বুধবার , ১৩ই নভেম্বর, ২০২৪ , ২৮শে কার্তিক, ১৪৩১ , ১০ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > শীর্ষ খবর > রাজধানীতে নামছে ৩৯১টি আর্টিকুলেটেড বাস

রাজধানীতে নামছে ৩৯১টি আর্টিকুলেটেড বাস

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥

ঢাকা: রাজধানীতে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনা এবং নেটওয়ার্ক পুনর্গঠনের লক্ষ্যে ৩৯১টি আর্টিকুলেটেড (দুই বগির জোড়া লাগানো) বাস কিনতে যাচ্ছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)।

ঢাকায় আলাদা ডেডিকেটেড লেনে চলবে বাসগুলো। এয়ারপোর্ট-প্রগতি সরণি হয়ে সায়দাবাদ এবং কুড়িল-রাজউকের পূর্বাচল মডেল টাউনের দুই নং সেক্টর পর্যন্ত বাসগুলো চলবে। বৃহৎ আকৃতির বাসগুলোর চলাচলের সুবিধার জন্য এ রুটে থাকবে আলাদা লেন।

দুটি কোচ জোড়া দিয়ে বানানো এ বাসের দৈর্ঘ্য হবে ২২ মিটার, যাত্রী ধারণ ক্ষমতাও দ্বিগুণ। প্রায় দেড়শ জন যাত্রী একটি বাসে ভ্রমণ করতে পারবেন। বিশ্বের নানা দেশে বেন্ডি বাস, ট্যান্ডেম বাস, ব্যানান বাস, ক্যাটারপিলার বাস বা অ্যাকর্ডিয়ন বাস নামে পরিচিত আর্টিকুলেটেড বাস।

ডিটিসিএ সূত্র জানায়, স্মার্ট কার্ড ও ইলেকট্রনিকভাবে ভাড়া নিয়ন্ত্রণ করা হবে বাসে। ডেডিকেটেড রুট জুড়ে থাকবে ৮০টি স্টপেজ। বাসগুলো কয়েকটি নির্দিষ্ট কোম্পানির মাধ্যমে পরিচালিত হবে। এই রুটে তিন মিনিট পর পর মিলবে আর্টিকুলেটেড বাস।

‘ডেভলপমেন্ট অব কোর পাইলট বাস নেটওয়ার্ক করিডরস ইন ঢাকা সিটি’ প্রকল্পের আওতায় এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবে ডিটিসিএ। প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা। ৩৯১টি বাস কেনা, ইলেকট্রনিক ভাড়া নিয়ন্ত্রণ ও পৃথক করিডর উন্নয়ন বাবদ এই ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মাধ্যমে প্রকল্পের আওতায় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), বিশ্বব্যাংক ও ফ্রান্স উন্নয়ন সংস্থার (এএফডি) কাছে ঋণ চাওয়া হয়েছে।

ডিটিসিএ’র পরিবহন প্রকৌশলী (উপ-সচিব) নাসির উদ্দিন তরফদার বাংলানিউজকে বলেন, ‘নগরবাসীকে আধুনিক বাস সার্ভিস সুবিধা দিতেই ৩৯১টি আর্টিকুলেটেড বাস কেনা হবে। বাসগুলোর জন্য থাকবে ডেডিকেটেড রুট। এই রুটে অন্য বাস চলবে না। প্রতি তিন মিনিট পর পর যাত্রী বাস সার্ভিস পাবেন। কয়েকটি কোম্পানির বাইরে বাসগুলো চলবে না। বাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ২৫ থেকে ২৬ কিলোমিটার। বাসে আরাম দায়ক এসি সেবা পাবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে বিদ্যমান সড়ক এই বাসের জন্য উপযুক্ত না।
যে কারণে আলাদা লেন করা হচ্ছে। ফলে বাসগুলোর সেবা বেশি দিন ভোগ করতে পারবেন নগরবাসী। সকল ধরনেরর উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার ব্যবহারের পক্ষে।’

জুন ২০১৮ থেকে জুন ২০২০ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। ইতোমধ্যেই প্রকল্পের প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে ডিটিসিএ। নানা কারণে প্রকল্পটি নেওয়া হচ্ছে। অগ্রাধিকার বাস সার্ভিস ডিজাইন, টার্মিনালসমূহের উন্নয়ন করাও প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য। রোববার (২৪ জুন) প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করেছে পরিকল্পনা কমিশন।

জানা গেছে, বাংলাদেশের সড়কে আর্টিকুলেটেড বাস চলার জন্য উপযুক্ত না। এর আগে ২০১২ সালে ৫০টি আর্টিকুলেটেড বাস কেনে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি)। তবে বৃহৎ আকৃতির কারণে এগুলো পরিচালনায় নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে সংস্থাটি। ট্রিপ কম হওয়ায় এসব বাস থেকে আয়ও হচ্ছে অনেক কম। অথচ রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় করতে হচ্ছে প্রচুর অর্থ। বেশ কয়েকটি বাস এরই মধ্যে বিকলও হয়ে পড়েছে। যে কারণে ডিটিসিএ-এর প্রস্তাব গুরুত্বসহকারে পর্যবেক্ষণ করছে পরিকল্পনা কমিশন।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের এক ঊর্ধতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ‘আজকে (রোববার ২৪ জুন) প্রকল্পটি নিয়ে সভা করেছি। এর আগে ৫০টি আর্টিকুলেটেড বাস কেনা হয়। কিন্তু এটা লোকসানি প্রকল্পে পরিণত হয়েছে। ৩৯১টি বাস কিনে যাতে করে একই সমস্যার পুনরাবৃত্তি না হয়। সেই জন্য প্রকল্পটি মূল্যায়নে ধীরে চলো নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। আমরা সার্বিক বিষয় দেখেই প্রকল্পটি অনুমোদন দেবো।’

পরিবহন সমস্যা নগবাসীর দৈনন্দিন সমস্যা। রাজধানী থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যাচ্ছে যাত্রীবাহী বাস। কিন্তু যাত্রীর তুলনায় এসব পরিবহনের সংখ্যা কম হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। প্রতিদিনই চোখে পড়ে যাত্রীদের দীর্ঘ সারি। পরিবহন স্বল্পতার কারণে বাসে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে যাতায়াতে দেখা যায় যাত্রীদের। একই সঙ্গে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাসে ঝুলে যান অনেকে।

এতে করে সব থেকে বেশি বিপাকে পড়তে হয় নারীদের। তারা যাতে করে ঝঁকিমুক্তভাবে নগরীতে যাতায়াত করতে পারেন এবং যাত্রী ভোগান্তি না হয় এজন্য একশ আর্টিকুলেটেড বাস কেনার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থা (বিআরটিসি)। তবে ডেডিকেটেড রুটের অভাবে ২০১৭ সালে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেছিলো বিআরটিসি। এখন প্রকল্পের আওতায় আর্টিকুলেটেড বাস সংগ্রহসহ ডেডিকেটেড রুটও নির্মাণ করা হচ্ছে।
বাংলানিউজ