শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > যে কারণে শীর্ষ ব্যবসায়ীরা নেই সেরা করদাতার তালিকায়

যে কারণে শীর্ষ ব্যবসায়ীরা নেই সেরা করদাতার তালিকায়

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
বেসরকারি খাতে শীর্ষ শিল্প-উদ্যোক্তারা দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখলেও সেরা করদাতার তালিকায় তাদের অনেকেরই নাম নেই। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবি আর) ২০১৫-১৬ করবর্ষের সেরা করদাতার যে তালিকা তৈরি করেছে, তাতে হাকীমপুরী জর্দা কোম্পানির স্বত্বাধিকারী কাউছ মিয়া রয়েছেন শীর্ষে। এছাড়া শীর্ষ দশ কর দাতার বাকি নয় জনের মধ্যেও আলোচিত-প্রভাবশালী কোনও শিল্প উদ্যোক্তার নাম নেই। শিল্প উদ্যোক্তিদের মতে, ৩ কারণে শীর্ষ ব্যবসায়ীদের নাম সেরা করদাতার তালিকায় নেই। তাদের মতে, কারণগুলো হলো, কর ফাঁকির প্রবণতা, উচ্চ সুদে ব্যাংক ঋণ ও একাধিক প্রতিষ্ঠানের লাখ-লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী বেতন-ভাতা পরিশোধ।

এনবি আরের তথ্য মতে, অনেক শিল্প উদ্যোক্তার মধ্যে করফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। ধনীরাই বেশি কর ফাঁকি দেন, এটা সর্বজনীন সমস্যা। ফলে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লাভ বেশি হলেও ব্যাংকের টাকা শোধ দিতে গিয়ে কাখিত কর দিতে পারছে না। তবে ইচ্ছে করেও অনেকে কর ফাঁকি দিচ্ছেন।

শীর্ষ ব্যবসায়ীদের মতে, অনেক শিল্প উদ্যোক্তা তাদের কোম্পানির লাখ-লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা দিতে গিয়ে সেরা করদাতার তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। তারা মূলত প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কর পরিশোধ করেন। এর ফলে তাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তির পরিমাণ কম থাকে। এ কারণে ব্যক্তিগত খাত থেকে তারা বেশি কর দিতে পারেন না। একসঙ্গে অনেক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে গিয়ে কাক্সিক্ষত হারে কর দিতে পারেন না।

শিল্প উদ্যোক্তাদের মতে, উচ্চ সুদে ব্যাংকঋণ নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো করলেও অনেকে কাক্সিক্ষত হারে কর দিতে পারেন না। এছাড়া বিগত কয়েক বছরের রাজনৈতিক সংকটসহ নানা কারণে ব্যবসার খরচ বেড়ে যাওয়ায় কর দিতে পারেন না অনেকে।

শীর্ষ ব্যবসায়ীদের নাম সেরা করদাতার তালিকায় না থাকা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ-এর সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘দেশের বড় শিল্প উদ্যোক্তাদের নাম সেরা করদাতার তালিকায় না থাকলেও দেশের অর্থনীতিতে তারা ব্যাপক অবদান রাখছেন।’ তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠিত উদ্যেক্তারা সেরা করদাতা না হলেও দেশের লাখ লাখ করদাতা তৈরিতে সহায়তা করছেন। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখছেন। অনেক উদ্যোক্তা আছেন, যারা দেশের লাখ-লাখ বেকারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। আর এই সব প্রতিষ্ঠিত উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠানে যারা চাকরি করছেন, তারাও পৃথকভাবে সরকারকে কর দিচ্ছেন।’ তিনি মনে করেন, ‘শিল্প উদ্যোক্তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাড়ার কারণে সরকারের সার্বিক কর আদায় বেড়েছে।’

