শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের মাঝে ভিশন ২০২১’র স্বপ্ন ছড়ালেন প্রধানমন্ত্রী

যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের মাঝে ভিশন ২০২১’র স্বপ্ন ছড়ালেন প্রধানমন্ত্রী

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী নেতাদের প্রতি বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করার যে স্বপ্ন তা যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী নেতাদের সামনে তুলে ধরলেন প্রধানমন্ত্রী।

যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজনেস কাউন্সিল ফর ইন্টারন্যাশনাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং (বিসিআইইউ)’র পক্ষ থেকে দেওয়া মধ্যাহ্ন ভোজসভায় বক্তব্য রাখছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

হোটেল গ্র্যান্ড হায়াতের ইম্পেরিয়াল হলে এই ভোজসভায় ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবছর যখনই আসি আপনাদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগটি নিতে চাই। এর অন্যতম কারণই হচ্ছে বাংলাদেশে ভিশন ২০২১ এর আওতায় যে অর্থনৈতিক পরিবর্তনগুলো আনা হচ্ছে তা আপনাদের জানানো।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কিছু সাধারণ মূল্যবোধ ও পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্টতায় প্রোথিত। আর সেই মূল্যবোধগুলো হচ্ছে শান্তি, গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িকতা। এর পাশাপাশি রয়েছে মানুষের বাক-স্বাধীনতা, স্বাধীন গণমাধ্যম, ধর্মীয় সহনশীলতা আর নারীর ক্ষমতায়ন, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, এছাড়াও দুই দেশই সন্ত্রাসবাদের সমূল উৎপাটন চায়, দূরে সরিয়ে দিতে চায় মৌলবাদ ও চরমপন্থাকে।

বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের আগ্রহের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে প্রথম দফায় তিনি ক্ষমতা নেওয়ার সময় বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ ছিলো। ২০০১ সালে ক্ষমতা ছাড়ার সময় তা দাঁড়িয়েছিলো ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে। এর কারণ উল্লেখ করতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এইএস’এর মতো প্রতিষ্ঠানকে আমরা বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিনিয়োগে অগ্রাধিকার দিয়েছি। হরিপুর ও মেঘনাঘাট বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করে এই কোম্পানি ধীরে ধীরে তাদের বিনিয়োগ বহুগুনে বাড়িয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তবে দুঃখজনক হচ্ছে, ২০০৯ সালে তার সরকার যখন ফের ক্ষমতায় ফেরে তখন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ ৪০ মিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।

আবারও বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে সরকার গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ বাড়ানোর সকল সম্ভাব্য দিকগুলো নিয়ে কাজ করে, বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন ২০১১ সালের মধ্যে বিনিয়োগ ১১৭.১৪ ডলারে উন্নীত করা হয়। আর ২০০৯ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র মোট বিনিয়োগ করে ৩৩১.৩৫ মিলিয়ন ডলার।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৪ সালের সবশেষ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সরাসরি বিনিয়োগে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। তবে গোটা বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের যে বিনিয়োগ তার তুলনায় বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগ অনেক কম, বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আগামী তিন বছরের মধ্যে এই বিনিয়োগের হিসাব বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে এটাই প্রত্যাশা।

মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্র সীমানা বিরোধ মিমাংশার পর বাংলাদে সমুদ্রে যে অগাধ জলরাশির অধিকার পেয়েছে সেখানে সমুদ্র তলদেশে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদের প্রাচুর্য রয়েছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী। এই সম্পদ আহোরনে বিনিয়োগ প্রয়োজন। আর এ কাজেও অন্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রেরও দুটি কোম্পানি কাজ পেয়েছে, জানান শেখ হাসিনা।

২০১৪ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের, বিশেষ করে তৈরি পোশাকের প্রধান গন্তব্য। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বন্দরগুলোতে বাংলাদেশ ৮ থেকে ২২ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী জানান, গত বছর বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৫ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে, যার বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কাছ থেকে ৮৩২ মিলিয়ন ডলারের শুল্ক পেয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে বন্দরগুলো শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা পেলে এখানকার খুচরা বিক্রেতাদের অনেক অর্থ বেঁচে যেতো। আর তাতে আমাদের দেশে যে শ্রমিকরা এই পোশাক তৈরি করছে তাদের মজুরি ও সুবিধা বাড়ানো সম্ভব হতো।

বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতে আরও বিনিয়োগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এতে ৪০ লাখ শ্রমিকের এই শিল্প খাতটি, যার ৯০ শতাংশই নারী কর্মশক্তি, আরও এগিয়ে যেতে পারবে। অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হবে।

