড় বাড়বে ফুটপাতের বাজারের দিকে।

ঈদ সামনে রেখে বসে নেই মৌসুমি হকাররাও। বিভিন্ন পণ্য নিয়ে ট্রাফিক সিগন্যালে থামা গাড়িগুলোর দিকে ছুটছেন একেকজন। কারো হাতে আতর কারো হাতে টুপি কারো হাতে নামাজ শিক্ষাসহ বিভিন্ন ধরনের বই, আছে রুমাল, তোয়ালে ইত্যাদি। যানজটে গাড়িতে বসে থাকা মানুষের কাছে নিয়ে যাচ্ছেন এই পণ্যগুলো ভাসমান হকাররা।

সূত্র: মানবকণ্ঠ