শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > যাত্রাবাড়ী ফাইওভারের নিচের রাস্তা হঠাৎ বন্ধ, ভোগান্তি চরমে

যাত্রাবাড়ী ফাইওভারের নিচের রাস্তা হঠাৎ বন্ধ, ভোগান্তি চরমে

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যাত্রাবাড়ী ফাইওভার উদ্বোধনের নামে নিচের প্রায় সব রাস্তাই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। উদ্বোধনের এখনো দিনণ ঠিক না হলেও এখনই নিচে রাস্তা বন্ধ করে করে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ চলছে। কিন্তু ফাইওভারের কাজই অনেক বাকি। সেদিকে নজর না দিয়ে সব মনোযোগ এখন সৌন্দর্য বর্ধনের দিকে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী এই ফাইওভারের উদ্বোধন করবেন এ কথা বলে ইচ্ছাকৃতভাবে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে রাস্তাগুলো আগেভাগেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে ফাইওভারের নিচের পিলারের চারপাশ ঘিরে বাউন্ডারি বানানো হচ্ছে। যা এখন না করলেও চলতো। এই পিলারগুলো ঘিরে ফেলার কারণে ভেতর দিয়ে যে যানবাহন চলতো তা এখন বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে একদিকের একটি লেন ধরে যানবাহন বের হচ্ছে আর অপরদিকের একটি লেন দিয়ে যানবাহন রাজধানীতে ঢুকছে। কিন্তু প্রতিদিন যে পরিমাণ যানবাহন যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদ এলাকা দিয়ে যাতায়াত করে-তা কোনভাবেই এক লেন দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তারা। এই পরিস্থিতিতে নিত্যদিন চরম যানজট সেখানে লেগেই আছে। শত চেষ্টা করেও পুলিশ কর্মকর্তারা যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না।

পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের (পূর্ব) উপ-কমিশনার ইকবাল হোসেন জানান, ট্রাফিক বিভাগের প থেকে ওই এলাকার যানজট পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু এখন যে রাস্তা আছে তা যানবাহনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। ফলে যাত্রবাড়ীতে প্রতিদিন বিশাল যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে বলে স্বীকার করেন তিনি।

গত বুধবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন বিভাগের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান স্বারিত এক বিজ্ঞপ্তিতে যানজটের কথা স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। পাশাপাশি অপ্রতুল রাস্তার কথা উল্লেখ করে নগরবাসীর আন্তরিক সহযোগিতাও চাওয়া হয়েছে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে— ‘মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফাইওভার শীঘ্রই যান চলাচলের জন্য শুভ উদ্বোধন করা হবে।

এ উপলে ফাইওভার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগ (সিটি কর্পোরেশন, ওরিওন গ্রুপ এবং ড্রেনেজের কাজ চলার জন্য) দ্রুতগতিতে নির্মাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ নির্মাণ কার্যক্রমের কারণে স্বাভাবিক যানবাহন চলাচলের েেত্র রাস্তা অনেক েেত্র সীমিত এবং কিছু অংশে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বর্তমানে যানবাহন চলাচলের জন্য বিদ্যমান যে ব্যবস্থা রয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। উল্লিখিত পরিস্থিতিতে নির্মাণাধীন ও সন্নিহিত এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এই সাময়িক অসুবিধার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ আন্তরিকভাবে দুঃখিত। এ বিষয়ে ট্রাফিক পূর্ব বিভাগ নগরবাসীর আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছে।’

যাত্রাবাড়ী ফাইওভারের প্রকল্প পরিচালক আশিকুর রহমান বলেন, নির্মাণ কাজ চলছে-এতে কিছুটা সমস্যা তো হবেই। কিন্তু উপরের কাজ শেষ না করে নিচের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ আগেই কেন করা হচ্ছে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেভাবে কাজ করলে সুবিধা হয় আমরা সেভাবেই করছি। সামনে কোরবানির ঈদের সময় রাস্তা বন্ধ করে নির্মাণ কাজ করা হলে মানুষের চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মানুষের ভোগান্তি দেখার দায়িত্ব আমার নয়, এটা সরকার ও পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ দেখবে।

নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা সায়েদুল ইসলাম (৪২)। রাজধানীর কাওরান বাজারে একটি বেসরকারি ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি করেন। প্রতিদিন তিনি বাড়ি থেকে অফিস করেন। সকাল ১০টায় ব্যাংকে প্রবেশের জন্য তাকে ভোর সাড়ে ৫টা থেকে ৬টার মধ্যে বাড়ি থেকে ব্যাংকের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হয়। তিনি বলেন, আমার বাড়ি থেকে কাওরান বাজার ব্যাংক পর্যন্ত সব মিলিয়ে ২০ থেকে ২২ কিলোমিটারের বেশি রাস্তা হবে না। কিন্তু এই পথটুকু যেতে আমার সময় লাগে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা। এর মধ্যে অধিকাংশ সময় কাটে যাত্রাবাড়ীতে বাসের মধ্যে বসে।

তিনি বলেন, গত এক সপ্তাহ দুর্ভোগ আরো কয়েকগুণ বেড়েছে। নতুন রাস্তা চালু না করে হঠাত্ করে ফাইওভারের নিচের রাস্তাগুলো বন্ধ করে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ শুরু হয়েছে। কোথাও কোথাও রাস্তা বন্ধ করে একদিক সংস্কারও করা হচ্ছে। ফলে মানুষের যাতায়াত ওই এলাকা দিয়ে একেবারে বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এই ব্যাংক কর্মকর্তার মতে, খুবই অপরিকল্পিতভাবে কাজগুলো করা হচ্ছে। উপরের রাস্তা চালু না করে নিচে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। তাহলে মানুষ চলবে কিভাবে? তার মতে, ফাইওভার চালু করে নিচে সংস্কার বা সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ শুরু করলে মানুষের এত দুর্ভোগ হতো না।

রাজধানীর একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাও যাত্রাবাড়ী এলাকা দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করেন। এই কর্মকর্তার মতে, সরকারকে বেকায়দায় ফেলতেই ফাইওভারের নির্মাণকারীরা ইচ্ছে করে জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলছে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, কোন এলাকায় উপরের গার্ডার বসাতে ৭ মাস লেগেছে, আবার অন্য এলাকায় একই কাজ হয়েছে মাত্র ৩ মাসেরও কম সময়ে। অনেক জায়গায় কাজ শুরুর অনেক আগে থেকেই রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়। ইচ্ছে করে দীর্ঘণ তারা রাস্তা বন্ধ করে রাখছে। প্রতিদিন তিনি ওই এলাকা দিয়ে যাতায়াত করার কারণে এই অসঙ্গতিগুলো তার চোখে পড়েছে। তিনি বলেন, ফাইওভারের যে কাজ এখনো বাকি আছে তা করতে অন্তত এক বছর লাগবে। ফলে এই সময়ের আগে উপর দিয়ে কোন যানবাহন চলতে পারবে না। তাহলে কেন নিচের রাস্তা আগেই বন্ধ করে পিলারের চারপাশ ঘিরে বাউন্ডারি করা হচ্ছে?

স্থানীয়রা বলছেন, ফাইওভারের যে কাজ হচ্ছে তা সঠিক পরিকল্পনা মাফিক করলে অনেক বেশি যানবাহন চলতে পারত। কিন্তু বিচ্ছিন্নভাবে যত্রতত্র মেশিনপত্র রেখে রাস্তা বন্ধ করে রাখা হচ্ছে। কোন তদারকি না থাকায় এমনটি হচ্ছে বলে মনে করছেন তারা। আবার অনেক সময় কাজ শেষ হয়ে গেলেও সেখান থেকে মেশিন সরানো হচ্ছে না। ফলে ওই এলাকা দিয়ে যানবাহনও চলতে পারে না।

এভাবে নিয়মিত চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করা হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন ফাইওভারের নির্মাণকারী কর্তৃপরে আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের বিশ্বাস, সঠিকভাবে কাজ করলে ভোগান্তি অনেক কমানো সম্ভব।