দেশে গত এক বছরে শ্রমখাতের সংস্কারগুলো তুলে ধরতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে, স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশ উন্নত করা হয়েছে। তিনি বলেন, গত চার বছর ধরে আমি ব্যক্তিগতভাবে সম্পৃক্ত থেকে শ্রমিকের ন্যুনতম মজুরি বাড়িয়েছি। একজন শিক্ষানবীষের মজুরি ২০০৯ সালে ছিলো ১৬০০ টাকা ২০১৩ সালে তা ৫৩০০ টাকা করা হয়েছে। আইএলও’র নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য নীতি নেওয়া হয়েছে বলেন জানান প্রধানমন্ত্রী।

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কারখানাগুলোর কর্ম-পরিবেশ নিশ্চিত করতে নিয়মিত পরিদর্শনের জন্য তার সরকার এক হাজার পরিদর্শক নিয়োগ দিয়েছে। আইএলও-আইএফসির সহায়তায় উন্নত কর্ম-পরিবেশ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ট্রেড ইউনিয়নে সংখ্যা ১০০টি থেকে ২৩০টিতে উন্নীত করা হয়েছে।

২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্বাক্ষরিত টিকফা চুক্তির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এর মাধ্যমে দুই দেশ প্রথম বারের মতো কৌশলগত সহায়তার যুক্তিতে আবদ্ধ। তিনি বলেন, গত ছয় বছরে বাংলাদেশ সরকার অর্থনীতির ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি এনেছে তার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যায়নের প্রমাণ এই চুক্তি।

বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও বাংলাদেশ ৬ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করছে, গত এক দশকে দারিদ্রের হার ৫৭ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে, মাথাপিছু আয় ৬৫ শতাংশ বেড়েছে, ডাবল ডিজিট থেকে মুদ্রাস্ফিতি আবার ৭.৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হয়ে প্রায় এক কোটি, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি আরও তথ্য দেন এই সময়ে রপ্তানি আয় তিন গুন বাড়িয়ে ১০.৫৩ বিলিয়ন থেকে ৩০.৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হয়েছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমান ৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ১৪.৫ বিলিয়ন ডলার দাঁড়িয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের কোটা ছুয়ে এখন ২২ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে এখন যে ৩৩১ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হচ্ছে তা এই খাতে সম্ভাবনার চেয়ে অনেক কম। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ছাড়াও ইদানিং অন্য কিছু অর্থনৈতিক খাতে বিনিয়োগ শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এরপরেও আমাদের বিনিয়োগ প্রয়োজন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে আমরা বিনিয়োগ নীতিকে অনেক বেশি শিথীল করেছি, রয়েছে অর্থনৈতিক ছাড় ও সুবিধা। এ প্রসঙ্গে সরকারের দেওয়া কর অবকাশ, শুল্কমুক্ত বা স্বল্প শুল্কসুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

সাতটি বিশেষায়িত অর্থনৈতিক জোনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব জোটে প্রাইভেট কোম্পানিগুলো জমি লিজ নিয়ে শ্রমঘন শিল্প স্থাপন করতে পারছে। তিনি বলেন, আমাদের ৮ কোটি যুব কর্মশক্তি রয়েছে যাদের এইসব শিল্পে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। আর উৎপাদিত যে কোনো পণ্যের জন্য রয়েছে ১৬ কোটি মানুষের বিশাল একটি বাজার।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ছাড়াও জাহাজ নির্মাণ, রিসাইক্লিং, রাসয়নিক সার, অটোমোবাইল, হালকা প্রকৌশল, কৃষি-প্রক্রিয়াকরণ, ঔষধশিল্প, সিরামিক, প্ল্যাস্টিক, পাটজাত পণ্য, তথ্য প্রযুক্তি, সমুদ্রসম্পদ আহোরন, পর্যটন, চিকিৎসা উপকরণ, টেলিযোগাযোগসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদের জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, জ্ঞানভিত্তিক উচ্চ-প্রযুক্তির শিল্পেও এখন বাংলাদেশ বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে একটি শিল্পায়িত মধ্য আয়ের একটি ডিজিটাল দেশ হিসেবে গড়ে তোলা। আর ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়া।

তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়েই আমারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়ে তোলার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।

২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

আসুন, বেশি বেশি বিনিয়োগ করুন, নতুন নতুন ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি করুন, অংশীদারীত্ব বাড়ান। আর এভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেক উচ্চতায় চলে যাবে, বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

হোটেল গ্র্যান্ড হায়াতের ইম্পেরিয়াল হলে এই কর্মসূচিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অংশ নেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবদুস সোবহান সিকদার, সিনিয়র সচিব আবুল কালাম আজাদ ও এফবিসিসিআই’র সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম