বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
ঢাকা: কর ফাঁকির অভিযোগে মোবাইল ফোন অপারেটর রবি’র ব্যাংক হিসাব জব্দ রাখার নির্দেশ দিয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আইনি লড়াইয়ে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল অপারেটরটি। তবে অভিযোগ থেকে রেহাই মেলেনি। পাওনা অর্থ ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আইনি লড়াইয়ে হেরে আদালতের নির্দেশ মানতে বাধ্য হচ্ছে অপারেটরটি।
এখন ব্যাংক হিসাব সচল রাখতে এনবিআরের সঙ্গে সমঝোতায় আসছে রবি। পাওনাগুলো পরিশোধের অঙ্গীকারে ব্যাংক হিসাব খুলে দিতে বলেছে এনবিআর।
১৮ কোটি ৭২ লাখ ৮৮ হাজার ৩২ টাকা নির্ধারিত সময়ে সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি এনবিআর এক চিঠিতে সব ব্যাংকে রবির অ্যাকাউন্ট জব্দ করতে চিঠি পাঠায়।
এনবিআরের চিঠিতে বলা হয়েছিল, গত ৭ ফেব্রুয়ারি একজন অতিরিক্ত কমিশনারের নেতৃত্বে তাদের একটি প্রতিনিধি দল রবি’র করপোরেট অফিস পরিদর্শন করে। সে সময় ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কোম্পানির সবশেষ আর্থিক বিবরণী এবং সিম বিক্রির কাগজপত্র সংগ্রহ করা হয়।
কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, রবি অপরিশোধিত সম্পূরক শুল্ক, স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার ওপর প্রযোজ্য অপরিশোধিত ভ্যাট, কম প্রদর্শিত সিমের ওপর প্রযোজ্য অপরিশোধিত সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট এবং বিটিসিএল-কে প্রদত্ত সেবার ওপর প্রযোজ্য অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ মোট ১৮ কোটি ৭২ লাখ ৮৮ হাজার ৩২ টাকা নির্ধারিত সময়ে সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে কর ফাঁকি দিয়েছে।
এর পরপরই আদালতের শরণাপন্ন হয় অপারেটরটি। ২৭ ফেব্রুয়ারি এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যায় রবি। পরবর্তীতে আপিল বিভাগও এনবিআরের দাবিই বহাল রাখেন। ফলে আইনি লড়াইয়ে হেরে ফাঁকির অর্থ পরিশোধের দিকে যাচ্ছে রবি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) জানায়, রবি কর ফাঁকির অর্থ পরিশোধের অঙ্গীকার করেছে। ফলে ব্যাংক হিসাব খুলে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) কর কমিশনার মতিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, অনেক পাওনার মধ্যে
প্রাথমিকভাবে ১৮ কোটির বেশি অর্থ পাওনা আদায়ের চিঠি দেওয়া হয়েছিল। আরো কেইস আছে।
রবির এই কর ফাঁকির অভিযোগ এটাই নতুন নয়। গত ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে এনবিআর প্রায় ৯২৫ কোটি টাকা কর ফাঁকির অভিযোগে পাঁচটি চিঠি পাঠিয়েছিল।
ওই সব চিঠি থেকে জানা যায়, ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে রবি এসএপি সফটওয়্যার খাতে ৫৫৩ কোটি ৬১ লাখ ১২ হাজার ৫২৮.২০ টাকার ভ্যাট এবং ১৫৮ কোটি ২০ লাখ ৯৯ হাজার ৩৮৮.৮৪ টাকার উৎসে কর কম পরিশোধ করে ফাঁকি দিয়েছে।
ওই একই সময়ে রবি বিধি বহির্ভূতভাবে ১১৬ কোটি ৪০ লাখ ৫১ হাজার ৬২.২৫ টাকা ভ্যাট রেয়াত দেখিয়েছে।
এক অপারেটর থেকে অন্য অপারেটরে কল বা ইন্টারকানেকশনে ২০১২ সালে ১ কোটি ৬৫ লাখ ১৫ হাজার ৮০২.০৩ টাকার ভ্যাট পরিশোধ না করে ফাঁকি দিয়েছে। ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ৩ কোটি ৫৭ লাখ ৬ হাজার ৩৪৮.৬৭ পয়সার ভ্যাট পরিশোধ না করে ফাঁকি দিয়েছে বলেও চিঠিতে জানানো হয়েছিল।
এছাড়া রবি ও এয়ারটেল একীভূত হওয়ার ক্ষেত্রে ১০০ কোটি টাকা ফি এবং এয়ারটেলের নামে বরাদ্দ করা টু-জি তরঙ্গের নবায়ন ফি মিলিয়ে ৫০৭ কোটি টাকার উপর ভ্যাট বাবদ এনবিআরের পাওনা ৯১ কোটি ৫ লাখ টাকাও রবি পরিশোধ করেনি।
এসব মিলিয়ে রবি মোট ৯২৪ কোটি ৪৯ লাখ ৮৫
হাজার ১২৯ টাকা ৯৯ পয়সার কর ফাঁকি দিয়েছে বলে দাবি করেছিল এনবিআর।
তবে রবির পক্ষ থেকে এসব দাবি অগ্রাহ্য করে আসা হচ্ছিলো।
কর কমিশনার মতিউর রহমান বলেন, রবির কাছে এর বাইরেও যে সব টাকা বাকি রয়েছে সেগুলো আদায়ে জোর পদক্ষেপ নেবে এনবিআর। তিনি আরো বলেন, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বকেয়া অর্থ না দিলে আবারো শক্ত অবস্থান নেওয়া হবে।
বাংলানিউজ