শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > যেসব আইন আসছে …

যেসব আইন আসছে …

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: সাক্ষ্য আইন, মানসিক স্বাস্থ্য, চিকিৎসা সেবা, খাদ্য অধিকার ও শিশুর বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধসহ বেশ কয়েকটি নতুন আইন তৈরি ও পুরোনো আইনকে যুগোপযোগী করার কাজ হাতে নিয়েছে আইন কমিশন।

২০১৫ সালের আইন কমিশনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এসব আইন তৈরি ও সংশোধন করা হবে বলে কমিশন সূত্র জানিয়েছে।

এসব নতুন আইনের উপকারিতা ও বিভিন্ন দিক সম্পর্কে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক।

সাক্ষ্য আইন
সাক্ষ্য আইন সম্পর্কে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক বলেন, আমরা একটা বড় কাজ হাতে নিয়েছি। সেটা হল, ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনকে নতুন আঙ্গিকে করা হবে। এটা অনেক কঠিন কাজ, কাজটা করে উঠতে পারলে সবার জন্য উপকার হবে।

এ আইনের উপকারিতা সম্পর্কে তিনি বলেন, বর্তমান সাক্ষ্য আইনে অনেক সমস্যা হচ্ছে। বিদেশে যেমন স্কাইপি, ডকুমেন্টারি এভিডেন্স, গেজেট ও অডিও-ভিডিওর মাধ্যমে সাক্ষ্য নেওয়া যায়। কিন্তু সেই সব বিষয় বর্তমান আইনে নেই। বিশেষ করে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এই আইনকে যুগোপযোগী করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

বিচারপতি খায়রুল হক বলেন, এক’শ থেকে সোয়া’শ বছর পার হওয়ার পর একটি আইনকে যুগোপযোগী করতে হয়। ভারত ও ইংল্যান্ডও সাক্ষ্য আইনকে পরিবর্তন করেছে।

আমাদের আধুনিক ডিভাইস ব্যবহার ছাড়াও সুপ্রিম কোর্ট থেকে দেওয়া বিভিন্ন সময়ের নির্দেশনা অনুসারে এ সাক্ষ্য আইনকে পরিবর্তন করার কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে এ আইনটি বাংলায় করা হবে জানিয়ে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, এর ফলে জনসাধারণ, আইনজীবী ও বিচারকদের জন্য অনেক সুবিধা হবে।

মানসিক স্বাস্থ্য আইন
এ আইন নিয়ে বিচারপতি খায়রুল হক বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য আইন নতুন আঙ্গিকে করার কাজ চলছে, যা ‘লুনাসি অ্যাক্ট-১৯১২’ কে রিপ্লেস করবে। মানসিক স্বাস্থ্য আইন নিয়ে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি।

এ আইনের খসড়া তৈরি হয়ে গেছে বলেও জানান তিনি।

খায়রুল হক বলেন, ১০০ বছরের পুরোনো লুনাসি অ্যাক্ট দিয়ে এখন আর চালানো সম্ভব না। এর জন্য প্রয়োজনীয় ভাবধারা সংযোজন ও নতুন আঙ্গিকে করতে হবে। বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও চিকিৎসকদের চেম্বারে মানসিক রোগীদের চিকিৎসা হচ্ছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে সমস্যাও হচ্ছে।

আইন কমিশনের চেয়ারম্যান আরো বলেন, অনেক সময় দেখা যায় যে, কেউ মানসিক রোগী না, তারপরও তাকে মানসিক হাসপাতাল বা পাগলা গারদে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কে মানসিক রোগী, আর কে মানসিক রোগী না, সে বিষয়টি নির্ধারণের ক্ষেত্রে এ আইনটি নতুন করে প্রয়োজন হবে।

সাবেক এই প্রধান বিচারপতি বলেন, লুনাসি অ্যাক্ট অনুসারে জেলা জজ এ ধরনের মানসিক রোগীদেরকে পাঠিয়ে দেন কারাগারে। অন্যান্য অপরাধীদের সঙ্গে তাদের থাকতে হয়। যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হয় না।

তিনি জানান, এজন্য মানসিক রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা কেমন হবে, চিকিৎসকরা রোগীদের সঙ্গে কি ধরনের এপ্রোচ করবেন, বিশেষ করে মানসিক রোগীদের অধিকার বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এ আইনে আনা হবে।

চিকিৎসা মানোন্নয়ন ও এতদসংক্রান্ত অবহেলা আইন
আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি খায়রুল হক জানান, একেবারে নতুন করে এ আইনের কাজ চলছে। এ আইনটি নিয়ে ইতোমধ্যে ৫০ শতাংশ কাজও শেষ হয়েছে।

ভুল চিকিৎসার কারণে কারো ক্ষতি হলে এর জন্য দায়ী চিকিৎসক, হাসপাতাল বোর্ডসহ সংশ্লিষ্টদেরকে এ আইনের আওতায় আনার বিষয়টি থাকবে বলেও জানান তিনি।

বিচারপতি খায়রুল হক বলেন, চিকিৎসকদের জন্য ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থা করা, যাতে করে তারা নির্ভয়ে চিকিৎসার কাজ করতে পারেন। এ আইনটি করতে আমরা দেশের সিনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছি। তাদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। এ আইন করার মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা একটি নিয়ম-নীতির মধ্যে আসবে।

খাদ্য অধিকার আইন
এ বি এম খায়রুল হক বলেন, মানুষের জন্য খাদ্যের অধিকার আইনে থাকতে হবে। নতুন এ আইনে বিশেষ করে শিশুদের খাদ্য অধিকার নিয়ে আমাদের চিন্তা-ভাবনা আছে। যারা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল, তাদের জন্য সরকার খাদ্যের ব্যবস্থা না করলেও অস্বচ্ছল পরিবারের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থার বিষয়টি এ আইনে রাখার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবারের অধিকার দেওয়ার বিষয়টি এ আইনে রাখা হবে। কারণ, আমাদের গ্রাম অঞ্চলের অন্তঃসত্ত্বা মায়েরা পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার পান না। সবার না হোক, যারা দরিদ্র তাদেরকে যেন সরকার পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করে তা এ আইনে রাখা হবে।

এছাড়া মা ও নবজাতকসহ রোগীদের ওধুষ, পুষ্টিকর খাবার, নবজাতকের খাবার ইত্যাদির ব্যবস্থার বিষয়টি এ আইনে থাকবে বলে জানান তিনি।

শিশুর বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধ (অপরাধ) আইন
এ আইন সম্পর্কে বিচারপতি খায়রুল হক বলেন, এ ধরনের আইন ইংল্যান্ডে হয়েছে। ভারতেও এমন একটা আইন রয়েছে। আমাদের দেশে শিশু আইন নামে একটি আইন আছে। কিন্তু শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধ নিয়ে কোনো আইন নেই।

তিনি বলেন, বিভিন্ন পত্রিকা ও টেলিভিশনের প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে মারাত্মকভাবে শিশুদের অপব্যবহার করা হচ্ছে। ছেলে ও মেয়ে উভয় শিশুরাই এর শিকার হচ্ছে। এ কারণে আমরা মনে করি, শিশুরা কিভাবে অপব্যহারের শিকার হয় আগে তা নির্ধারণ করা দরকার।

দেশে শিশুরা কি পরিমাণ অপব্যবহার হচ্ছে এর কোনো সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইন করার আগে আমাদের দেশে শিশুরা কতোটুকু অপব্যবহার হচ্ছে তার জন্য মাঠ পর্যায়ে একটি স্টাডি করা হবে। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম