শুক্রবার , ১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ , ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ , ১২ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > জাতীয় > ‘যাকে-তাকে স্টিয়ারিংয়ে বসাচ্ছে বাসমালিকেরা’

‘যাকে-তাকে স্টিয়ারিংয়ে বসাচ্ছে বাসমালিকেরা’

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
দুপুর থেকে জাহাঙ্গীর আলম বারবারই জিজ্ঞেস করছিলেন কখন মেয়েকে বাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন। হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছে, পুলিশের কার্যক্রম শেষ হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হবে ময়নাতদন্তের জন্য। তারপরই লাশ নিতে পারবেন তিনি। এ কথা শুনেই জাহাঙ্গীর বলেন, ‘মেয়েডা আমার আর কতক্ষণ এইভাবে পইড়া থাকব।’ তিনি মেয়ের লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই বাড়ি নিতে চান। বারবারই তিনি বলছিলেন, চালকেরা অদক্ষ, নেশাগ্রস্ত। বাসমালিকেরা যাকে-তাকে স্টিয়ারিংয়ে বসাচ্ছে।

ঢাকা-রাজশাহী পথে ৩০ বছর ধরে দূরপাল্লার বাস চালাচ্ছেন জাহাঙ্গীর আলম। এ আয়েই দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে পড়াচ্ছেন। ঢাকায় থাকলে সকালবেলা ছোট মেয়ে দিয়া খানমকে কলেজে যাওয়ার বাসে উঠিয়ে দেন জাহাঙ্গীর। গতকাল রোববারও মহাখালী থেকে একটি বিআরটিসি বাসে উঠিয়ে দিয়েছিলেন। আর দুপুরের পরপরই সংবাদ পেলেন, বেপরোয়া এক বাসচালক বাসটি উঠিয়ে দিয়েছে তাঁর মেয়ের ওপর। কুর্মিটোলা হাসপাতালে এসে মেয়ের ক্ষতবিক্ষত লাশ পেলেন তিনি।

ঢাকা সেনানিবাসের ভেতরে রমিজউদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট কলেজে পড়ত দিয়া। ওই দুর্ঘটনায় একই কলেজের ছাত্র আবদুল করিম ওরফে রাজীবেরও প্রাণ গেছে। আহত আরও নয়জন। দুর্ঘটনার পর কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিহত দুই শিক্ষার্থীর বন্ধু ও স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। শিক্ষার্থীরা উড়ালসেতুর ঢালে গতিরোধক (স্পিডব্রেকার) তৈরি ও দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বাসচালকের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন।

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন করিমের বড় বোন কুলসুম আক্তার। তিনি বলেন, ছোটবেলায় তাঁদের বাবা মারা গেছেন। মা গ্রামের বাড়িতেই থাকেন। খালাতো ভাইয়ের কাছে থেকে কষ্ট করে লেখাপড়া করছিল করিম। গতকাল সব শেষ হয়ে গেল।

আর বাসচালক জাহাঙ্গীরের আক্ষেপের শেষ নেই। মেয়েকে নিয়ে কত স্বপ্ন ছিল! খেটে খাওয়া জীবনে অপূর্ণ সবকিছু পূরণের স্বপ্ন দেখতেন মেয়েকে ঘিরে। মেয়ে সরকারি বড় কর্মকর্তা হবে, পরিবারের সবকিছু পাল্টে ফেলবে। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল।

কুর্মিটোলা হাসপাতালে যখন জাহাঙ্গীরের সঙ্গে দেখা হলো, শোকাক্রান্ত এই বাবা বারবারই অদক্ষ ও নেশাগ্রস্ত বাসচালকদের কথা তুলছিলেন। তিনি বলেন, এখন রাজনৈতিক বা অন্য প্রভাব খাটিয়ে ঢাকায় একটার পর একটা বাস কোম্পানি তৈরি হচ্ছে। বাসমালিকেরা আত্মীয়-পরিজন যাকে পাচ্ছে, তাকেই স্টিয়ারিংয়ে বসিয়ে দিচ্ছেন। এসব চালকের বেশির ভাগই নেশাগ্রস্ত। কেউ কেউ তো গাড়ি চলন্ত অবস্থায়ও গাঁজা খাচ্ছে। তাদের থামাতে হবে।

দুর্ঘটনা ঘটানো বাসটির চালক অবশ্যই অদক্ষ দাবি করে জাহাঙ্গীর বলেন, তিনি ৩০ বছর ধরে বাস চালাচ্ছেন। পরিস্থিতি বোঝেন। যেখানে উড়ালসেতুর ঢাল বড় রাস্তায় মিশেছে, আবার সামনে বাঁক আছে, আছে স্কুল-কলেজ ও হাসপাতাল, এসব জায়গায় দক্ষ চালকেরা ধীরে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে গাড়ি চালান। কিন্তু দুর্ঘটনাকবলিত বাসটির চালক এ রকম পরিস্থিতিতেও বেপরোয়া ছিলেন, এখানেই তাঁর অদক্ষতার পরিচয়। শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মেরে বাসটি থামাতে হয়েছে তাঁকে। সূত্র:প্রথম আলো