প্রসঙ্গত, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবি আর) প্রথমবারের মতো শীর্ষ ১০ করদাতার তালিকা প্রকাশ করেছে। ২০১৫-১৬ করবর্ষের সেরা করদাতার তালিকায় নাম রয়েছে হাকিমপুরী জর্দা কোম্পানির স্বত্বাধিকারী কাউছ মিয়ার। শীর্ষ করদাতাদের ১০ জনের মধ্যে ৬ জনই একই পরিবারের। তারা সবাই ওষুধ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। এই পরিবার ড্রাগ ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী। সেরা করদাতার তালিকার দ্বিতীয় থেকে সপ্তম স্থান দখল করে আছেন এই পরিবারের সদস্যরা। তারা হলেন মিসেস খাজা তাজমহল, মিসেস রুবাইয়াৎ ফারজানা হোসেন, মিসেস লায়লা হোসেন, মিসেস হোসনে আরা হোসেন, এম এ হায়দার হোসেন ও মোহাম্মদ ইউসুফ। সেরা করদাতার তালিকায় অষ্টম হয়েছেন সার ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত কামরুল আশরাফ খান। নবম সেরা করদাতা হয়েছেন গাজী গ্রুপের পরিচালক গোলাম দস্তগীর গাজী। দশম স্থানে রয়েছেন ওষুধ শিল্পের স্থপতি ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের মালিক আবদুল মুক্তাদির।

সেরা করদাতার এই তালিকায় দেশের আলোচিত বড় বড় শিল্প উদ্যোক্তার নাম না থাকার কারণ প্রসঙ্গে হাকীমপুরী জর্দা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক হাজী মো. কাউছ মিয়া বলেন, ‘আলোচিত ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছেন। তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লাভ বেশি হলেও ব্যাংকের টাকা শোধ দিতে গিয়ে কাক্সিক্ষত কর দিতে পারছেন না। তবে ইচ্ছে করেও অনেকে কর ফাঁকি দিচ্ছেন। যারা লাভের টাকা বিদেশে নিয়ে যান, তারাই কর ফাঁকি দেন বেশি।’

এ প্রসঙ্গে বিকেএমইএ-এর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, ‘সেরা করদাতার তালিকায় আলোচিত ব্যবসায়ীদের নাম না থাকলেও দেশের অর্থনীতিতে তাদের অবদান সবচেয়ে বেশি। এমন অনেক উদ্যোক্তা আছেন, যিনি শতাধিক প্রতিষ্ঠানের মালিক। এই সব প্রতিষ্ঠান দেশের রফতানি খাতকে চাঙ্গা করে রেখেছে।’ তিনি বলেন, ‘উদ্যোক্তাদের কারও কারও মধ্যে কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা থাকলেও ব্যবসায়ীরা কর ফাঁকি দেওয়ার পক্ষে নন। ব্যবসা ভালো হলে সবাই কর দিতে চান। এই কারণে ব্যবসার সুষ্ঠু পরিবেশ দরকার।’ তিনি মনে করেন, ‘এখনও ব্যাংক ঋণে উচ্চ সুদ দিতে হয় ব্যবসায়ীদের। যারা ব্যাংকের টাকা নিয়ে ব্যবসা করছেন, তাদের পক্ষে সেরা করদাতা হওয়া আসলেই কঠিন ব্যাপার।’

এ প্রসঙ্গে এনবি আর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, ‘ধনীরাই বেশি কর ফাঁকি দেন, এটা সর্বজনীন সমস্যা। বিদেশেও ধনীরাই কর ফাঁকি দেন। বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ (আইএমএফ) একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থার বিভিন্ন গবেষণায় উঠে আসে ধনীদের কর ফাঁকি দেওয়ার তথ্য।’ তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের সব ধনীদের বিবেকের কাছে আবেদন করছি, তারা যেন নিয়মিত কর দেন, তারা যেন নাগরিক দায়িত্ব পালন করেন।’

এদিকে কর ফাঁকি বন্ধ করতে এনবি আরকে আরও কৌশলী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. আব্দুর রাজ্জাক। গত সোমবার (০৭ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবি আরের নিজস্ব ভবনে আয়কর মেলা উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর সব স্থানে কর ফাঁকির দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। দেশে যারা কর ফাঁকি দিচ্ছেন, তাদের কিভাবে করের আওতায় আনা যায় এনবি আরকে সে বিষয়ে কৌশল বের করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘করের আওতা ও আয়করদাতা বাড়াতে রাজধানীতে কর জরিপ করতে হবে। কী পরিমাণ মানুষ আয়কর দিতে সক্ষম, কতজন আয়কর দিচ্ছেন এজন্য জরিপ হওয়া দরকার। এতে কারা কর ফাঁকি দিচ্ছেন, তা বের করা সম্ভব হবে। বাংলাট্রিবিউন